জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারে বাড়ছে সহিংসতা
প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:২৯ | আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪:৩৮
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণাকে কেন্দ্র করে বাড়ছে সহিংসতা। দেশের ১১ স্থানে গত রবিবার ও সোমবার পৃথক সহিংসতায় ২৭ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে টাঙ্গাইলে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বেশ কয়েকটি স্থানে প্রার্থীদের নির্বাচনী কার্যালয়ে ভাঙচুর করা এবং আগুন দেওয়া হয়।
টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে নৌকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মিছিলে গুলি করার অভিযোগ উঠেছে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছানোয়ার হোসেনের (ঈগল) কর্মীদের বিরুদ্ধে। গত রবিবার রাতে বাঘিলে এ ঘটনা ঘটে। এতে যুবলীগ নেতা রোকনুজ্জামান রোকনসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ ঘটনায় গতকাল টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা করেন আহত রোকনের বাবা ফজলুল রহমান। মামলায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। আহতরা হলেন বাঘিল ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রোকনুজ্জামান রোকন, কর্মী এমদাদুল হক ও সিয়াম।তাঁদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আব্দুর রাজ্জাক ও আকাল মিয়া আকালু নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নৌকার প্রার্থী মামুন অর রশিদ বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী ছানোয়ার হোসেন তাঁর কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে রবিবার রাতে বাঘিল এলাকায় নৌকার মিছিলে গুলিবর্ষণ করেন।
অভিযোগ সম্পর্কে সংসদ সদস্য ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার কোনো নেতাকর্মী এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। তারা নিজেরাই এই নাটক সাজিয়ে নির্বাচনে যেন ভোটাররা মাঠে না আসে সে ব্যবস্থা করছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেব। আমার নেতাকর্মীরা কখনোই এ ধরনের হামলা করবে না। নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ দেওয়া আছে।’
এর মধ্যে নওগাঁ-৫ (সদর) আসনে নৌকার প্রার্থী নিজাম উদ্দিন জলিল জনের পাঁচটি ক্যাম্পে আগুন-ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান ছেকার আহমেদ শিষাণের সমর্থকদের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে নওগাঁ-১ আসনে নৌকার প্রার্থী খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের একটি নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন ও ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা।গত রবিবার সদর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের চকতারতা মোড়, মুক্তারপাড়া মোড়, হাল ঘোষপাড়া মোড়, তিলকপুর ইউনিয়নের ছিটকীতলা মোড়, পৌর শহরের কালীতলা ও পোরশা উপজেলার নিতপুর ইউনিয়নে এসব ঘটনা ঘটে।
আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুবুল হক কমল বলেন, ‘রবিবার নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে মতবিনিময়ে শিষাণের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আমরা তুলে ধরেছি। তাত্ক্ষণিক শিষাণকে সাবধান করে দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার। অথচ ওই রাতেই তাঁর সমর্থকরা আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে নৌকার বিভিন্ন ক্যাম্পে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে দেওয়ান ছেকার আহমেদ শিষাণ বলেন, ‘নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসায় পরাজয় নিশ্চিত জেনে নোংরা রাজনীতির খেলায় মেতেছে নিজাম উদ্দিনের সমর্থকরা। নিজেরাই নিজেদের নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন ধরিয়ে দিয়ে নাটক সাজাচ্ছে।’
এদিকে পোরশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন জানান, রাতের অন্ধকারে কে বা কারা নৌকার ক্যাম্পে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।
চান্দিনা (কুমিল্লা) : চান্দিনায় রাতের অন্ধকারে নৌকার প্রার্থী ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের নির্বাচনী কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও তিন নেতাকর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। গত রবিবার রাতে নাজিরপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন আবুল কালাম, সাব্বির হোসেন ও ফয়সাল হোসেন। ফয়সাল হোসেনের পা ও এক হাতের কবজি ভেঙে গেছে।
গতকাল উপজেলা রোডে নৌকার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন প্রার্থীর সমন্বয়ক মোসলেহ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘রবিবার রাতে নৌকার কর্মীরা নির্বাচনী অফিসে পোস্টার সাঁটানোর কাজ করছিলেন। হঠাৎ একটি কালো রঙের মাইক্রোবাস অফিসের সামনে থামার সঙ্গে সঙ্গে ৮-১০ জন মুখশধারী সন্ত্রাসী কর্মীদের মারধর শুরু করে। রড, হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে আবুল কামাল, ফয়সার ও সাব্বিরকে মারাত্মক আহত করে। এর মধ্যে একজনের হাত ও পা ভেঙে গেছে।’
বাঘায় (রাজশাহী)নৌকার অস্থায়ী দুটি নির্বাচনী অফিসে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। গত রবিবার রাতে বাঘা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মুশিদপুর ও বাজুবাঘা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড জোতজয়রাম গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
হাতীবান্ধায় (লালমনিরহাট) পৃথক স্থানে নৌকা ও ঈগল প্রতীকের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে দুই পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। রবিবার রাতে উপজেলার সাধুর বাজার ও মিলন বাজার এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের ১০ জন আহত হয়েছে।
ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে ঈগল প্রতীকের প্রার্থী আবদুল কাদের আজাদ ওরফে এ কে আজাদের এক সমর্থকের মাইক্রোবাস ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত রবিবার রাতে দুর্বৃত্তরা মাইক্রোবাসটি ভাঙচুর করে। শহরের পশ্চিম খাবাসপুর এলাকায় বাড়ির সামনে গাড়িটি পার্ক করা ছিল। গাড়ির মালিক সেলিম মিয়া বলেন, ‘এ ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের ঈগল প্রতীকের সমর্থকরা। আমি পুলিশের কাছে অভিযোগ করব।’
কলাপাড়া উপজেলা শ্রমিক লীগের সাবেক সহসভাপতি মো. সজীব মৃধাকে (৩২) কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। গত রবিবার রাতে পৌর শহরের কুমারপট্টিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। সজীবকে কলাপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সজীব মৃধা বলেন, রবিবার রাতে তিনিসহ নেতাকর্মীরা নৌকার নির্বাচনী প্রচার শেষে দলীয় কার্যালয়ে বসে ছিলেন। এ সময় রকি ও জনি সহযোগী মো. মহিবুল্লাহ, মো. সুমন, মো. মুছা, মোস্তফাসহ ১০-১২ জন দেশি অস্ত্র নিয়ে হামলা করে।
কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব তালুকদার বলেন, নিজেদের ভেতরে ভুল বোঝাবুঝির কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। উভয় পক্ষকে ডেকে বিরোধ মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে সবাই বিরোধ ভুলে নৌকার পক্ষে কাজ করবে।
কলাপাড়া থানার ওসি আলী আহম্মেদ জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মেহেদী নামের একজন আটক করা হয়েছে।
নন্দীগ্রামে স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচারে অংশ নেওয়ায় আওয়ামী লীগের তিন নেতাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। বগুড়া-৪ আসনে ১৪ দলের প্রার্থী জেলা জাসদের সভাপতি এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনের (ঈগল) ভাগ্নের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ওঠে।গতকাল দুপুরে উপজেলার শিমলা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন নন্দীগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি রুবেল হোসেন, সহসভাপতি মোফাজ্জল হোসেন ও যুগ্ম সম্পাদক রুহুল আমিন।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে ডাব প্রতীকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন হিরো আলম। তিনি বলেন, ‘আমি কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে প্রচার চালাতে গেলে ১০-১২ জন যুবক এসে বাধা দেয়। তারা অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে এবং বলে তুই (হিরো আলম) ব্যবসা শুরু করেছিস। নির্বাচন এলেই প্রার্থী হয়ে টাকা কামাইয়ের ধান্ধায় নেমেছিস। তারা আমার কর্মীদের কিল-ঘুষি মারে।’ কাহালু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলাল উদ্দিন কবিরাজ বলেন, ‘ওই ঘটনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী জড়িত নয়।’
বাগাতিপাড়ায় (নাটোর) নৌকার প্রার্থী শহিদুল ইসলাম বকুলের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছে দুষ্কৃতকারীরা।
কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট, লালমাই ও সদর দক্ষিণ) আসনে জাতীয় পার্টির (লাঙল) জোনাকী হুমায়ুনের গণসংযোগে হামলা করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে কাকৈরতলা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় দুজন আহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন মোহাম্মদ রাব্বি ও ইকবাল হোসেন।
নৌকায় ভোট না দিলে পানি ও বিদ্যুৎ বন্ধের হুমকি দেওয়া নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরিদ ভূঁইয়া মাসুমকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ। গতকাল দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল।পুলিশ সুপার জানান, ওই ছাত্রলীগ নেতাকে ধরতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যিনি বলেছিলেন নৌকায় ভোট না দিলে এলাকায় পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাস সংযোগ থাকবে না। পুলিশ তাঁকে খুঁজছে, শিগগির তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।
সা/ই
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত