পঞ্চগড়ে কৃষকের নতুন স্বপ্ন কফি চাষ
প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:৫৮ | আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৪
দেশের উত্তর প্রান্তের শেষ জেলা পঞ্চগড়।এজেলাটিতে বাড়ছে কৃষি উৎপাদন। মৌসুমি ফসলাদির পাশাপাশি এখন অন্য ফসল উৎপাদনে মনযোগী হয়েছে কৃষকরা।
জেলাটিতে চায়ের পাশাপাশি অর্থকরী ফসল হিসেবে নতুন স্বপ্ন জাগাচ্ছে কফি চাষ। গড়ে উঠেছে ছোট বড় অনেক বাগান। গেল দুই বছর আগে সুপারি বাগানে সাথী ফসল হিসেবে রোপন করা কফির চারাগুলোতে এসেছে ফল। অল্প দিনের মধ্যেই শুরু হবে কফি ফল তোলার কাজ। সহজেই ছায়াযুক্ত স্থানে স্বল্প খরচে কফি চাষ করে কয়েকগুন লাভের আশা করছেন চাষীরা। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় কফি থেকে বাড়তি আয় করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তারা। তবে বাজার ও প্রক্রিয়াজাতকরণ নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করছেন কৃষকরা। লাভের মুখ দেখলে কফি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন স্থানীয়রাও। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কৃষকের পাশে রয়েছে কৃষি বিভাগ।
গত রবিবার বিকেলে জেলার সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের বিশমনি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কৃষক আব্দুল হালিম প্রধান কফি গাছ গুলোর পরিচর্যা করছেন। গাছের ডালে থোকায় থোকায় ঝুঁলে আছে কফি ফল। এই ফলগুলোই প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি হবে পান যোগ্য কফি। উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে ২০২১ সালের শেষের দিকে কৃষি বিভাগের কফি ও কাজু বাদাম গবেষনা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় জেলার তিন উপজেলায় রোবাস্টা জাতের কফি চাষ শুরু হয়েছে। জেলার মাটি ও আবহাওয়া কফির জন্য উপযোগী হওয়ায় সুপারি সহ বিভিন্ন বাগানের ছায়াযুক্ত ফাঁকা জায়গায় গড়ে উঠছে কফি বাগান। চাষীদের কফি বীজ, কারিগরী সহায়তা সহ নানা পরামর্শ দেয় কৃষি বিভাগ। চারা রোপনের দুই থেকে আড়াই বছরের পর ফল আসা শুরু হয় গাছগুলোতে। প্রতি বিঘা বাগানে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ করে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার কফি বিক্রির সম্ভাবনা দেখছে চাষীরা। কৃষক হালিমের মত জেলার ৪৭ জন কৃষক ৯১ দশমিক ৮১ হেক্টর জমিতে গড়ে তুলেছেন ৭৪টি কফি বাগান। তবে বাজার ও প্রক্রিয়াজাতকরণ নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করছেন কৃষকেরা।
কফি চাষী আব্দুল হালিম বলেন, একদিন কৃষি বিভাগের লোকজন আমাকে এসে বলেন সুপারী বাগানে কফি চাষের কথা। পরে তারা আমাকে ৩৩ শতক জমির জন্য ১৩৫টি কফির চারা দেন। পরে তাদের পরামর্শে চারাগুলোর যতœ শুরু করি। আলহামদুলিল্লাহ দুই বছরের মধ্যে গাছগুলোতে ফল এসেছে। অনেক গাছে ফুল ফুটেছে। কিছু গাছে ফল পাঁকতে শুরু করেছে। আমি কিছু ফল গাছ থেকে তুলেছি নিজে কফি বানিয়ে খাওয়ার জন্য। আর বাকীগুলো কয়েকদিনের মধ্যে তুলবো। যদি বাজার ভাল পাই আশা করি লাভের মুখ দেখতে পারবো।
কমখরচে অধিক লাভজনক আর বাড়তি কোন জমি না লাগায় কফি চাষ লাভজনক দেখে স্থানীয়রাও আগ্রহী হয়ে উঠছেন পানীয় এ ফসল চাষে।
একই এলাকার স্থানীয় কৃষক মনিরুল ইসলাম বলেন, হালিম ভাইয়ের কফি বাগানে থোকায় থোকায় ঝুলছে ফল। কোথাও কাঁচা আবার কোথাও পাঁকা। ফলগুলো দেখতে আমার খুব ভাল লেগেছে। লাভজনক এ ফল চাষ করতে আমারও ইচ্ছে হচ্ছে। আমিও কৃষি বিভাগের সাথে যোগাযোগ করে কিছু চারা নেবো বাগান করার জন্য।
সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুবুল আলম বলেন, কফি চাষের জন্য ছায়াযুক্ত স্থানের প্রয়োজন। যেখানে ছায়া থাকে সেখানেই কফি ভাল হয়। বাড়তি কোন জমির ও তেমন কোন পরিচর্যার প্রয়োজন হয়না। শুধুমাত্র আগাছানশক স্প্রে এবং ছত্রাক নাশক স্প্রে করায় এ পানীয় চাষে কৃষকের খরচ কম হয় বলে জানালেন এই ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা।
পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) শাহ্ আলম মিয়া বলেন, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পাশে থেকে চারা, কীটনাশক, কারিগরি প্রশিক্ষণ সহ সব ধরনের পরামর্শ দিচ্ছে। কফির বাজার ব্যবস্থাপনা ও ফল সংরক্ষণ বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়।পাশাপাশি আবহাওয়া কফি চাষে অনুকূল হওয়ায় কৃষকেরা লাভের মুখ দেখতে পারবেন বলে আশা করছেন পঞ্চগড়ে কর্মরত এই কৃষি কর্মকর্তা ।
ই
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত