কারাগারে ফাঁসির আসামিদের সুযোগ-সুবিধা জানাতে হাইকোর্টের নির্দেশ

  গ্রামনগর বার্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২১, ১৫:৩৭ |  আপডেট  : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:১৭

বাংলাদেশের কারাগারগুলোতে থাকা মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত ১ হাজার ৯৮৭ আসামির সুযোগ-সুবিধার একটি লিখিত প্রতিবেদন আগামী ১৪ নভেম্বরের মধ্যে দাখিলের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এম, ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত একটি  হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ আজ এ আদেশ দেন। এর আগে মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিদের নিয়ে কারা অধিদফতর থেকে পাঠানো তথ্য আদালতে জানান আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

এডভোকেট শিশির মনির বলেন, দেশের কারাগারগুলোতে মৃত্যুদন্ডাদেশ মাথায় নিয়ে কনডেম সেলে বন্দি রয়েছে মোট এক হাজার ৯৮৭ জন কয়েদি। এরমধ্যে পুরুষ কয়েদি রয়েছে এক হাজার ৯৩৩ এবং নারী কয়েদি ৫৪ জন। তবে দেশে মোট কনডেম সেলের সংখ্যা দুই হাজার ৫৯৯টি। ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ হিসাব দিয়েছে কারা অধিদফতর।

কারাগারগুলোতে মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত কনডেম সেলে থাকা সকল বন্দির তথ্য চেয়ে গত ২০ সেপ্টেম্বর আদেশ দেন হাইকোর্ট।  আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন এডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।গত ৩ সেপ্টেম্বর মামলা চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হওয়ার আগে মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিকে কনডেম সেলে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।

চট্টগ্রাম কারাগারে কনডেম সেলে থাকা জিল্লুর রহমানসহ মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত তিন বন্দির পক্ষে আইনজীবী শিশির মনির এ রিট দায়ের করেন।রিট আবেদনকারী হলেন, চট্টগ্রাম কারাগারের কনডেম সেলে থাকা সাতকানিয়ার জিল্লুর রহমান, সিলেট কারাগারে থাকা সুনামগঞ্জের আব্দুর বশির ও কুমিল্লা কারাগারে থাকা খাগড়াছড়ির শাহ আলম। মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত এ তিন আসামির আপিল হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে।

রিট আবেদনে মৃত্যুদন্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে আবদ্ধ রাখা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এ মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে। এ রুল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় আবেদনকারীদের কনডেম সেল থেকে স্বাভাবিক সেলে স্থানান্তরের আবেদন করা হয়েছে। 

একইসঙ্গে দেশের সব জেলের কনডেম সেলে থাকা সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের রাখার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে (সুযোগ, সুবিধা) কারা মহাপরিদর্শককে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।রিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা বিভাগের সচিব, আইন সচিব, আইজিপি, আইজি প্রিজন্স, চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লার সিনিয়র জেল সুপারকে বিবাদী (রেসপনডেন্ট) করা হয়।

আইনজীবী শিশির মনির বলেন, বিচারিক আদালতে মৃত্যুদন্ডাদেশ ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক সাজা কার্যকর করার আইনগত কোনো বিধান নেই। মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকর করতে কয়েকটি আবশ্যকীয় আইনগত ধাপ অতিক্রম করতে হয়। প্রথমত, ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৭৪ ধারামতে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন নিতে হবে। একইসঙ্গে ফৌজদারী কার্যবিধির ৪১০ ধারা অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগে আপিল দায়েরের বিধান রয়েছে। দ্বিতীয়ত, হাইকোর্ট বিভাগ মৃত্যুদন্ড বহাল রাখলে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি সাংবিধানিক অধিকারবলে আপিল বিভাগে সরাসরি আপিল দায়ের করতে পারেন। তৃতীয়ত, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০৫ অনুযায়ী আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের আইনগত সুযোগ রয়েছে। সর্বোপরি, মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামী সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৯ এর অধীন রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। রাষ্ট্রপতি ওই ক্ষমার আবেদন নামঞ্জুর করলে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার আইনগত বৈধতা লাভ করে।

কিন্তু বাংলাদেশে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদন্ড ঘোষণার পরই সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে নির্জন কনডেম সেলে মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে বন্দি রাখা হয়। দেশের কারাগারগুলোতে ২ হাজার ৫ জন ফাঁসির আসামী কনডেম সেলে বন্দি আছেন।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত