জুলাই সনদ স্বাক্ষর আজ, কাটেনি মতভিন্নতা ও অনিশ্চয়তা

প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১১ | আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ২১:২৯

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তীতে রাজনৈতিক অঙ্গণে বহুল আলোচিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে আজ শুক্রবার। জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বিকাল চারটায় এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দেবেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতী ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। ঐকমত্য কমিশন এটিকে ‘নতুন রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল’ হিসেবে আখ্যায়তি করেছে। আর প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘এই সনদ জাতির জন্য একটি মস্ত বড় সনদ’ হয়ে থাকবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এতদিন সংলাপে অংশ নেওয়া ৩৩টি রাজনৈতিক দল-জোটকে আজকের এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছে কমিশন। ঐকমত্য কমিশনের একটি প্রতিনিধি দল গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিত্সাধীন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেন। তিনি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের সফলতা কামনা করেছেন।
তবে, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রশ্নে মতভিন্নতার কারণে সংশ্লিষ্ট সব দলের আজকের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া এবং সনদে স্বাক্ষর করা নিয়ে এখনও সংময় রয়েই গেছে। যদিও ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আমরা আশা করছি সব দল অনুষ্ঠানে আসবে এবং সনদে সই করবে। কোনো দল আজ সনদে স্বাক্ষর না করলেও পরবর্তীতের স্বাক্ষর করতে পারবে, সেই সুযোগ উন্মুক্ত থাকবে।
কাটেনি মতভিন্নতা ও অনিশ্চয়তা
জুলাই সনদ আজ স্বাক্ষর হতে গেলেও এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মতভিন্নতা কাটেনি সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। বিশেষত, সনদ বাস্তবায়নে গণভোট কখন হবে, সনদের আইনি ভিত্তি এবং সংসদের উভয় কক্ষে [উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ) পিআর [সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে নির্বাচন হওয়া না হওয়ার প্রশ্নে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এতদিন সংলাপে অংশ নেওয়া দল-জোটগুলো দৃশ্যত দুটি বলয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। বিএনপি ও এর মিত্র দল-জোটগুলো ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের দিনে একসঙ্গে গণভোটের পক্ষে। আর জামায়াত সংসদ নির্বাচনের আগে নভেম্বরেই গণভোট চায়, দলটি সংসদের উভয় কক্ষেই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনও দাবি করছে। অন্যদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টি [এনসিপি) সনদে স্বাক্ষরের আগেই নির্বাহী আদেশে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সরকারি প্রতিশ্রুতি চায়।
এমন মতভিন্নতার কারণে আজ জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিবাদমান দলগুলোর সকলের অংশ নেওয়া ও সনদে স্বাক্ষর করা নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বিএনপিসহ দলটির মিত্র দল-জোটগুলো সনদে সই করছে, এটা প্রায় নিশ্চিত। জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দলটি আজকের স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দেবে, তবে সনদে স্বাক্ষর করা না করার বিষয়ে গতকাল পর্যন্ত দলীয় সিদ্ধান্ত হয়নি। আর এনসিপি গতকাল সংবাদ সম্মেলন ডেকে বলেছে, আইনি ভিত্তি ছাড়া এনসিপি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যাবে না, সনদে স্বাক্ষরও করবে না। অন্যদিকে, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি [সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলসহ (বাসদ) চারটি বাম দল আজকের অনুষ্ঠানে না যাওয়ার ও সনদে সই না করার ঘোষণা দিয়েছে।
আপত্তি থাকা বিষয়গুলো সনদে লিপিবদ্ধ করা হলে বিএনপি সই করবে: মির্জা ফখরুল
‘বিএনপি সনদে স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত’- ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এতদিনের আলোচনায় বিএনপির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেওয়া দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ আগে এমনটি বললেও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছেন ভিন্নকথা। মির্জা ফখরুল গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। আমরা যেসব প্রস্তাবে নোট অব ডিসেন্ট [আপত্তি) দিয়েছি সেগুলো সনদে লিপিবদ্ধ করা হলে বিএনপি সনদে সই করবে। তবে সনদে স্বাক্ষরের সিদ্ধান্ত জানতে শুক্রবার ]আজ) পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে থাকবে জামায়াত, তবে স্বাক্ষরের সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি: গোলাম পরওয়ার
সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জামায়াত যাবে কিনা এবং সনদে সই করবে কিনা, গতকাল সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, জামায়াত মনে করে সনদের আইনি ভিত্তি দরকার। এজন্য আমরা নভেম্বরে গণভোট চাই। সংসদ নির্বাচনের সঙ্গেই গণভোট হলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, জামায়াত স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যাবে, তবে সনদে স্বাক্ষর করবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।
গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আমরা ভেবেছি, আমাদের প্রয়োজনীয় যেসমস্ত সমস্যা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি, তার যে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে, সেগুলো আলোচনার ভিত্তিতে সমাধানের কোনো সুযোগ যদি আমরা দেখি, তাহলে আমাদের এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যাওয়ার ব্যাপারে আপত্তি থাকবে না। আমরা আমন্ত্রণ পেয়েছি, কিন্তু আমরা চিন্তা করছি, আমরা সেখানে কী ভূমিকা রাখব।
এর আগে অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে জামায়াতের এই নেতা বলেন, জাতীয় নির্বাচনের একইদিনে যদি গণভোট হয়, হিসাব করে আমরা দেখেছি, প্রচুর ভোটার কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভোট দিতে পারবে না। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকবে, সময় শেষ হয়ে যাবে। ভোটার জানতে পারবে না যে কী কী সংস্কার করছে, গণভোটে ‘হ্যাঁ, ‘না’ কী হলো। তাই ভোটারকে মাথা ঠান্ডা করে জানার ও ভোট দেওয়ার জন্য নির্বাচনের আগে গণভোট দিতে হবে। নভেম্বরেই গণভোট হওয়ার উপযুক্ত সময় বলেও দাবি করেন তিনি।
আইনি ভিত্তি ছাড়া এনসিপি অনুষ্ঠানের অংশীদার হবে না, স্বাক্ষরও করবে না: নাহিদ ইসলাম
গতকাল রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানান, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া এনসিপি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের অংশদার হবে না, সনদে স্বাক্ষরও করবে না।
তিনি বলেন, আইনি ভিত্তি ছাড়া জুলাই সনদ স্বাক্ষরের বিষয়টি শুধু আনুষ্ঠানিকতা। আইনি ভিত্তি ছাড়া এবং আদেশের ব্যাপারে নিশ্চয়তা ছাড়া জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলে সেটা মূল্যহীন হবে। একারণে আজকের জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের অংশীদার হবে না এনসিপি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, সর্বশেষ জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের সময়ও আইনি ভিত্তির কথা বলা হয়েছিল। শুধু কয়েকটি রাজনৈতিক দল এক জায়গায় বসে একটা দীর্ঘ আলোচনায় কিছু বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোই যথেষ্ট নয়। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিশ্চয়তা দিতে হবে, পরবর্তী সময়ে ক্ষমতায় গেলে সেগুলো বাস্তবায়ন করবে। তিনি বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের যে প্রক্রিয়া, যে আলোচনা হবে, সেটির একটি আইনি ভিত্তি দিতে হবে।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, আজ যে অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে, সেখানে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের ঘটনা ঘটবে। জুলাই সনদে আইনিভাবে যে আদেশ জারি করার কথা বলা হচ্ছে, সেটি না করে স্বাক্ষরের বিষয়টি কেবল আনুষ্ঠানিকতা হবে। জুলাই সনদ এর মধ্যে হয়ে গেছে। সব রাজনৈতিক দল একটা জায়গায় ঐকমত্যে এসেছে, কী কী পরিবর্তন হবে, সেবিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে কিছু বিষয়ে কিছু দলের ‘নোট অব ডিসেন্ট’ আছে। তাদের ভিন্নমত থাকতেই পারে। গণভোটে সামগ্রিক বিষয়টিই যাবে। জনগণ যদি পক্ষে ভোট দেন, তাহলে জুলাই সনদ অনুমোদিত হবে এবং পরবর্তী সময়ে যারা ক্ষমতায় যাবে, তারা সনদ অনুযায়ী সংবিধান সংস্কার করবে। ফলে পুরো প্রক্রিয়ার মূল জায়গাটা হবে আদেশ, যে সাংবিধানিক আদেশের ভিত্তিতে গণভোট হবে এবং পুরো প্রক্রিয়া এগোবে।
জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে প্রতারণা করা হয়েছে উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রের আগেও দাবি ছিল আইনি ভিত্তি থাকবে। কিন্তু সেটা হয়নি। জুলাই ঘোষণাপত্রের যে টেক্সট, সেটি নিয়ে কিন্তু একধরনের প্রতারণা করা হয়েছে। সেই টেক্সট আমাদের দেখানো হয়নি। আগে যে অংশ দেখানো হয়েছে, ঘোষণাপত্র পাঠের সময় যেটা পরিবর্তিত হয়েছিল এবং সেটা অনেক কম্প্রোমাইজ একটা ডক্যুমেন্ট হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা আরেক ঘটনার সাক্ষী হতে চাই না, যেটার আসলে কোনো মিনিং নেই। আমরা আইনি ভিত্তি ছাড়া ও অর্ডারের ব্যাপারে নিশ্চয়তা ছাড়া যদি সনদে স্বাক্ষর করি, সেটা মূল্যহীন হবে এবং পরবর্তী সময়ে সরকার আদেশ কিসের ভিত্তিতে দেবে, সেটির কোনো নিশ্চয়তা পাচ্ছি না। আমরা সেই বিষয়টা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জুলাই সনদ স্বাক্ষরের যে অনুষ্ঠান বা যে আয়োজন চলছে, সেখানে আমরা নিজেরা অংশীদার হব না।
জুলাই সনদের খসড়া স্বাক্ষরের আগে প্রকাশের দাবি জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা চাই যে এই পুরো প্রক্রিয়া সফল হোক। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ, এই আদেশের খসড়া সনদ স্বাক্ষরের আগেই প্রকাশ করতে হবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায় অনুসারে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জারি করবেন। অর্থাত্ আমরা বলছি যে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আগে সনদ বাস্তবায়নের যে আদেশ হবে, এর খসড়ায় আমাদের ঐকমত্য হতে হবে। তার ওপর ভিত্তি করে আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষরের বিষয়টা বিবেচনা করব।
তিনটি বিষয় পরিষ্কার হওয়ার পর জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হতে পারে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, প্রথমত, এই সরকারের বৈধতার মূল উত্স জুলাই গণ-অভ্যুত্থানন। ফলে জুলাই সনদের বৈধতার উত্স হতে হবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান। সেই জায়গা থেকে সেটি রাষ্ট্রপতি নয়, বরং সরকারপ্রধান হিসেবে মুহাম্মদ ইউনূস জারি করবেন। দ্বিতীয়ত, জুলাই সনদে ৮৪টি বিষয় রয়েছে। এই ৮৪টি বিষয় একত্রে গণভোটে যাবে। গণভোটে ‘নোট অব ডিসেন্ট’-এর আলাদা কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। তৃতীয়ত, গণভোটের দ্বারা জনগণ সনদ অনুমোদন করলে, অর্থাত্ পক্ষে ভোট দিলে পরবর্তী সংসদ সনদ অনুযায়ী সংবিধান সংস্কার করবে। এই তিনটি দাবির বিষয়ে পরিষ্কার হওয়ার পর জুলাই সনদ স্বাক্ষরের অনুষ্ঠান হতে পারে। এই বিষয়গুলো নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জুলাই সনদ স্বাক্ষর একটা আনুষ্ঠানিকতা। এই বিষয়গুলো স্পষ্ট না করে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আয়োজন ছলচাতুরীর মতো। সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেনও কথা বলেন।
স্বাক্ষর না করার ঘোষণা সিপিবি ও বাসদসহ চারটি বাম দলের
জুলাই জাতীয় সনদের স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগে সংশোধিত খসড়া না পেলে সনদে সই করবে না বাম ধারার চারটি দল। দলগুলো হলো সিপিবি, বাসদ, বাসদ [মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ। গতকাল রাজধানীর পুরানা পল্টনে সিপিবির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে দলগুলো। জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগে তাতে সংশোধনের দাবি জানিয়েছে দলগুলো।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ। তিনি বলেন, জুলাই সনদের যে চূড়ান্ত কপি গত ১৪ অক্টোবর আমাদের কাছে পাঠিয়েছে, সেখানে দেখলাম সর্বসম্মত বিষয় ছাড়াও নোট অব ডিসেন্ট [আপত্তি) দেওয়া প্রস্তাবগুলো সনদে যুক্ত করেছে। আমাদের দেওয়া নোট অব ডিসেন্টগুলোর কারণও যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ হয়নি।
দলগুলো কেন জুলাই সনদে সই করবে না, তার কারণগুলো সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়। বলা হয়, জুলাই সনদের প্রথম অংশে পটভূমিতে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের ইতিহাস সঠিকভাবে উপস্থাপিত হয়নি, বারবার সংশোধনী দিলেও সেগুলো সন্নিবেশিত করা হয়নি। সংবিধানের ১৫০[২) অনুচ্ছেদে ক্রান্তিকালীন বিধানে ৬ষ্ঠ তফসিলে থাকা স্বাধীনতার ঘোষণা ‘ডিক্লারেশন অব ইনডিপেনডেন্স’ এবং ৭ম তফসিলে থাকা ‘প্রক্লেমেশন অব ইনডিপেনডেন্স’ বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। যা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তি, তা বাদ দিলে বাংলাদেশের অস্তিত্বই থাকে না। অথচ জুলাই সনদ সংবিধানের তফসিলে যুক্ত করার কথা বলা হচ্ছে; পটভূমিতে অভ্যুত্থান-পরবর্তী সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের রেফারেন্স নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার কথা আগে পাঠানো খসড়া সনদে উল্লেখ থাকলেও চূড়ান্ত সনদে ১০৬ অনুচ্ছেদের কথা বাদ দেওয়া হয়েছে। এসব বিষয় নিষ্পত্তি না হওয়ায় তাদের পক্ষে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান বজলুর রশীদ ফিরোজ। সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, বাসদের [মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মুশতাক হোসেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন সিপিবির সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স প্রমুখ।
প্রস্তুতি সম্পন্ন, আশা করছি সব দল সই করবে, কেউ সই না করলে পরেও করতে পারবে: আলী রীয়াজ
কোনো রাজনৈতিক দল আজ জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর না করলে পরবর্তী সময়ে সই করার সুযোগ থাকবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক জানতে চান, আগামীকাল যদি কোনো দল জুলাই সনদে সই না করে, তাহলে পরবর্তী সময়ে তারা চাইলে কি স্বাক্ষর করতে পারবে? জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আজ সব দলের স্বাক্ষর নিতে পারলে ভালো। তবে যদি কোনো দল পরবর্তীতে স্বাক্ষরের কথা বলে তারা তো সনদ প্রক্রিয়ার অংশীদার। শরিক হিসেবে তারা সেটা করতে পারবে। তবে কমিশন আশা করে, সকলে একসঙ্গে বসে উত্সবমুখর পরিবেশে স্বাক্ষর করবে।’
‘আইনি ভিত্তি ছাড়া এবং আদেশের ব্যাপারে নিশ্চয়তা ছাড়া’ জুলাই সনদে এনসিপি সই করবে না- দলটির নেতাদের এমন বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, এনসিপির বক্তব্য কমিশন গভীরভাবে পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণ করেছে। দলটির নেতারা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অগ্রগামী সৈনিক ছিলেন। তারা নেতৃত্ব দিয়েছেন। এর বাইরে সনদ প্রক্রিয়ায় তারা অংশ নিয়েছেন। ফলে তাদের অবদান সনদ তৈরির ক্ষেত্রে একাধিকভাবে আছে।
আলী রীয়াজ বলেন, কমিশনও মনে করে, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়া প্রয়োজন এবং দ্রুদতার সঙ্গে সেটা করার জন্যই কমিশনের মেয়াদকালে তারা একটি পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ দেবেন। তিনি বলেন, কমিশন আশা করছে এনসিপিসহ সব রাজনৈতিক দল সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দেবে, সনদে স্বাক্ষর করবে এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।
কমিশনের মেয়াদ বাড়লো ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত
ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গতকাল এসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। সংবাদ সম্মেলনে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, কমিশনের মেয়াদ ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে, যাতে কমিশনের মেয়াদকালেই একটি পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ তারা দিতে পারেন এবং সেগুলো বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া যায়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন [দুদক) সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান প্রমুখ।
সংসদ ভবন এলাকায় ড্রোন ওড়ানো যাবে না
জুলাই সনদ সই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সংসদ ভবন এলাকায় কোনো প্রকার ড্রোন ওড়াতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। গতকাল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এই তথ্য জানায়। নির্দেশনা মেনে চলার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত