জানুয়ারিতে সড়ক-রেল-নৌপথ দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৪৮৬ জন: যাত্রী কল্যাণ সমিতি
প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:০৫ | আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:১৫
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সড়ক, রেল ও নৌ-পথে ৫৭২টি দুর্ঘটনায় ৫৩৪ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন চার হাজার ৪৬২ জন। এর মধ্যে সড়কে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। সড়কে ৫২১টি দুর্ঘটনায় ৪৮৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন এক হাজার ৫৪ জন। আর রেলপথে ৪২ জন ও নৌপথে ছয়জন মারা গেছেন।
রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌ পথের দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে দুর্ঘটনারোধে আট দফা সুপারিশও করা হয়েছে।
সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ অনুসারে, ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে (পঙ্গু হাসপাতালে) এক হাজার ১৫৩ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪৭২ জন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭৭১ জন, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫৫৮ জন, নারায়ণগঞ্জে খানপুর হাসপাতালে ৪২০ জনসহ মোট তিন হাজার ৩৭৪ জন যাত্রী ও পথচারী সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে জরুরি বিভাগে ভর্তি হয়েছেন।
সংগঠনটির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসে রেলপথে ৪৪টি দুর্ঘটনায় ৪২ জন নিহত ও ২১ জন আহত হয়েছেন। নৌ-পথে সাতটি দুর্ঘটনায় ছয়জন নিহত ও ১৩ জন আহত এবং তিনজন নিখোঁজ হয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৫৭২টি দুর্ঘটনায় ৫৩৪ জন নিহত এবং চার হাজার ৪৬২ জন আহত হয়েছেন।
সড়কে দুর্ঘটনার মধ্যে বেশি মৃত্যু হয়েছে বাইকে। ১৬৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৭০ জন নিহত ও ১৭৩ জন আহত হয়েছেন। যা মোট দুর্ঘটনার ৩১ দশমিক ৪৭ শতাংশ, নিহতের ৩৪ দশমিক ৯০ শতাংশ ও আহতের ১৬ দশমিক ৪১ শতাংশ।
এই মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। এই বিভাগে ১২৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১১৭ জন নিহত ও ২৭০ জন আহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে বরিশাল বিভাগে। সেখানে ৩৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত ও ১২৫ জন আহত হয়েছেন।
সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ১৪ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১৩৩ জন চালক, ৭৪ জন পথচারী, ২৪ জন পরিবহন শ্রমিক, ৬৯ জন শিক্ষার্থী, ছয়জন শিক্ষক, ৭৫ জন নারী, ৫১ জন শিশু, তিনজন সাংবাদিক, একজন চিকিৎসক, একজন আইনজীবী, একজন প্রকৌশলী, তিনজন মুক্তিযোদ্ধা এবং ১৩ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে।
তাদের মধ্যে নিহত হয়েছেন তিনজন পুলিশ সদস্য, একজন সেনাবাহিনীর সদস্য, একজন বিমানবাহিনীর সদস্য, একজন চিকিৎসক, একজন আইনজীবী, তিনজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, একজন প্রকৌশলী, ৯৬ জন বিভিন্ন পরিবহনের চালক, ৬৯ জন পথচারী, ৪৭ জন নারী, ৩৮ জন শিশু, ২৯ জন শিক্ষার্থী, ১২ জন পরিবহন শ্রমিক, ছয়জন শিক্ষক ও নয়জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।
২৫ দশমিক ১৭ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১১ দশমিক ৫৫ শতাংশ বাস, ১৫ দশমিক ৮১ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, চার দশমিক ৮১ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ১০ দশমিক ৫৯ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা, ছয় দশমিক ০৫ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
দুর্ঘটনার ৫১ দশমিক ৬৩ শতাংশ গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২২ দশমিক ৪৫ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ১০ দশমিক ৩৬ শতাংশ বিবিধ কারণে, চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে শূন্য দশমিক ৫৭ শতাংশ, এবং শূন্য দশমিক ৩৪ ট্রেন-যানবাহনের সংঘর্ষে ঘটে।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ মাসের মোট দুর্ঘটনার ৩৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ১৭ দশমিক ০৮ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৪১ দশমিক ৪৮ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার পাঁচ দশমিক ৭৫ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, শূন্য দশমিক ৯৫ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে এবং শূন্য দশমিক ৩৪ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংগঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে, জানুয়ারি মাসে সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণসমূহ:
১. ট্রাফিক আইনের অপপ্রয়োগ, দুর্বল প্রয়োগ, নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনিয়ম দুর্নীতি ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়া।
২. মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও তিন চাকার যানের ব্যাপক বৃদ্ধি ও এসব যানবাহন সড়ক মহাসড়কে অবাধে চলাচল।
৩. সড়ক-মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কে বাতি না থাকা। রাতের বেলায় ফগ লাইটের অবাধ ব্যবহার।
৪. সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণে ত্রুটি, ফিটনেস যানবাহন ও অদক্ষ চালকের হার বেড়ে যাওয়া।
৫. ফুটপাত বেদখল, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা।
৬. উল্টোপথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাঁদাবাজি।
৭. অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালানো।
দুর্ঘটনার প্রতিরোধে সুপারিশ
১. রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে প্রাথমিক উৎস থেকে সড়ক দুর্ঘটনার পূর্ণাঙ্গ ডাটা ব্যাংক চালু করা।
২. স্মার্ট গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা। মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের মতো ছোট ছোট যানবাহন আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা।
৩. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ নেওয়া, ডিজিটাল পদ্ধতিতে যানবাহনের ফিটনেস প্রদান।
৪. রাতের বেলায় বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল চালকদের রিফ্লেক্টিং ভেস্ট পোশাক পরিধান বাধ্যতামূলক করা।
৫. সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনিশ্চিত করা।
৬. রাতের বেলায় চলাচলের জন্য জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে পর্যাপ্ত আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা।
৭. ব্লাক স্পট নিরসন করা, সড়ক নিরাপত্তা অডিট করা, স্টার মানের সড়ক করিডোর গড়ে তোলা।
৮. দেশে সড়কে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর চলমান গতানুগতিক কার্যক্রম অডিট করে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা চিহ্নিত করা, প্রাতিষ্ঠানিক অকার্যকারিতা সংস্কার করা।
ই
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত