চট্টগ্রামের কালুরঘাট শিল্পাঞ্চলে তীব্র পানির সংকট সমস্যা নিরসনে সম্মিলিত প্রচেষ্টার আহ্বান
প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৩, ১০:০৩ | আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২২
বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে শিল্প দূষণ দ্রুত বাড়ছে। শিল্পবর্জ্যের ফলে দূষীত পানির পরিমাণ এতটাই ক্রমবর্ধমান, যা ভূপৃষ্ঠের বিশুদ্ধ পানির উৎসের জন্য তীব্র ঝুঁকির সৃষ্টি করছে। চট্টগ্রামে গত ৪০ বছরে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ২০ মিটার কমে গিয়েছে। এই তীব্র পানি সংকটের কারণে চট্টগ্রামের কালুরঘাট শিল্প এলাকা নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এই সমস্যা নিরসনে সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে ১৮ মার্চ, ২০২৩ তারিখে রেডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউ’তে ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড, ফরেন ইনভেস্টরস’ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই) এবং ওয়াটারএইড বাংলাদেশ’এর যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত; এক্সেলারেটিং চেঞ্জ: ডিসেন্ট্রালাইজিং দ্য কনভারসেশন অন ওয়াটার স্টুয়ার্ডশিপ; শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় এসব বিষয় উঠে আসে। গোলটেবিল আলোচনায় ওয়াটারএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহানসহ অনুষ্ঠানের মূল আলোচকদের মধ্যে ছিলেন জাভেদ আখতার ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা; এবং জাহাঙ্গীর সাদাত পরিচালক, এফআইসিসিআই, এবং চেয়ারম্যান, কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (কেইপিজেড)। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক এবং আইটিএন-বুয়েটের পরিচালক ড. তানভীর আহমেদ কালুরঘাট ভারী শিল্প এলাকার র্যাপিড সিচুয়েশন অ্যাসেসমেন্টের ফলাফল এবং প্রাসঙ্গিক সুপারিশ উপস্থাপন করেন। এছাড়াও আয়োজনে বিভিন্ন বিশিষ্ট শিল্প প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ এবং সেবা-ভিত্তিক সরকারি প্রতিষ্ঠানের সম্মানিত প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। মূল্যায়নে দেখা গেছে, চট্টগ্রামে শিল্প দূষণ – বিশেষত শিল্পবর্জ্যের ফলে পানি দূষণ – ক্রমশ বাড়ছে, যা ভূপৃষ্ঠের পানির উৎস সমূহের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে। ড. তানভীর আহমেদ পরিবেশ অধিদপ্তরকে পানির উত্সগুলি পুরোপুরি ধ্বংসের মুখে পৌঁছানোর আগেই শিল্প প্রতিষ্ঠান সমূহের উপর সতর্কতা নির্দেশনা বাড়ানোর সুপারিশ করেন। তিনি আরো যোগ করেন যে, তথ্যনির্ভর সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট শিল্প এলাকার একটি বিস্তারিত নিরীক্ষণ আবশ্যক। বক্তারা পানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং গুণগত মান ধরে রাখতে কালুরঘাটের শিল্প প্রতিষ্ঠান সমূহের মধ্যে আরো উন্নত সমন্বয় এবং ব্যবসায় স্বার্থের উর্দ্ধে উঠে সামষ্ঠিক কল্যাণ বিবেচনার উপর জোর দেন। সেই সাথে, সংশ্লিষ্ট খাতের অংশীজনেরা পানি ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন কার্যকরী পন্থা ও কৌশল নিয়েও আলোচনা করেন। ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, “বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান সমূহ নিজেদের শিল্প কার্যক্রমে পানি ব্যবস্থাপনার কার্যকরী উদাহরণ সৃষ্টি করছে। আমাদের সকলকে এই উদাহরণগুলো থেকে শিক্ষা নিতে হবে। এটি প্রমাণ-নির্ভর অ্যাডভোকেসি করতে এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ৬ অর্জনে বেসরকারি খাতের অবদান স্বীকার করে সরকারের সাথে সংলাপের পথ তৈরিতে সহায়তা করবে। সেই সাথে, এ ধরণের শিল্প-অংশীদারিত্ব মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠান সমূহের জন্য পানি ব্যবস্থাপনার টেকসই ও উন্নত কৌশল শেখারও সুযোগ তৈরি করবে”।
ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাভেদ আখতার বলেন, “বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম বিভিন্ন শিল্পের প্রাণকেন্দ্র, যেগুলো পানির উপর বহুলাংশে নির্ভর করে। আমাদের পণ্যের উৎপাদন এবং ব্যবহারের জন্যও চাই পানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ। তাই একটি সংলাপ এবং প্ল্যাটফর্ম চালুর জন্য চট্টগ্রাম ও কালুরঘাটের ভারী শিল্প এলাকাকে বেছে নিয়েছে ইউবিএল, এফআইসিসিআই এবং ওয়াটারএইড, যার মাধ্যমে আমাদের যৌথভাবে পরিকল্পনা এবং কাজ করা আরো সহজ হয়ে উঠবে।
জাহাঙ্গীর সাদাত, পরিচালক, এফআইসিসিআই, এবং চেয়ারম্যান, কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (কেইপিজেড), বলেন, “এফআইসিসিআই’এর সদস্য প্রতিষ্ঠান এবং চট্টগ্রাম ভিত্তিক অন্যান্য স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান সমূহ পানি সম্পদ রক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রতিষ্ঠান সমূহ তাদের কারখানা এবং সরবরাহ কার্যে উদ্ভাবনী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে, যা এই শিল্পের জন্য সেরা অনুশীলন হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। আমি আশাবাদী, যে এই গোলটেবিল সংলাপ দেশের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সমূহের জন্য টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা নিশ্চিতের পথে একটি মাইলফলক হবে”।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত