কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন নেমেছে ২৫ মেগাওয়াটে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ মে ২০২৩, ১১:৫২ |  আপডেট  : ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫১

[কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র] ফাইল ছবি

অনাবৃষ্টির কারণে দ্রুত কমছে কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর। ফলে কাপ্তাই হ্রদের উপর নির্ভরশীল কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কমেছে উৎপাদন। ১৪২ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতার কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে শনিবার [২০ মে] উৎপাদন হয়েছে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে শনিবার চালু ছিল ৪৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এক নম্বর ইউনিটটি।

এদিকে, কাপ্তাই হ্রদ থেকে পর্যাপ্ত পানি না ছাড়ার কারণে জোয়ারের সময় কর্ণফুলী হয়ে হালদা নদীতে ঢুকছে সাগরের লোনা পানি। এসব লোনা পানি পরিশোধনের পরও পাইপলাইন দিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসার নগরীর গ্রাহকের কাছে। পানিতে অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে ওয়াসার পানি এখনও মুখে নেওয়া যাচ্ছে না।

কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আবদুজ্জাহের বলেন, ‘কাপ্তাই হ্রদে পানির স্তর কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে। শনিবার রুলকার্ভ অনুযায়ী কাপ্তাই হ্রদে পানির উচ্চতা ছিল ৭৩.৬৮ এমএসএল  (মেইন সি লেভেল)। অথচ এ সময়ে পানির উচ্চতা থাকার কথা ছিল ৮২ এমএসএল। বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ২৫ মেগাওয়াট। কাপ্তাই হ্রদে পানি কম থাকায় সব ইউনিট সচল থাকার পরও পুরোপুরি উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কেননা বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনে গেলে দ্রুত কাপ্তাই হ্রদের পানি শেষ হয়ে যাবে। যার কারণে একটি ইউনিট সচল রেখে অল্প পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বৃষ্টি খুবই জরুরি। আগামী কদিন বৃষ্টি না হলে কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।’

চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক [এমডি] এ কে এম ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘বৃষ্টি না হওয়ায় কাপ্তাই হ্রদে পানির স্তর কমে গেছে। এ কারণে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পর্যাপ্ত পানি ছাড়া হচ্ছে না কর্ণফুলীতে। এতে নদীর উজানে মিঠা পানির প্রবাহ কমে গেছে। কর্ণফুলী হয়ে হালদা নদীতে ঢুকছে সাগরের লোনা পানি। পানি পরিশোধনের পরও লবণ থেকে যাচ্ছে।’ 

চট্টগ্রাম ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘বৃষ্টি না হওয়ায় এবং কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পর্যাপ্ত পানি না ছাড়ার কারণে জোয়ারের সময় কর্ণফুলী নদী হয়ে হালদায় ঢুকছে লোনা পানি। এতে দৈনিক ৯ কোটি লিটার উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন কালুরঘাট মোহরা পানি শোধনাগার ও একই উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন মদুনাঘাট শেখ রাসেল পানি শোধনাগার প্রকল্পে উৎপাদন কমেছে। অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে জোয়ারের সময় প্ল্যান দুটি বন্ধ রাখতে হচ্ছে। দৈনিক ১৮ কোটি লিটার উৎপাদন ক্ষমতার এ দুটি প্রকল্পে শনিবার প্রায় ১২ কোটি লিটার পানি উত্তোলন সম্ভব হবে।’  

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা গবেষক ড. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, ‘কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়েছে। তবে জোয়ারের সময় লবণাক্ততার পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। জলবায়ু পরিবর্তন, দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়া এবং কাপ্তাই হ্রদে পানির স্তর কমে যাওয়ায় কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে লবণাক্ততা বেড়েছে। তবে বৃষ্টি হলে উজানে পাহাড়ি ঢল নামবে। এতে সমস্যা কেটে যাবে।’

কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্র জানায়, কোন জ্বালানি ছাড়াই শুধু কাপ্তাই হ্রদে পানি ব্যবহার করে দেশের সবচেয়ে কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতি ইউনিটে খরচ পড়ে মাত্র ৩৫ পয়সা। পাঁচটি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা ২৪২ মেগাওয়াট। এর মধ্যে এক নম্বর ইউনিটে ৪৬, দুই নম্বর ইউনিটে ৪৬, তিন নম্বর ইউনিটে ৫০, চার নম্বর ইউনিটে ৫০ ও পাঁচ নম্বর ইউনিটে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা রয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৬০ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী নদীর ওপর বাঁধ দেওয়া হয়। এ বাঁধের ফলে ২৫৬ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিশাল জলাধার সৃষ্টি হয়। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ মানবসৃষ্ট হ্রদ।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত