প্রসঙ্গঃ পদ্মায় বালু উত্তোলন ও নদীভাঙ্গন

  মো.জয়নাল আবেদীন

প্রকাশ: ৪ অক্টোবর ২০২২, ১৪:৪৮ |  আপডেট  : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫১

গ্রাামনগর বার্তা অনলাইন প্রত্রিকা পাঠে অবগত হলাম যে, বিক্রমপুরের লৌহজং উপজেলার দক্ষিণ দিকের পদ্মা নদী সংলগ্ন ৩/৪ টি গ্রামের বহু বাড়িঘর রাতারাতি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে কয়েকশত মানুষ সর্বহারার তালিকাভূক্ত হয়েছে। খবরটি পাঠে খুব ব্যথিত হলাম। 

১৯৯৩ সালে পদ্মা অগ্নিমূর্তি ধারণ করে আমার দেখা লৌহজং গ্রাস করে। পত্রিকায় কৃতিনাশার অপকর্মের খবর পড়ে কুমিল্লা থেকে লৌহজং এসেছিলাম স্বচক্ষে পদ্মার তান্ডব দেখতে। আমি যখন লৌহজং পৌছি,  তখন পদ্মা আফসার উদ্দীন বেপারীর বাড়ির দক্ষিণের  পুকুর পাড় গ্রাস করছে। ফুকু বেপারী সে সময় উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের বাড়ির দোতলা ঘরে ১৯৮৫ সালে আমি একরাত কাটিয়ে ছিলাম। বাড়ির ঘর আগেই ভেঙ্গে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। সেবারে আমার শিক্ষক (শ্রীনগর কলেজের ভাইস প্রিন্সিপ্যাল) হারুন অর রশিদ খান ও আত্বীয় আব্দুল হামিদ ফকিরের বাড়ি সহ শতশত পরিবার বাড়িহারা হয়ে অন্যত্র জমি কিনে বসতি গড়েন। আমার স্কুল জীবনে বড় ফুফুর বাড়ি ( কাজীসুরা ,শিবচর) পদ্মা গ্রাস করে। বাবা শ্রীনগর থেকে বড় গস্তিনাও ভাড়া করে ফুফার ২৭ শে বন্ধরের বড় ঘরটি ভেঙ্গে এনে আমাদের বাড়ির পূর্ব ভিটায় তুলে; ফুফুর পরিবারের সাময়িক আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন। শীতের দিনে রসের টানে আমরা এ ফুফুর বাড়ি বেড়াতে যেতাম। বাঘড়া থেকে নৌকায় পদ্মা পাড় হয়ে ফুফুর বাড়ি পৌঁছাতে আমাদের ৩/৪ বার বিশ্রাম নিতে হতো। সর্বশেষ যেবার ফুফুর বাড়ি যাই তখন নদী খুব কাছে চলে এসেছে। রাতে রকেট স্টিমারের সার্চ লাইটের আলোতে বাড়ি দিনের মতো দেখাত। নদী ভাঙন মানুষকে হতদরিদ্র করে দেয়। একটা কথা আছে- বাড়িতে আগুন লাগলে ভিটা থেকে যায়,কিন্তু নদী ভাঙনে ভিটাও থাকেনা।

৩ অক্টোবর ,২০২২ দৈনিক প্রথম আলোর চিঠিপত্র বিভাগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিফাত রাব্বানী পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন বিষয়ে লিখেছেন - পদ্মা সেতু আমাদের গৌরব। সেতুকে ঘিরে সরকার নানামুখী নিরাপত্তার ব্যবস্থা ইতোমধ্যে চালু করেছে।তবু প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে সেতুর জাজিরা প্রান্তে পিলারের কাছেই চলছে অবাধে বালু উত্তোলন।এভাবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করার ফলে আশেপাশের তিন-চারটি গ্রাম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। পদ্মা সেতুকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে প্রশাসনের যেখানে সতর্ক থাকার কথা, সেখানে তাদের অবহেলা দেখতে পাচ্ছি। এর ফলে পদ্মা সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী , জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ সুপার,শরিয়তপুরের দৃস্টি আকর্ষণ করছি।পদ্মা সেতুর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। সেতু ও আশেপাশের এলাকার অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করতে দ্রুত ব্যবস্থা নিন।”

লৌহজং উপজেলার নদী ভাঙ্গনের অন্যতম কারণ ৮০/৯০ টি ড্রেজারের সাহায্যে দিনরাত বালি উত্তোলন করা। এ সব বালু উত্তোলনকারীদের প্রায় সকলে ক্ষমতাসীন দলের নেতা,পাতি নেতা ও কর্মী বলে লোকজন আমাকে জানিয়েছেন। সম্প্রতি লৌহজং উপজেলা নির্বাহী অফিসার কয়কটি ড্রেজার আটক করছেন শুনেছি। তাদের নাম, পিতার নাম, ঠিকানা প্রকাশ করা দরকার। কারণ লোভী মানুষ হলো দানবের চেয়েও খারাপ। বালুখোর এসব দানবেরা বালুবিক্রির বখরা অনেকেরে দেন বলেও একটি সূত্র আমাকে বলেছে। গত১৫ বছরে বিক্রমপুরসহ দেশের সর্বত্র হাজার হাজার ভূমিদস্যু, পুকুর, খাল, বিল, নদী, নালা, জলাশয় ভরাট দস্যু ও বালুখোরের সৃস্টি হয়েছে আদর্শহীন রাজনীতির কারণে। এদের কারণে পরিবেশের বারটা বাজছে। 

তাই মুন্সীগঞ্জ ও মাদারিপুরের মাননীয় সংসদ সদস্যদের প্রতি আমার অনুরোধ দলীয় এসব দানবদের থামান। নদী ভাঙ্ন ও পদ্মা সেতুর নিরাপত্তার দিকে নজর দিন।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত