কোচিংয়ে জড়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও বাতিল করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৬:১৩ |  আপডেট  : ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০

দেশের নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা উন্নয়নে নতুন পরিকল্পনা করছে সরকার। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শিগগিরই সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। আর কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনও শিক্ষক কোচিংয়ে জড়িত হলে প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতার সরকারি অংশ (এমপিও) বন্ধ করে দেওয়া হবে। মাঠ পর্যায়ে মনিটরিং করে নেওয়া হবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনবল সবচেয়ে বেশি বিকেন্দ্রীকরণ করা। ৩০ হাজার মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ৭ হাজার সরকারি। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই বেসরকারি। আমরা টাকা দেই কিন্তু ব্যবস্থাপনার মধ্যে আমরা হাত ঢোকাতে পারি না। কিছু করলেই মামলা করা হয়। এখানে টেকনিক্যাল প্রবলেম (সমস্যা) আছে। টাকা সরকারের, দায় মন্ত্রণালয়ের, দোষ মন্ত্রণালয়ের অথচ পরিচালনায় সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। বাস্তবতা হচ্ছে—শিক্ষা মন্ত্রণালয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ডিরেক্ট পলিসি ইমপোজ করতে পারে না, যতক্ষণ তারা নিজেরা না করে। এখানে কাঠামোগত পরিবর্তন প্রয়োজন। যেসব প্রতিষ্ঠানের এমপিও প্রয়োজন নেই সেসব প্রতিষ্ঠানে তা বন্ধ করে দিতে হবে। আর যাদের এমপিও প্রয়োজন তাদের তা দিতে হবে।’

দেশে বর্তমানে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২২ হাজার ১৭৪টি। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বর্তমান সরকারের সময়ে গত ১৫ বছরে নতুন করে এমপিওভুক্ত হয়েছে ৬ হাজার ৮০৭টি। এসবের মধ্যে রয়েছে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা। এছাড়া নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রতি মাসে বরাদ্দ দিচ্ছে সরকার। অথচ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় ব্যবস্থাপনা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামের মুখপাত্র মো. নজরুল ইসলাম রনি জানান, বর্তমানে দেশে অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি পাওয়া নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে রয়েছে ৫ হাজার ২৪২টি। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নতুন করে এমপিও পেয়েছে ২ হাজার ৭৩৭টি। এছাড়া অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতির বাইরে রয়েছে আর ২ হাজারেরও বেশি নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বেসরকারি এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন এক লাখের মতো।

রাজধানীসহ মেট্রোপলিটন সিটির মধ্যে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে সচ্ছল তাদের এমপিও বন্ধ করে যাদের জরুরি প্রয়োজন তাদের এমপিওভুক্ত করার উদ্যোগ নেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিষয় খতিয়ে দেখতেও ব্যবস্থা নেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে সচ্ছল তাদের এমপিও আমরা কেন রাখবো। যেসব প্রতিষ্ঠানের এটা জরুরি তাদের এমপিওভুক্ত করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত থাকতে চায় না, অধিক লাভের কারণে। সে বিষয়টিও ভাবা জরুরি।  

 শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি হলে প্রতিষ্ঠান-প্রধানের এমপিও বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও দুর্নীতি কমছে না। আর এই দুর্নীতি বন্ধ করতে গেলে আদালতে মামলা করে সময়ক্ষেপণ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-প্রধান এবং ম্যানেজিং কমিটি। আর সে কারণে দুর্নীতি প্রমাণ হলেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও বন্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সার্বিক দায়িত্ব থাকে ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং কমিটির হাতে। সরকারি অর্থে প্রতিষ্ঠানের প্রায় সবটাই পরিচালিত হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। ফলে প্রতিষ্ঠানের এমপিও বন্ধ করলে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

 শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না করলে এমপিও স্থগিত করা হয়। এই পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয় সেজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করার উদ্যোগ শিগগিরই নেওয়া হবে। আর যেসব প্রতিষ্ঠান নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে গাফিলতি দেখাবে, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

সান

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত