গাইবান্ধার উপ-নির্বাচন বন্ধ করা হঠকারী সিদ্ধান্ত ছিল না : সিইসি
প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২২, ২০:৫৮ | আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০৫
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, গাইবান্ধার উপ-নির্বাচন বন্ধ করা কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত ছিল না। নির্বাচন কমিশন নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে এই নির্বাচন বন্ধ করেছে।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন চিন্তা-ভাবনা করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরিস্থিতি নিবিড় পর্যবেক্ষণ করেই নির্বাচন বন্ধ করা হয়েছে। যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা কমিশন নিয়েছে। কমিশন এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার কিন্তু এক নয়।’
আজ নির্বাচন কমিশন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সিইসি বলেন, ‘সিইসি কোনো সিদ্ধান্ত এককভাবে নিতে পারে না। আমরা চার-পাঁচজন সদস্য একসঙ্গে বসে যে সিদ্ধান্ত নিই, সেটা সমন্বিত সিদ্ধান্ত। সেটা আরও সঠিক ও প্রাজ্ঞ হওয়ার কথা। সিইসি এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। আমরা নিবিড়ভাবে প্রত্যক্ষ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সিইসি বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর যতগুলো নির্বাচন করেছি সবগুলো নির্বাচন ইভিএম ব্যবহার করে অত্যন্ত সফলভাবে শেষ করতে সক্ষম হয়েছি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুধী সমাজের সঙ্গে সংলাপ চলাকালে গোপন ভোট-কক্ষে ভোটারকে ভোট প্রদানের সুযোগ না দিয়ে অবৈধ প্রবেশকারীর ভোট দেয়ার যে অভিযোগ পেয়েছিলাম তা বন্ধ করার জন্য কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন ও ঝিনাইদহ পৌরসভা নির্বাচনে প্রত্যেক ভোট কেন্দ্রের প্রতিটি কক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘উল্লেখিত সব নির্বাচনের ক্ষেত্রে সিসিটিভি স্থাপনের ফলে এই অপরাধ একেবারেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছিল। তারই আলোকে এবং গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনের গুরুত্বের কারণে এখানেও ইভিএমে ভোটগ্রহণ ও প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের প্রতিটি ভোট কক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। গতকাল সকাল আটটায় যথারীতি ভোট শুরু হয়। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, আগারগাঁওয়ে স্থাপিত কন্ট্রোল রুমে আমিসহ অন্যান্য কমিশনাররা, দায়িত্ব পালনকারী সচিবালয়ের কর্মকর্তারা ও কারিগরি সহায়তাকারী ব্যক্তিগণ।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘মিডিয়ার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ভোট শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যে তিনটি কেন্দ্রে দেখতে পাই ভোট কক্ষে প্রার্থীর পুরুষ এজেন্টরা একই রকম গেঞ্জি [বুকে ও পিঠে প্রার্থীর মার্কা ইত্যাদি প্রিন্ট করা] পরে আছেন এবং নারী এজেন্টরা একই রকম শাড়ি পরা, যা আচরণ বিধিমালার ১০(ঙ) ভঙ্গের মধ্যে পড়ে। এসব এজেন্ট ছাড়াও আরও অনেক অবৈধ লোকজন ভোটকক্ষে অবস্থান করে ভোটাদের ভোট দিতে প্রভাবিত করছেন। ভোটাদের কন্ট্রোল ইউনিটে আঙুলের ছাপ দেয়ার পরপরই এজেন্টরা গোপন ভোটকক্ষে প্রবেশ করে ভোটারকে ভোট দানের সুযোগ না দিয়ে নিজেই ভোট দিয়ে দিচ্ছেন, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের মধ্যে কেউ কেউ একই কাজ করছেন।’
তিনি বলেন, ‘তখন কমিশন থেকে ফোন দিয়ে প্রিজাইডিং অফিসারদের ভোট কক্ষের শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু ভোট কক্ষের শৃংখলা ফিরিয়ে আনার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ তাদের নিতে দেখা যায়নি। তখন ওই তিনটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করার নির্দেশনা কমিশন থেকে প্রদান করা হয়। একের পর এক দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ৫০টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে দেখা হয়। প্রতিটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের অবস্থা একই রকম দেখা যায়। ইতোমধ্যে রিটার্নিং অফিসার একটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেন। আমি এবং বেগম রাশেদা সুলতানা রিটার্নিং অফিসার, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলি। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয় নাই।’
সিইসি বলেন, অন্যান্য কেন্দ্রগুলোতেও সিসিটিভি দেখার সময় পেলে দেখা যেত যে ওই কেন্দ্রগুলোতেও একই অবস্থা। তাই কমিশন মনে করে যে এই ধরনের একটি আইন বহির্ভূত ভোট প্রদান বা গ্রহণ কোনো ভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাই কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আড়াইটায় গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
তিনি বলেন, অনিয়মগুলো তদন্ত করে আগামী ৭ দিনের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দিতে কমিটি করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পরে গাইবান্ধা-৫ আসনের পরবর্তী নির্বাচন বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত