প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বিভ্রান্তির পাঁয়তারা করছে বিএনপি: কাদের
প্রকাশ: ২০ মে ২০২২, ১৬:৪৬ | আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:৩১
পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্য নিয়ে বিএনপি ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বিভ্রান্তির পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও বিএনপি নেতারা দুরভিসন্ধিমূলকভাবে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারায় লিপ্ত রয়েছেন। বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তথাকথিত “হত্যার হুমকি”র বয়ান তৈরি করছেন তারা।’
শুক্রবার (২০ মে) এক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপি নেতাদের ‘দুরভিসন্ধিমূলক, বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
দলের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা একজন স্বপ্নবান মানুষ। তিনি বাংলার মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে নিরলসভাবে স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বাংলার মানুষ তার মহিমান্বিত নেতৃত্বকে মূল্যায়ন করবে। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি-সমৃদ্ধি নিয়ে জাতির পিতার পর তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা ব্যতীত আর কোনও নেতৃত্বই অগাধ দেশপ্রেমের সঙ্গে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে কোনও সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক দর্শন ও পরিকল্পনা নিয়ে বাংলার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করেননি। বাঙালির ভাগ্যোন্নয়নের সংগ্রামে একমাত্র শেখ হাসিনাই পরিপূর্ণ আত্মনিবেদন করেছেন। এ কথা আজ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত যে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা মানেই এ দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন হওয়া।’
তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর একের পর এক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে চলেছে। শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের একটি অনন্য মাইলফলক হলো নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ। আজকে যারা রাজনৈতিক স্বার্থে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতাকে অস্বীকার করার অপচেষ্টা চালান এবং বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কার পরিণতি দেখতে সুপ্ত বাসনা লালন ও ষড়যন্ত্র করেন; তাদের বলতে চাই, পদ্মা সেতু শুধু একটি সেতু না—এটি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্জিত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার স্মারক।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করার পর থেকেই বিএনপি ও তার দোসররা এর বিরুদ্ধে ক্রমাগত ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় এবং তারা চক্রান্ত করে বিদেশি অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়। এরপরও দেশরত্ন শেখ হাসিনা দেশি অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তখন খালেদা জিয়াসহ একটি চিহ্নিত মহলের মন্তব্যগুলো ছিল কাণ্ডজ্ঞানবিবর্জিত ও দুরভিসন্ধিমূলক। এসব ষড়যন্ত্র ও রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা শুধু সরকার বিরোধিতাই ছিল না; বরং দেশদ্রোহিতার শামিল।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জনকল্যাণমুখী, সৎসাহসী ও দেশপ্রেমিক নেতা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকলে কোনও ষড়যন্ত্রই একটি জাতিকে পিছিয়ে দিতে পারে না। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও পদ্মা সেতু তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সব প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে সফলভাবে পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্য নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও বিএনপি নেতারা দুরভিসন্ধিমূলকভাবে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারায় লিপ্ত রয়েছে। এমনকি বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তথাকথিত “হত্যার হুমকি”র বয়ান তৈরি করছে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, বিরোধী পক্ষকে দমন ও পীড়নের রাজনীতি আওয়ামী লীগ কোনোদিন করেনি; বরং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা স্বৈরাচার জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে বিএনপির হাত ধরেই হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষকে নির্মূল করার অপরাজনীতি শুরু হয়। আর তারই ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ বারবার আক্রমণের শিকার হয়েছে। এখনও চিহ্নিত এই মহলটি ক্রমাগত দেশের স্বার্থ ও জনকল্যাণবিরোধী বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে দেশবিরোধী এই গোষ্ঠীর মুখোশ উন্মোচন ও জনগণকে সতর্ক করতে চেয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ভালো করেই জানা উচিত, শেখ হাসিনা যদি খালেদা জিয়ার মৃত্যুই কামনা করতেন তাহলে উচ্চ আদালত থেকে একাধিকবার জামিন বাতিল হওয়ার পরেও দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে ঘরে রেখে উন্নত ও আধুনিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেন না; বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করার সুযোগ দিতেন না। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ শিষ্টাচারের কথা বলছেন। আমি তাকে বলতে চাই, বঙ্গবন্ধুকন্যাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২১ আগস্টের নারকীয় গ্রেনেড হামলাসহ অসংখ্যবার হত্যাচেষ্টার সময় কোথায় ছিল আপনাদের তথাকথিত শিষ্টাচার? এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে ভাড়াটে সন্ত্রাসী নিয়োগ করে অপহরণ ও প্রাণনাশের অপচেষ্টা পর্যন্ত চালানো হয়েছে। বেগম জিয়াসহ বিএনপি নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন সময়ে গণতন্ত্রের পীঠস্থান জাতীয় সংসদসহ প্রকাশ্য জনসভায় যে ভাষায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মনগড়া মিথ্যাচার ও অশালীন বক্তব্য প্রদান করেছেন, তার নজির পৃথিবীর কোনও সভ্য সমাজে নেই।’
আওয়ামী লীগের এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আপনাদের শিষ্টাচারের ভাষা তো গ্রেনেড, গুলি আর ষড়যন্ত্র। সুতরাং শেখ হাসিনাকে শিষ্টাচার শিখাতে আসবেন না। এ দেশের রাজনীতিতে শিষ্টাচার ও উদারতা যদি কেউ দেখিয়ে থাকেন তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা। দেশবাসী ভালোভাবেই জানে, শেখ হাসিনা প্রতিহিংসার রাজনীতি করেন না। দুর্নীতি-সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ ও স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতার কারণে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পারার ব্যর্থতা বিএনপির এবং তাদের দুর্নীতিবাজ শীর্ষ নেতৃত্বের। সে জন্য আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করা পরাজিত সৈনিকের আত্মপ্রলাপ ছাড়া কিছু নয়।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সততা, সাহসিকতা, নিষ্ঠা এবং বলিষ্ঠ নেতৃত্ব আজ তাকে বিশ্বসভায় এক অনন্য সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে অভিষিক্ত করেছে। গত চার দশকে বাংলাদেশের যা কিছু মহৎ অর্জন তা শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই অর্জিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন-অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির অভিযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে। আগামীতেও এগিয়ে যাবে। কোন প্রকার ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার অগ্রগতির এই গতিধারা থামাতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।’
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত