গ্রামীন ঐতিহ্য এখন শুধুই স্মৃতি

কাউনিয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে হারিকেন, স্থান করে নিয়েছে সোলার 

  সারওয়ার আলম মুকুল

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৩, ১৮:১০ |  আপডেট  : ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:২২

তিস্তার চরা লসহ পল্লীগ্রামের অন্ধকার দুর করতে একমাত্র অবলম্বন ছিল হারিকেন ও কুপি বাতি। হারিকেন বা কুপি জ্বালিয়ে গৃহস্থলি কাজসহ বাড়ির উঠানে লেখাপড়া করত ছেলে-মেয়েরা। অন্ধকার রাতে পথ চলতে ও হাটবাজার গুলোতে ব্যবহৃত হতো হারিকেন ও কুপি বাতি। কেরোসিন তেল আনার জন্য প্রতিটি গৃহস্থ বাড়িতেই ছিল কাচের বিশেষ ধরনের বোতল। সেই বোতলের গলায় রশি লাগিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হতো বাঁশের খুটিতে। এ দৃশ্য এখন আর রংপুরের কাউনিয়ায় গ্রাম গুলোতে চোখে পড়ে না। 

আধুনিক সভ্যতায় হারিকেন ও কুপি বাতির পরিবর্তে স্থান করে নিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ ও সোলার প্লান্ট এবং চার্জার লাইট। গ্রামীণ ঐতিহ্য হারিকেন ও কুপি বাতি এখন আর চোখে পাড়ে না। এক সময়ের অতি প্রয়োজনিয় হারিকেন ও কুপি আজ বিলুপ্তির পথে। অন্ধকার রাতে হারিকেনের আলো জ্বালিয়ে পথ চলা এখন শুধুই স্মৃতি। বাংলা সিনেমায় প্রথম দিকের ছবি গুলোর দিকে তাকালেই হারেিকন ও কুপি বাতির নমুনা দেখা যায়। বাংলা সাহিত্যে “ডাক হরকরা’ গল্পের নায়ক এক হাতে হারিকেন অন্য হাতে বল্লম নিয়ে ছুটে চলে তার কর্ম পালনে এমন দৃশ্য সকলেরই দেখা। একটা সময় ছিল যখন কারু খচিত বাহারি ধরনের হারিকেন ও কুপি ছিল মানুষের অন্ধকার নিবারণের একমাত্র অবলম্বন। কালের পরিবর্তনে হারিকেন ও কুপি বাতির স্থান দখল করে নিয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বৈদ্যুতিক বাল্ব, সৌরবিদ্যুৎ, চার্জার লাইট, মোমবাতিসহ আরও অনেক কিছুই। ফলে ক্রমেই বিলীন হয়ে যাচ্ছে আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যময় হারিকেন ও কুপি বাতি। এই হারিকেন ও কুপি বাতি গুলো তৈরী হতো মাটি, লোহা, কাঁচের বোতল, টিন,তামা ও পিতল দিয়ে। নিজ নিজ সামর্থ অনুযায়ী লোকজন হারিকেন ও কুপি কিনে সেগুলো ব্যবহার করতেন। 

বাজারে ছোট বড় দুই ধরনের হারিকেন ও কুপি পাওয়া যেত। কুপি হতে বেশি আলো পাওয়ার লক্ষে কুপি গুলো কে কাঠ, মাটি বা বাঁশের তৈরি গছা (স্ট্যান্ড) রাখা হতো। বর্তমানে হারিকেন ও কুপির কদর নেই। চরা লে বিদ্যুৎ ও সৌরবিদ্যুতে ছোঁয়ায় আলো পাওয়ার পাশাপাশি টিভি দেখার সুযোগসহ আধুনিক ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করে গ্রামিন ঐতিহ্য হারিকেন ও কুপির কথা ভুলে যেতে বসেছে। অতীতে রিক্সা ও ভ্যান গুলোর নিচে রাতের আঁধারে হারিকেনের ব্যাপক ব্যবহার ছিল।  এখন ভ্যান ও রিক্সা গুলোতে হারিকেনের মিটি মিটি আলো আর চোখে পড়ে না। সেখানে স্থান করে নিয়েছে চার্জার লাইট। ফলে অন্ধকার দূর করার একমাত্র অবম্বন হারিকেন ও কুপি বিলুপ্তির পথে। নিজপাড়া গ্রামের প্রবীন শিক্ষক আজিজুল ইসলাম জানায় এমন সময় আসবে যখন হারিকেন ও কুপিবাতি দেখতে যেতে হবে জাদুঘরে। নতুন প্রজন্ম হয়তো জানবেও না হারিকেন ও কুপির ইতিহাস।

 হয়তো চিরতরে বিলুপ্ত হবে হারিকেন ও কুপি বাতি। তাই নতুন প্রজন্মকে গ্রাম বাংলার অতীত নির্দশন হারিকেন ও কুপি বাতি সংরক্ষণ করতে সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন সচেতন মহল।

 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত