জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পুলিশের প্রতি আহবান প্রধানমন্ত্রীর
 গ্রামনগর বার্তা রিপোর্ট
  গ্রামনগর বার্তা রিপোর্ট
                                    
                                    প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২২, ১৪:৫০ | আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৪৬
 
                                        
                                    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার চায় পুলিশ বাহিনী তাদের মানবিক কাজের মাধ্যমে জনগণের সম্পূর্ণ আস্থা অর্জন করবে। তিনি প্রতিটি থানায় ‘পরিসেবা ডেস্ক’ এবং গৃহহীন মানুষের জন্য পুলিশ আবাসন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে এ আহবান জানান।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের পুলিশ জনগণের সেবক হবে এবং জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করবে। মানুষ পুলিশের কাছে গেলে যে ন্যায় বিচার পাবে, সেই আত্মবিশ^াসটা যেন মানুষের মধ্যে থাকে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সারাদেশের প্রতিটি (৬৫৯) থানায় ‘সার্ভিস ডেস্ক’ উদ্বোধন করেন এবং গৃহহীন পরিবারের জন্য পুলিশের নির্মিত ৪০০টি বাড়ি হস্তান্তর করেছেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি পুলিশের এ দুটি মানবিক উদ্যোগের উদ্বোধনকালে তিনি পুলিশকে সততার সাথে তাদের দায়িত্ব পালনের আহবান জানান।
তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক বার্তা, এই পুলিশকে জনগণের পুলিশ হতে হবে। আমি মনে করি, হেলপ ডেস্ক স্থাপনের মাধ্যমে আমাদের নারী-শিশু-বয়স্কদের সেবা দেওয়া এবং গৃহহীনদের গৃহ দেওয়া এটা জনগণের পুলিশের কাজ। কাজেই আজকের পুলিশ জনগণের পুলিশ হিসেবেই আপনারা মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা থেমে গিয়েছিল। মানুষ সম্পূর্ণ দিশাহারা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে বাংলাদেশ চলছিল। স্বাধীনতার যে আদর্শ সেই আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছিল। ৯৬ সালে সরকার গঠন করার পর থেকে আমরা মানুষের সেবা করার দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেই। পুলিশ বাহিনী যাতে আরও শক্তিশালী হয়, সার্বিক উন্নয়নে বাজেট আমরা বৃদ্ধি করি। কারণ বাংলাদেশে পুলিশের অবদান অনেক বেশি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ যখন পাকিস্তানিরা গণহত্যা শুরু করে, তাদের আক্রমণ শুরু হয়েছিল রাজারবাগ পুলিশ ফাঁড়ি থেকে। অকুতোভয় পুলিশ বাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। পিলখানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতির পিতার বাড়িও তারা আক্রমণ করে। ২৫ মার্চ হানাদার বাহিনীর আক্রমণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাতির পিতা স্বাধীনতার ঘোষণা তখনকার ইপিআর, এখনকার বিজিবির ওয়্যারলেসের মাধ্যমে পুরো বাংলাদেশে পৌঁছে দেন। বাংলাদেশে প্রতিটি থানায় এই বার্তাটা পৌঁছায় গভীর রাতে। এই বার্তাটা পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তারা আওয়ামী লীগ নেতা ও সংগ্রাম পরিষদের সদস্যদের কাছে স্বাধীনতার ঘোষণা পৌঁছে দেন। তখন সমগ্র বাংলাদেশে এটা প্রচার শুরু হয়ে যায় সেই ভোররাত থেকেই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের পুলিশ জনগণের সেবক হবে, জনগণের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করবে। পুলিশের কাছে গেলে ন্যায়বিচার পাবে এই আত্মবিশ্বাস যেন মানুষের মাঝে থাকে। পুলিশকে সব সময় সেবা দিয়ে যেতে হবে। যে কোনো বাহিনী বা ব্যক্তি হোক, তার জীবনে সফলতা তখনই আসে যখন তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সে যথাযথভাবে পালন করে মানুষের আস্থা-বিশ্বাস এবং ভালোবাসা অর্জন করতে পারে। স্বাধীন দেশে এভাবেই যেন মানুষের আস্থা পুলিশ অর্জন করতে পারে সেটাই আমরা চাই।
তৃণমূলের মানুষ যেন উন্নয়নের ছোঁয়া পায় সেদিকে লক্ষ রেখে সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এই সমাজটাকে উন্নত করতে চাই। যারা অনগ্রসর, যারা একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে পড়ে থাকে বা যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেদের একেবারে অবাঞ্ছিত মনে করে পড়ে থাকে, শত নির্যাতনের মধ্যে তারা কোনো প্রতিকার চাইতে পারে না সেই মানুষগুলোর ভেতরে আস্থা-বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা এবং তাদেরও যে নাগরিক অধিকার রয়েছে সেটা নিশ্চিত করা ও তাদের সহযোগিতা দেওয়া। যারা হেলপ ডেস্কে আসবেন সাহায্য চাইতে তাদের যদি আইনগত সহায়তা দিতে হয়; আমি প্রথম যখন সরকার গঠন করি তখন আমরা লিগ্যাল এইড কমিটি গঠন করে দেই। আর্থিক সমস্যা যাদের আছে তাদের জন্য আলাদা ফান্ড আমরা দিয়েছি। সেদিক থেকে তাদের কোনো অসুবিধা হবে না। লিগ্যাল এইড থেকেই তারা সব ধরনের সহযোগিতা বা বিচার চাইতে পারবে, বিচার পেতে পারবে। সে সুযোগটা আমাদের করে দেওয়া আছে। আইন এবং নীতিমালাও আমরা তৈরি করে দিয়েছি। আমাদের একেবারে তৃণমূল থেকে উন্নয়ন প্রয়োজন। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর থেকে সব সময় উন্নয়নটা একেবারে তৃণমূল থেকে আমরা শুরু করেছি। শুধুামাত্র শহরভিত্তিক বা রাজধানীভিত্তিক উন্নয়ন তা না। সর্বস্তরের মানুষ যেন উন্নয়নের ছোঁয়াটা পায় সেটা লক্ষ রেখে কিন্তু আমাদের সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
সে জন্য মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা পালন করেছি। মুজিববর্ষে আমাদের এটাই লক্ষ্য ছিল, যে কাজটা জাতির পিতা শুরু করেছিলেন—এ দেশে ভূমিহীন মানুষের মাঝে ভূমি বণ্টন এবং ঘর তৈরি করে দেওয়া। তিনি গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প দিয়ে এটা শুরু করেন। আমরা প্রথমবার যখন সরকারে আসি আশ্রয়ণ প্রকল্প-১ ও দ্বিতীয় আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর মাধ্যমে আমরা জাতির পিতার সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করে এগিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশে একটি মানুষও ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না, ঠিকানাবিহীন থাকবে না। প্রথমবার সরকারে এসে বলেছিলাম, কোনো কুঁড়ে ঘর থাকবে না। আমরা টিনের ঘর হলেও দেবো। দ্বিতীয়বার এসে আমরা সেমি-পাকা ঘর দিচ্ছি এবং উন্নত জীবন যাপন করতে পারে সেই ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। এর সুফল আমাদের সমগ্র দেশেই ছড়িয়ে যাবে। আমাদের উন্নয়নটা আরও গতিশীল হবে। মানুষ যখন থাকার জায়গা পায়, তখন তার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। সেটাই তাকে সুযোগ করে দেয় নিজের পায়ে দাঁড়ানোর, আত্মকর্মসংস্থান করার। তার ভেতরে আত্মবিশ্বাস এবং আস্থার সৃষ্টি হয়। মানুষের ভেতর ভালোবাসা-দরদও তৈরি হয়, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখতে সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ ও বক্তৃতা করেন। অতিরিক্ত আইজিপি ড.নুরুর রহমান অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পুলিশের দুটি মানবিক উদ্যোগ ‘সার্ভিস ডেস্ক’ এবং ভূমিহীনদের জন্য ঘর নির্মাণের উপর একটি অডিও-ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম, পীরগঞ্জ, রংপুর ও খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভার্চুয়ালি পুলিশ সদস্য এবং উপকারভোগীদের সঙ্গে মত বিনিময় করেন। অনুষ্ঠানটি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন্স, রাজারবাগ, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় এবং এর সাথে সকল থানা, পুলিশ রেঞ্জ এবং পুলিশ লাইন সংযুক্ত ছিল।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত
 
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
            