ঝিমিয়ে পড়েছে শিক্ষা কার্যক্রম

পঞ্চগড়ে শিক্ষিকার একক আধিপত্য, সরকারি টাকায় কেনা-কাটায় নয়ছয়

  মোঃ কামরুল ইসলাম কামু , পঞ্চগড় প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৮ অক্টোবর ২০২৪, ১৭:২৪ |  আপডেট  : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:০৬

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ে একক কর্তৃত্ব স্থাপনের অভিযোগ উঠেছে। সেই সাথে শিক্ষার্থী ও সহকারী শিক্ষকদের সাথে অসদাচরণ নিত্য দিনের চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করতে অভিভাবকদের যেমন অনীহা তৈরি হয়েছে তেমনি শিক্ষকদের কাজের পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। এতে শ্রেণীকক্ষে সুষ্ঠু পাঠদানে ব্যর্থ হচ্ছেন শিক্ষকরা।

অভিযুক্ত শিক্ষিকার নাম হাছনা বেগম। তিনি উপজেলার গজপুরী পশ্চিম গ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করছেন। বাসার পাশে দুই যুগ ধরে একই বিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালন করায় ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।সরেজমিন ওই বিদ্যালয়ে গেলে অভিযোগের সত্যতা মিলে।

স্থানীয়রা জানায়, প্রধান শিক্ষিকার খিটখিটে মেজাজের কারণে শিশুরা বিদ্যালয়ে যেতে চায় না। ৭১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে গড়ে ৩০-৩৫ জন উপস্থিত থাকে। নতুন করেও কেউ সন্তানদের দিতে চাইছেন না এই বিদ্যালয়ে। প্রধান শিক্ষিকা আর্থিক বিষয়েও স্বেচ্ছাচারী। নিয়ম অনুযায়ী পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে স্লিপের বরাদ্দ ব্যয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কথা থাকলেও প্রধান শিক্ষিকা সবই করেন নিজ ইচ্ছেমাফিক। ২০২২-২০২৩ ও ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে কমিটির সদস্য সচিব যথাক্রমে উম্মে কুলছুম ও রাফিয়া খাতুন থাকলেও রেজ্যুলুশনে স্বাক্ষর নেওয়া পর্যন্তই তাদের দায়িত্বসীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে।

সরেজমিন বিদ্যালয়ে গিয়ে স্লিপের অর্থের বিষয়ে জানতে চাইলে হাছনা বেগম বলেন, স্বচ্ছ ভাবেই সব ব্যয় হয়। এই সময় সর্বশেষ স্লিপের অর্থ ব্যয়ের বিল ভাউচার দেখতে চাইলে সেসব বাসায় আছে বলে জানান হাছনা বেগম। অভিযোগ রয়েছে বিদ্যালয়ের সব কেনাকাটা প্রধান শিক্ষিকা তার স্বামী আবুল হাসেমকে দিয়ে করান। যিনি নিজেও খাটুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। সাংবাদিকদের আসার খবর পেয়ে তিনি সে সময় নিজ কর্মস্থল ছেড়ে সেখানে আসেন!

সহকারী শিক্ষিকারা অভিযোগ করেন, বিদ্যালয়ে একটি বাগান ছিল। পরে বাগানটির জায়গায় ওয়াশ ব্লক করা হলে প্রায় ৬০০ ইটও তিনি বাসায় নিয়ে যান। বিদ্যালয় সীমানায় থাকা বাঁশ বাগানের বাঁশও কেটে নেন নিজের প্রয়োজনে। বিদ্যালয়ের পুরনো গ্রিল, দোলনারও হদিস মিলছে না।কিছু হলেই তুইতোকারি করার অভিযোগ করেন উপস্থিত শিক্ষিকারা। সম্প্রতি উম্মে কুলছুম নামে এক শিক্ষিকা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ দেন। ভুট্টার মৌসুমে প্রধান শিক্ষিকা বিদ্যালয়ে না এসে নিজের ভুট্টা শুকানোর তদারকি করতে বাসায় থাকেন বলেও জানান তারা। সহকারী শিক্ষিকাদের সাথে অসদাচরণের বিষয়টি এর আগে মীমাংসা হলেও আচরণে পরিবর্তন আসেনি। সাবেক ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মেহেদুল ইসলাম দুলাল সম্প্রতি শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট এইসব বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন।

তাপসী রানী নামে এক শিক্ষিকা বলেন, আমার আট মাস বয়সী শিশুর অসুস্থতার পরও ছুটি দেওয়া হয়নি আমাকে। বাধ্য হয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা স্যারের নিকট ছুটির আবেদন করি। অন্যান্য শিক্ষকরাও ছুটি চাইলে তিনি এমন করেন।রাফিয়া খাতুন ও রোকসানা আক্তার বলেন, কখন কার সামনে অপদস্ত করবেন এই আশঙ্কায় আমরা বিদ্যালয়ে রীতিমতো ভয়ে থাকি। ওনার খিটখিটে মেজাজ আর অত্যাধিক সন্দেহ প্রবণতার কারণে আমরা সব সময় মানসিক চাপে থাকি। যার প্রভাব পড়ে পাঠদানে। হাছনা বেগম বলেন, এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। নিয়মের মধ্যে রাখার চেষ্টা করি বলে তারা ইচ্ছে করেই আমার বিষয়ে এভাবে বলছেন।উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আজমল হোসেন বলেন, প্রধান শিক্ষক হাসনা বেগম এর বিররুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে পৃথক দুইটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কা/আ 

 

 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত