কাউনিয়া গ্রামীন ঐতিহ্য কলা গাছের বাকল দিয়ে মাছ ধরা দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে
প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:১৫ | আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৫
মৎস্য মারিব খাইব সুখে, কবির সেই বিখ্যাত কবিতার বাণী গ্রাম বাংলায় এখন আর শোনা যায় না। সেই সাথে কাউনিয়া উপজেলায় দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য কলা গাছের বাকল দিয়ে মাছ ধরা।
সরেজমিনে তিস্তা নদী এলাকাসহ বিভিন্ন জলাশয় ঘুরে জানা গেছে একটা সময় ছিল যখন গ্রাম-বাংলায় কলার বাকল দিয়ে ভেলা বানিয়ে মাছ শিকারের দৃশ্যটি বেশ চিরচেনা। তবে কালের বিবর্তনে কলার বাকল দিয়ে মাছ শিকারের দৃশ্য এখন খুব একটা চোখে পড়ে না। তিস্তা,মানাস ও বুড়াইল নদীসহ গ্রামের প্রাকৃতিক জলাশয় গুলোতে ২০-২৫ বছর আগেও বছর জুড়েই কলা গাছের বাকল দিয়ে মাছ ধরা হতো। ক্রেতারাও কম দামে তাজা মাছ কিনে সন্তুষ্ট হতেন। মৎস্য জীবী সত্যবাবু জানান, কলার বাকল দিয়ে মাছ ধরার পদ্ধতি যা পানির উপরে ভাসিয়ে বাকলের উপর কিছু ছাই ছিটিয়ে পানির উপরে ধীরে ধীরে টানলেই মাছ লাফিয়ে লাফিয়ে বাকলের ভেলায় পরে। বিশ্বায়নের তথ্যপ্রবাহ আর প্রযুক্তি বদলে দিচ্ছে চিরায়ত গ্রামবাংলার প্রাকৃতিক মুখচ্ছবি। আধুনিকতায় এসেছে মাছ ধরার নানা পরিবর্তন। পরিবেশ বান্ধব গ্রামীণ সকল পদ্ধতি আধুনিক যান্ত্রিকতায় হারমানছে। যান্তিকতা ও ক্ষতিকারক কারেন্ট ও রিং জাল মাছ ধরায় এনেছে পরিবর্তন, ফলে থেমে গেছে পরিবেশ বান্ধব মাছ শিকারের গ্রামীন পদ্ধতি গুলো। আজকের শিশুরা জানেই না কলাগাছের বাকল দিয়ে মাছ ধরা যায়। শিশুদের জানান প্রয়োজন আদি ও অকৃত্রিম গ্রামীণ পদ্ধতিতে মাছ ধরার বিভিন্ন গ্রামিন যন্ত্র। একটা সময় দরিদ্র মৎস্যজীবী যাদের জাল কেনার টাকা ছিল না তাদের জীবন ধারণের একমাত্র অবলম্বন ছিল কলা গাছের বাকল দিয়ে মাছ ধরা। দৈনন্দিন জীবনের জন্য খাদ্য চাহিদা মেটাতে গ্রামের লোকজ পদ্ধতি প্রাধান্য পাতো। প্রাকৃতিক মাছ শিকারের ভুলে যাওয়া দিনগুলো আবার ফিরে পেতে চায় দরিদ্র মৎস্যজীবীরা। অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মজিদুল ইসলাম বলেন, আগে নদী-নালা খাল-বিলগুলোতে প্রচুর মাছ ছিল, কলাগাছের বাকল দিয়ে দেশী জাতের মাছ শিকার করতে দেখা যেত। তবে কালের পরিক্রমায় এখন আর তেমন দেখা মেলে না। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার জানান, নদ-নদী, খাল-বিলগুলোতে পানি সংকট, অধিক পরিমান রাসায়নিক সার ব্যবহার, অবৈধ চায়না রিং জাল ব্যবহার, মা মাছ ধরে ফেলার ফলে দেশীয় প্রজাতির মাছের দেখা মিলছে না। ফলে কলাগাছের বাকল দিয়ে মাছ মারা এখন আর চোখে পড়ে না। সকলে যদি মৎস্য আহরন আইন গুলো মেনে চলে তবে আমরা আশা করতে পারি আমাদের হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেতে পারি।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত