ঠিকাদারের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর লুটপাটের অভিযোগ
নদের বালু দিয়েই বাঁধ নির্মাণ

প্রকাশ: ৪ মার্চ ২০২৫, ১১:১৩ | আপডেট : ৫ মার্চ ২০২৫, ২৩:৪১

যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের ছয় কোটি টাকার প্রকল্পের কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। জেলার চৌগাছা উপজেলার কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও ভাঙন রোধে ড্রেজার দিয়ে নদের বালু উত্তোলন করেই চলছে নদের ৫০০ মিটার বাঁধ তৈরির কাজ। এসব অনিয়ম দেখে এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে এমন কিছুই দেখেননি বলে জানিয়েছেন যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। এমনকি কোনো পদক্ষেপও নেননি তারা।
জানা গেছে, চৌগাছার মুক্তারপুর গ্রামের কপোতাক্ষ নদের ৫০০ মিটার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্পের দায়িত্ব পান নাসির উদ্দিন মোল্লা নামের এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের ছয় কোটি ছাব্বিশ লাখ আশি হাজার টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করেন ওই ঠিকাদার। নদী ভাঙন রোধে পাড়ে সিমেন্টের ব্লক বসানোর জন্য নদী থেকেই ড্রেজার দিয়ে উত্তোলন করা হচ্ছে কয়েক হাজার ট্রাক বালু। একাধিকবার এলাকাবাসীর থেকে অভিযোগ জানানোর পরও কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, এভাবে কি জলাবদ্ধতা আর ভাঙন রোধ করা সম্ভব! অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালি উঠিয়ে পাড়ে দিলে কতটুকু উপকার হবে। সামনে বর্ষা মৌসুম এলেই সবই তো ধসে আবার নদের ভেতরই পড়বে। জলাবদ্ধতা দূর করা তো দূরের কথা ঠিকাদার তো আরও নদ গর্ত করে ফেলছে। অনেকবার বাধা দেওয়ার পরও কেউ কিছু বলছে না। কাজ কিভাবে চলছে সেটা দেখতেও কোনো কর্মকর্তা না আসায় ঠিকাদার খেয়াল খুশি মতো কাজ করে যাচ্ছে। নদ থেকে প্রায় তিন-চার হাজার ট্রাক বালু উঠিয়ে পাড়ে দেওয়া হয়েছে। পাড়ে দেওয়ার জন্য ব্লক তৈরির সময় ও অনিয়ম করেছিলেন এই ঠিকাদার। ওই সময়ও পানি উন্নয়ন বোর্ডে অভিযোগ জানিয়েছিল এলাকাবাসী, তবে তখনও কোনো সুরহা পাননি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
মুক্তারপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম বলেন, জনগণের টাকায় এমন কাজ করে লাভ কি? নদী থেকে বালি উঠিয়ে যদি পাড়েই দিতে হয় তাহলে তো কোনো উপকার হলো না। কিছু দিন পর বর্ষা মৌসুম এলেই ভাঙন শুরু হবে। কাজ কেমন চলছে কেউ তো দেখতেও আসে না। আর যারা আসে তাদের কাছে অভিযোগ দিয়েও লাভ হয় না। ৫ আগস্টের পরও ঠিকাদার কিভাবে লুটপাটের সাহস পায় তা আমাদের জানা নেই।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা শামসুর রহমান বলেন, ঠিকাদারের সঙ্গে ওপর মহলের কর্মকর্তাদের নিশ্চয়ই ভালো যোগসাজশ রয়েছে, তা না হলে প্রকাশ্যে এমন অনিয়ম করার সাহস কিভাবে পাচ্ছে তারা। দুর্নীতিবাজ সরকার পতনের পর আবারও দুর্নীতি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
বালু উত্তোলনকারী ও ঠিকাদারের সহযোগী মফিজুর রহমান বলেন, ঠিকাদারের ম্যানেজার বিপুল আমাকে ২টা ড্রেজার ভাড়া করে দিয়েছিল। আমি দিন চুক্তিতে বালি উঠানোর কাজ করেছি। আমকে প্রতিদিন ২৫০০ করে টাকা দেওয়া হতো। দুই হাজার ট্রাক বালি উঠিয়ে ছিলাম তাদের কথায়।
ঠিকাদার শরিফ উদ্দীনের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের বিষয় অস্বীকার করলেও পরে বলেন, কিছু বালু সামনে থেকে উঠালেও বাকি বালু একটু দূর থেকেই তোলা হয়েছে। ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে পাড়ে দেওয়া হলে প্রকল্পে ব্যয়ের অর্থ বৃথা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
এবিষয়ে জানতে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, প্রকল্পের কাজ দেখাশোনার জন্য একজন সর্বক্ষণ দায়িত্বে আছেন। তিনি তো আমাকে কিছু বলেননি। আমিও সেখানে গিয়েছি কিন্তু এমন কিছু দেখতে পাইনি। এমন কিছুই হয়নি সেখানে।
কা/আ
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত