গাছ লাগানো এবং কাটার ক্ষেত্রে কেন আইন নয়, জানতে চেয়ে হাইকোর্টে রুল

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৬ মে ২০২৪, ১৫:৩৬ |  আপডেট  : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৪২

গাছ লাগানো এবং গাছ কাটার ক্ষেত্রে কেন আইন ও নীতিমালা তৈরি করা হবে না এবং দাবদাহ নিয়ন্ত্রণে আলাদা একটি কমিটি কেন গঠন করা হবে না — জানতে চেয়ে আলাদা আলাদা রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

সোমবার (০৬ মে) বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ রুল দুটি জারি করেন। একই সঙ্গে দাবদাহ নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয় রুলে।

রিট দুটিতে বলা হয়েছে, ঢাকা শহরে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় গাছের পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে এবং সাম্প্রতিক তাপমাত্রা বাড়ায় মানুষের জীবনযাত্রা আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। সারা দেশে সামাজিক বনায়ন চুক্তিতে লাগানো গাছ কাটার কারণে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। আদালতে আজ রিট করেন অ্যাডভোকেট তানভীর আহমেদ ও অ্যাডভোকেট রওশন আলী।

এদিকে, সকালে আবহাওয়াবিদ মো. আবদুর রহমান খান জানান, কয়েক সপ্তাহের দাবদাহের পর বৃষ্টিতে দেশের অধিকাংশ অঞ্চলের আবহাওয়া শীতল হয়েছে। সারা দেশে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে চলতি মাসেই ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে।

এর আগে, রোববার (৫ মে) মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় তাপপ্রবাহের মধ্যেও দেশে গাছ কাটা অব্যাহত থাকায় পরিবেশ রক্ষায় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে তা বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন।

মনজিল মোরসেদ বলেন, সুস্থভাবে বাঁচার জন্য রাজধানীতে যে পরিমাণ গাছপালা থাকা দরকার, তা দিন দিন কমছে এবং সম্প্রতি তাপমাত্রা বাড়ার কারণে মানুষের জীবনযাত্রা আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। এতে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।

রিটে যেসব নির্দেশনা চাওয়া হয়
১. গাছ কাটা নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়কে ৭ দিনের মধ্যে পরিবেশবাদী, পরিবেশবিজ্ঞানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপকের সমন্বয়ে সাত সদস্যের কমিটি গঠন, যারা প্রয়োজনে ঢাকা শহরে গাছ কাটার অনুমতি দেবেন।

২. গাছ কাটা বন্ধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সাত দিনের মধ্যে একটি সার্কুলার জারি করে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে জেলা পরিবেশ অফিসার, সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ, সমাজকর্মী, পরিবেশবাদী, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি/সেক্রেটারি এবং সিভিল সার্জনের সমন্বয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশ প্রদান করবেন, যাদের অনুমতি ছাড়া গাছ কাটা যাবে না।

৩. গাছ কাটা বন্ধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৭ দিনের মধ্যে একটি সার্কুলার জারি করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে কলেজের অধ্যক্ষ, সমাজকর্মী, পরিবেশবাদী, সমাজকল্যাণ অফিসার, অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অব ল্যান্ড এবং এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর সমন্বয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেবে, যাদের অনুমতি ছাড়া গাছ কাটা যাবে না।

৪. কমিটি গঠন হওয়ার আগ পর্যন্ত সব বিবাদী নিজ নিজ এলাকায় যাতে কোনো গাছ কাটা না হয়, সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে এবং দুসপ্তাহের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।

৫. গাছ কাটা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, ঢাকা শহরসহ অন্যান্য জেলা এবং উপজেলা শহরে গাছ কাটা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশনা দেয়া হবে না এবং সামাজিক বনায়ন বিধিমালা ২০০৪-এর বিধানে গাছ লাগানোর চুক্তিভুক্ত পক্ষকে অর্থ দেয়ার বিধান সংযুক্ত করার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না–সে মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে।

এইচআরপিবির পক্ষে রিট আবেদনকারীরা হলেন: অ্যাডভোকেট মো. ছারওয়ার আহাদ চৌধুরী, অ্যাডভোকেট মো. এখলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া ও অ্যাডভোকেট রিপন বাড়ৈ।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব, পরিবেশ বিভাগের মহাপরিচালক, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়র, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী, প্রধান বন সংরক্ষক, সড়ক-মহাসড়ক বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী ও বাংলাদেশ পুলিশ মহাপরিদর্শককে রিট আবেদনে বিবাদী করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত