গাজার সমর্থনে জার্মানিতে ব্যাপক পুলিশি উপস্থিতিতে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ
প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:৩৯ | আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬:০১
গাজায় আটকে পড়া বেসামরিক নাগরিকদের সমর্থনে জার্মানিতে ব্যাপক পুলিশি উপস্থিতিতে বিক্ষোভ করেছেন হাজারো মানুষ৷ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শনিবার প্রত্যাশার চেয়ে বেশি মানুষ মিছিলে যোগ দিলেও পুরো আয়োজনটি মোটামুটি শান্তিপূর্ণ ছিল৷
বিশ্বের আরও অনেক জায়গার মতো, গাজায় আটকে পড়া ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে শনিবার জার্মানির রাস্তায় নেমেছেন হাজার হাজার মানুষ৷ গাজায় সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন তারা৷
হামাস নিয়ন্ত্রণাধীন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে গাজা উপত্যকায় হামাসকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বিমান হামলায় চার হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন৷
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে সন্ত্রাসী হামলা শুরু করে হামাস৷ এই হামলায় ইসরায়েলের এক হাজার ৪০০ জনেরও বেশি বেসামরিক মানুষ নিহত হন৷ এছাড়াও অন্তত দুইশো মানুষকে জিম্মি করেছে জঙ্গি গোষ্ঠীটি৷ হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইসরায়েলসহ আরো কয়েকটি দেশ৷
হামাসকে ভেঙে দেয়ার লক্ষ্যে গাজায় সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করেছে ইসরায়েল সরকার৷ এতে গাজায় বসবাসরত ২২ লাখ মানুষ মানবিক সংকটে পড়েছেন৷
যা ঘটেছে জার্মানিতে
পুলিশ জানিয়েছে, জার্মানির কোলন, ফ্রাঙ্কফুর্ট, হানোফার, কার্লসরুয়ে, ম্যুনস্টার এবং স্টুটগার্টে ফিলিস্তিনপন্থিরা বিক্ষোভ করেছেন৷ তবে সবচেয়ে বড় জমায়েতটি হয়েছে ডুসেলডর্ফ শহরে৷ ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে অন্তত সাত হাজার মানুষ জড়ো হয়েছেন৷ ‘ফিলিস্তিনে শান্তি, ন্যায়বিচার এবং মানবিক মর্যাদার প্রতিষ্ঠার' দাবি জানায় তারা৷
বেশ কয়েকটি শহরের পুলিশ জানিয়েছে, আয়োজকদের প্রত্যাশার চেয়েও বেশিসংখ্যক মানুষ যোগ দিয়েছেন বিক্ষোভে৷ তবে সবকটি আয়োজন মোটামুটি শান্তিপূর্ণ ছিল৷ যেসব শহরে বিক্ষোভ হয়েছে, সেসব শহরে পুলিশের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো৷
ম্যুনস্টারের বিক্ষোভ মিছিলে প্রায় হাজারখানেক ফিলিস্তিনপন্থি অংশ নেন৷ এর পাশাপাশি আরও সাতশ মানুষ জড়ো হয়েছিলেন, যারা ‘ইহুদি বিদ্বেষ' প্রতিকারের দাবি জানান৷
পুলিশ জানিয়েছে, দুই পক্ষের মধ্যে কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি৷ তবে ‘বেআইনি স্লোগান' থামাতে অস্বীকৃতি জানানোয় দুই ফিলিস্তিনিপন্থি বিক্ষোভকারীকে সাময়িক আটক করা হয়েছিল৷ পরে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে৷
সহিংসতার আশঙ্কায় বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করেছে বার্লিন
সেন্ট্রাল বার্লিনে রোববার একটি মিছিল হওয়ার কথা ছিল৷ তবে ইহুদি বিরোধী স্লোগান, সহিংসতা, সংঘর্ষের আশঙ্কায় পুলিশ সেটি বাতিল করেছে৷
জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেজার শুক্রবার জানিয়েছেন, জার্মানিতে অবস্থানরত প্রতিটি মানুষের তাদের নিজস্ব চিন্তা স্বাধীনভাবে প্রকাশ করার অধিকার রয়েছে৷ তবে তিনি সতর্ক করে আরো বলেছেন, ‘এখানে একটি স্পষ্টত রেড লাইন রয়েছে৷ ইহুদিবিরোধী বা ইসরায়েলবিরোধী আন্দোলনের জন্য কোনও সহনশীলতা নেই এবং সহিংসতার জন্য কোনও সহনশীলতা নেই৷’
বার্লিন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ ধরনের আয়োজন আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত নিষিদ্ধ থাকবে৷ নিষেধাজ্ঞার পরেও কিছু ফিলিস্তিনিপন্থি বিক্ষোভকারী বার্লিনের রাস্তায় নেমে আসেন৷ ফলে পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয় এবং কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়৷
যুক্তরাজ্যেও ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ হয়েছে৷ শনিবার সেন্ট্রাল লন্ডনে অন্তত এক লাখ মানুষ বিক্ষোভ করেন৷ ফিলিস্তিনি পতাকা উঁচিয়ে এবং ‘মুক্ত ফিলিস্তিন' বলে স্লোগান দিতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা৷ গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাতে বিক্ষোভকারীরা দেশটির প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের বাড়ির দিকেও এগিয়ে যায়৷
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ পরিস্থিতি
পশ্চিম তীরে জেনিনের একটি মসজিদে রোববার হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল৷ ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ওই মসজিদটিকে ‘আসন্ন সন্ত্রাসী হামলার' পরিকল্পনার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছিল৷ এদিকে, গাজাভিত্তিক একজন সাংবাদিক ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, গাজাবাসী যুদ্ধবিরতি চায় এবং তাদের আরও সাহায্য প্রয়োজন৷
রোববার ভোরে অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল৷ এতে দুই ফিলিস্তিনি নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের চিকিৎসকেরা৷
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্টের অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা জানিয়েছে, ভূখণ্ডটিতে ফিলিস্তিনি জঙ্গিদের শক্ত ঘাঁটি জেনিনের শরণার্থী শিবিরের আল-আনসার মসজিদের কাছে হামলাটি হয়েছিল৷ এ বছরের শুরুর দিকে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের কেন্দ্রে ছিল এই জেনিন৷
ইসরায়েল জানিয়েছে, বিমান হামলায় সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত হামাস এবং ইসলামিক জিহাদের ‘সন্ত্রাসীরা' নিহত হয়েছে৷
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, আল-আনসার মসজিদকে সন্ত্রাসীরা হামলা পরিকল্পনার একটি কমান্ড সেন্টার এবং মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের একটি ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করে আসছিল৷
গাজায় ভারতের সাহায্য
এদিকে, গাজায় আটকেপড়া মানুষের জন্য সাড়ে ৩৮ টন ত্রাণ পাঠিয়েছে ভারত৷ দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে৷
ত্রাণ নিয়ে ভারতীয় বিমান বাহিনীর পরিবহন বিমান মিসরের এল-আরিশ বিমানবন্দর যাওয়ার আগে ছবি পোস্ট করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি৷
তিনি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লিখেছেন, ‘সাহায্যের মধ্যে রয়েছে প্রয়োজনীয় জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, অস্ত্রোপচারের জিনিসপত্র, তাঁবু, স্লিপিং ব্যাগ, টারপলিন, স্যানিটারি ইউটিলিটি, পানি পরিশোধনকারী ওষুধসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম৷’
ই
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত