কাউনিয়া জংশন স্টেশনে উন্নয়ন কাজে নানা অনিয়মের অভিযোগ

  সারওয়ার আলম মুকুল

প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৩, ১৬:০১ |  আপডেট  : ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:৪৯

বাংলাদেশ রেলওয়ে একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। ১৫ নভেম্বর ১৮৬২ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে এর পথ চলা শুরু। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেখানে দাঁড়িয়ে কাউনিয়াবাসির উদ্দেশ্যে ভাষন দিয়ে ছিলেন সেই স্থানটির উন্নয়নের কাজে হচ্ছে নানা অনিয়ম। 

রেলওয়ে উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কাউনিয়া জংশন স্টেশন প্লাটফর্মের টার্মিনাল নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতি, নিয়ম বহির্ভূত কাজ , অব্যবস্থাপনা, কাজের ধীরগতির অভিযোগ উঠেছে। ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসি।

সরেজমিনে কাউনিয়া জংশন স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে যাত্রীদের বহিরাগমন ও গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য অত্যাধুনিক টার্মিনালের নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে। সেই কাজে ব্যাপক অনিয়ম লক্ষ্য করা গেছে। দেখা গেছে, শিডিউল অনুযায়ী যে মানের ও পরিমাণে পাথর, বালি ও সিমেন্ট ব্যবহারের কথা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সেই মানের ও পরিমানে সিমেন্ট না দিয়ে অধিক বালি ও মানহীন ইট পাথর ব্যবহারের পাশাপাশি ভিটি বালুর পরিবর্তে কাচা মাটি ব্যবহার করছেন। এছাড়াও প্লাটফর্মের সলিং ঢালাইয়ে যে পরিমান রড ও পাথর ব্যবহার করার কথা তাতেও রয়েছে অনিয়ম। সলিংয়ে যে ইট বিছানো হয়েছে সেই ইট গুলো নিম্নমানের। 

স্টেশন এলাকার বাসিন্দা আতিয়ার রহমান, হালিম ও অরেঞ্জ বলেন আধুনিক রেল স্টেশনের বহিরাগমন প্লাটফর্মের নির্মানাধীন কাজে নিন্মমানের ইট, পাথর বালি এবং কম সিমেন্ট দিয়ে করা হচ্ছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ করার সময় রেলের কর্মকর্তা থাকার কথা থাকলেও কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী উপস্থিত থাকেন না। কাজের নানা অনিয়ম দেখে এলাকাবাসি বেশ কয়েকবার অভিযোগ দিয়ে কোন কাজ না হওয়া তারা একতাবদ্ধ হয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়ে কাউনিয়া স্টেশন মাস্টার মোঃ হুসনে মোবারককে অবহিত করেন। স্টেশন মাস্টার জানান, শুনেছি প্রায় ৭৮ লাখ টাকা ব্যায়ে কাজ হচ্ছে। এই কাজ দেখা শোনার দায়িত্বে লালমনিরহাট আইডাব্লিউবি। কোন ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠান কাজ করছে বা কিভাবে করবে এসব তথ্য তার কাছে নেই। কাজ শেষ করে হ্যান্ডওভার করলে তখন আমরা কাজ বুঝে নিবো। কাজটি দেখা শোনার দায়িত্ব সম্পুর্ণ আলাদা ডিপার্টমেন্টের। 

এ বিষয়ে আপনারা লালমনিরহাট জোনের নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে যোগাযোগ করেন। লালমনিরহাট জোনের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন-উর-রশিদ জানান অভিযোগ পেয়েছি, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠিানকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী কাজ না হলে ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে। কাজের স্টিমেট ও তথ্য চাইলে তিনি তা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করে বলেন উপরের মানা আছে। লালমনিরহাট জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান ৭৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকা ব্যায়ে মেসার্স সোহনা এন্টারপ্রাইজ কাজটি করছে। স্টিমেট অনুযায়ী কাজ না হলে এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিবো।

ঢালাইকৃত স্লাবগুলো বুয়েটের ল্যাব দ্বারা পরীক্ষা করার পরেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ফাইনাল বিল দেয়া হবে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার বাবু মিয়া জানান 'স্টিমেট অনুযায়ী কাজ করছি। ঠিকাদার রেলমন্ত্রীর ভাতিজা হয় এ বিষয়ে নিউজ করে কোন লাভ নাই। মেসার্স সোহনা এন্টারপ্রাইজের মোঃ সাজু মিয়া জানান আমি দলীয় কাজে ঢাকায় আছি এ বিষয়ে পরে কথ হবে। আপনারা যা পরেন লেখেন। কাজ দেখার দায়িত্ব রেলে আপনারা দেখার কে ? রেলের কাজ এমনই হয়, সবাইকে ম্যানেজ করে কাজ করছি।'

দেশে একের পর এক রেলওয়ের উন্নয়নের প্রকল্প হচ্ছে। কিন্তুসেই সাথে উন্নয়ন কাজে বাড়ছে দুর্নীতি। আড়ালে পাল্লা দিয়ে মোটা-তাজা হচ্ছে ঠিকাদারসহ কতিপয় কর্তাব্যাক্তি। কাজের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।  ঠিকাদারের কাছে এ যেন অসহায় আত্মসমর্পণ। এলাকাবাসি দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে দায়িদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করে স্টিমেট অনুযায়ী কাজ করার দাবী জানান। 

 

সান

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত