তীব্র গরমে খাদ্যাভ্যাস
প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৫৯ | আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:০০
এই গরমে আমাদের শরীর থেকে প্রচুর ঘাম বের হয়। ঘামের সাথে সাথে নানা রকম অস্বস্তি শুরু হয়। একটুতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ি। চড়া গরমে আমাদের শরীরের মেলাটনিন উৎপাদন কমিয়ে দেয়। মেলাটনিন আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত জরুরি। তার মাত্রা কমে গেলে আমাদের শরীরের ক্লান্তিভাব বেশি হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় তীব্র দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হবার উপক্রম হয়েছে। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে। উষ্ণতম মাস হিসেবে পরিচিত এপ্রিল শেষ হতে এখনও ১০ দিন বাকি। কিন্তু এর মাঝেই তীব্র গরমে মানুষ কাহিল হয়ে পড়েছে। তাই প্রয়োজন খাদ্যাভ্যাসে ছোট পরিবর্তন।
গরমে যা যা খাবেন
- কম মশলা জাতীয় খাবার: মশলা জাতীয় ভারী খাবার খেতে ভালো লাগলেও গরমের সময় কম মশলা জাতীয় খাবারের ওপর জোর দিতে হবে। কারণ এগুলো সহজে হজমযোগ্য।
- আমলকির শরবত: আধা কাপ আমলকির রস একটি গ্লাসে ঢালুন। এক চামচ মধু ও স্বাদ মতো বিট লবণ ভালো করে মিশিয়ে নিন। পরিমাণ মতো পানি মিশিয়ে দিন। খুব সহজেই তৈরি হয়ে যাবে আমলকির শরবত।
- পাতলা স্যুপ: স্যুপকে অনেকে মজা করে রোগীর খাবার বলে থাকেন। কিন্তু গরমের সময় একদম ‘ক্লিয়ার ভেজিটেবল’ স্যুপ (পাতলা করে সবজি স্যুপ) খেলে তা শরীরের জন্য উপকারী।
- শাক-সবজি: বাজারে এখন ঝিঙ্গা, চালকুমড়া, লাউ, চিচিঙ্গা, সজনেডাঁটা, শাকের ডাঁটা ইত্যাদি কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। এগুলোকে যদি পাতলা ঝোল করে রান্না করে খাওয়া হয়, তাহলে এগুলো একদিকে যেমন পুষ্টির চাহিদা জোগাবে, অপরদিকে শরীরে গরম অনুভব করাবে না।
- তরমুজ-অ্যালো ভেরার শরবত: কয়েক টুকরো তরমুজের রসের সঙ্গে কয়েকটি তুলসী পাতা, ২ চামচ অ্যালো ভেরার রস আর কয়েকটা বরফ দিয়ে ভালো করে মিক্সিতে ঘুরিয়ে নিন। এ বার মিশ্রণে সামান্য বিট লবণ, গোলমরিচ আর লেবুর রস দিয়ে দিন। গ্লাসে তরমুজের কুচি আর পুদিনা পাতা দিয়ে ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন করুন তরমুজ-অ্যালো ভেরার শরবত।
- গন্ধরাজ ঘোল: দই, পানি, কিছু পুদিনা পাতা, একটু জিরে গুঁড়া, একটু লাল লঙ্কাগুঁড়ো এবং বিট লবণ দিয়ে মিক্সারে ঘুরিয়ে নিন। এ বার সেই মিশ্রণে গন্ধরাজ লেবুর রস, লেবুর নির্যাস আর কয়েকটি বরফ মিশিয়ে নিন। পরিবেশন করুন গন্ধরাজ ঘোল।
- শিকঞ্জি: পুদিনা পাতা বেটে নিন। তাতে একে একে পাতিলেবুর রস, বিট লবণ, চিনি আর ভাজা জিরে গুঁড়ো মিশিয়ে নিন। এ বার ওপর থেকে সোডা কিংবা ঠান্ডা পানি ঢেলে অল্প নেড়ে বরফ কুচি সহযোগে পরিবেশন করুন শিকঞ্জি।
- তেঁতুলের শরবত: তেঁতুলের খোসা ও বীজ ছাড়িয়ে ক্বাথ বার করে রাখুন। গন্ধরাজ লেবুর রস বের করে নিন। এ বার মিক্সিতে একসঙ্গে তেঁতুলের ক্বাথ, লেবুর রস, বরফের কুচি, পুদিনা পাতা কুচি, লবণ আর ভাজা জিরে গুঁড়ো মিশিয়ে নিন। পরিবেশন করার পাত্রে তেঁতুলের শরবত ঢেলে ওপর থেকে পুদিনা পাতা কুচিয়ে ও বরফ দিয়ে পরিবেশন করুন।
- কাঁচা আমের শরবত: কাঁচা আমের মাঝে ভিটামিন-সি থাকে। কাঁচা আমের সাথে মরিচ যুক্ত না করে যদি এটিকে শরবত হিসেবে খাওয়া যায়, তাহলে গরম কম অনুভব হতে পারে।
- ডিটক্স ওয়াটার: গরমের সময় ভারী খাওয়ার পর ডিটক্স খাবার খাওয়া যেতে পারে। ডিটক্স ওয়াটার হলো- পানি, লেবুর রস, শশা, গাজর, পুদিনা ইত্যাদির রসের সমন্বয়ে তৈরি একধরনের পানীয়।
গরমে যা কম খাওয়া উচিত
- মশলাজাতীয় খাবার: বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ মশলা জাতীয় খাবার খেতে পছন্দ করলেও গরমের সময় ‘ভুনা মাছ বা মাংস’ খাওয়া এড়াতে হবে। কারণ এ ধরণের খাবার হজম করতে বেশি সময় লাগে। শরীরে বিপাক প্রক্রিয়া যদি বেশি সময় ধরে চলে, তখন গরম লাগতে শুরু করে।
- আইসক্রিম ও কোমল পানীয়: অনেকে মনে করেন, আইসক্রিম ও ঠাণ্ডা বোতলজাত কোমল পানীয় খেলে গরম কম লাগবে। কিন্তু এগুলো খেলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেজন্যই আইসক্রিম কিংবা কোমল পানীয় খাওয়ার পরপর তৃষ্ণার্ত বোধ করে মানুষ।
- ফাস্টফুড: ফাস্টফুড নিয়ে বছরের পর বছর ধরে বহু আলোচনা-সমালোচনা চললেও মানুষ বার্গার, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, ফ্রায়েড চিকেন, পিৎজা ইত্যাদি হরহামেশা খাচ্ছে। কিন্তু গরমের সময়ে তো বটেও, সাধারণ সময়ে এগুলো খাওয়া উচিৎ নয়। কারণ এসব খাবারে প্রচুর পরিমাণ শর্করা ও চর্বি থাকায় হজম করতে সময় লাগে। ফলে, এগুলো রক্তচাপকে প্রভাবিত করে, প্রদাহ বাড়ায়।
- ডুবো তেলে ভাজা খাবার: ডুবো তেলে ভাজা খাবার ও অতিরিক্ত তেলেভাজা খাবার মুখরোচক হলেও তা শরীরের জন্য মোটেও ভালো না। এ ধরনের খাবার গরমে এড়িয়ে চলতে হবে। ভাজা-পোড়া জাতীয় খাবার শরীরে পানির ঘাটতি তৈরি করে।
- চা-কফি: শীতকালে শরীর গরম রাখার জন্য অনেকে চা-কফি পান করেন। তাহলে যে চা-কফি শীতকালে শরীর গরম রাখতে সাহায্য করে, তা নিশ্চয়ই গরমকালেও একই ভূমিকা পালন করবে। তাই, গরমকালে অতিরিক্ত চা-কফি পান করা উচিৎ নয়। কারণ চা বা কফির ক্যাফেইন দেহকে পানিশূন্য করে ফেলে এবং শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে তোলে।
- দুগ্ধজাতীয় খাবার: গরমকালে দুধ জাতীয় খাবার, যেমন মেয়োনেজ বা বিভিন্ন শেক খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ গরমের সময় এ জাতীয় খাবারে ব্যাকটেরিয়া দ্রুত হয়।
- অতিরিক্ত চিনি ও লবণ: চিনি ও লবণ, এ দু’টো জিনিস এমনিতেই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু গরমের সময় সেই ক্ষতির মাত্রাটা আরও বেশি হয়ে দাঁড়ায়। এসময় অতিরিক্ত চিনি ও লবণ খেলে শরীরে অস্বস্তি হতে পারে। তাই, গরমে প্যাকেট জাতীয় খাবার বা প্রসেসড ফুড খাওয়া একদমই উচিৎ না।
- ডিম: শরীরে প্রোটিনের চাহিদা মেটানোর অন্যতম মাধ্যম ডিম। কিন্তু গরমের সময় ডিম খেলে অনেকের সমস্যা হতে পারে। সেক্ষেত্রে যাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি, কিংবা উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাহলে তারা চাইলে ডিম এড়িয়ে চলতে পারে। ডিমের পরিবর্তে প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে তারা তাদের খাদ্যতালিকায় নিয়মিত মাছ কিংবা মুরগির মাংস রাখতে পারেন।
বাড়িতে থাকলে আমরা যারা সারাক্ষণ শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরেই থাকি। সেখান থেকে হঠাৎ চড়া রোদে গেলেই শরীর চট করে বাইরের তাপমাত্রার ফারাকের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে না। তাতেই জ্বর, ঠান্ডালাগা, মাথাধরার মতো সমস্যাগুলো দেখা দেয়। তাই দিনেরবেলা বাইরে বেরনোর অন্তত্য ১০-১৫ মিনিট আগে আপনার শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের যন্ত্রটি বন্ধ করে দিতে হবে।
সা/ই
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত