জীবন চলছে ধুঁকে ধুঁকে

কাউনিয়ায় হারাগাছে ৩বিদেশ ফেরত মহিলার সাতকাহন

  সারওয়ার আলম মুকুল

প্রকাশ: ৪ জুন ২০২৪, ১৭:৫৭ |  আপডেট  : ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৫৭

 সংসারে স্বছলতা আনতে এবং সুখে শান্তিতে জীবন কাটাতে সঞ্চিত টাকা দিয়ে সুদুর জর্ডানে পারি জমান কাউনিয়ার সাহসী ৩ নারী। কিন্ত কেউ অসুস্থ হয়ে কেউবা করোনার সময়ে দেশে ফেরত এসে আর বিদেশ যেতে না পেরে অর্থকষ্টে দিনাতিপাত করছেন। বিদেশ যাওয়ার কারণে কারো সংসার ভেঙ্গেছে। সুখের বদলে জীবনে নেমে এসেছে দুঃখের ছোঁয়া। কাউনিয়ায় একই গ্রামের তেমন তিন বিদেশ ফেরতরা সাতকাহন-

আফরোজা বেগম ঃ উপজেলার নাজিরদহ গ্রামের আবুল কালামের কন্যা আফরোজা বেগমের ২০০২ সালে ঘটা করে বাল্য বয়সে বিয়ে হয় একই উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের আঃ সালামের পুত্র জয়নাল আবেদীনের সাথে। বিয়ের পর সুখেই কাটছিল তার দিনকাল। স্বামী জয়নাল নেশায় আসক্ত হয়ে কর্মহীন হয়ে পরে। জীবন চালাতে আফরোজা চলে যায় রাজধানী ঢাকায়। সেখানে মিরপুর ট্যাকনিক্যালে গামেন্টসে চাকরি নেয়। এখানেই বয়চাল অফিস বোরাক টাওয়ারের এক ব্যাক্তির মাধ্যমে পরিচয় হয় তার। সেই ব্যাক্তিকে টাকা দিয়ে দু সন্তানকে স্বামীর কাছে রেখে জর্ডানে পারি জমান আফরোজা। সেখানে আম্মান শহরের আল হাসান গ্রামে ক্লাসিক গার্মেন্টস কোম্পানিতে ২৭ হাজার টাকা বেতনের চাকুরী হয়। কাজ বুঝিয়ে দিতে না পারলে চলতো নির্যাতন। তব্ওু টাকা সুখের জন্য মুখ বন্ধ করে নির্যাতন সহ্য করে চাকুরী করতো সে। এরই মধ্যে তার জরায়ুতে টিউমার হয়। অর্থের অভাবে বিদেশে চিকিৎসা করাতে পারেনি। কোম্পানিতে সাহায্যের আবেদন করেও চিকিৎসার অর্থ ভাগ্যে জুটেনি। পরে তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়, দেশে এসে ঋণ করে অর্থ জোগার করে টিউমারটি অপসারণ করান। বিদেশ থেকে দেশে ফেরত আসায় এলাকার মানুষ তাকে বাকা চোখে দেখে। কেউ অর্থশালী ভাবেন। কোন স্থানে তার ঠাঁই নেই। বর্তমানে স্বামী পরিত্যক্ত হয়ে কর্মহীন জীবন যাপন করছে। সরকারের কাছে একটি কর্মের জন্য আকুতি তার। 

আফসানা বেগম ঃ আফরোজার মত তার আপন বোন আফসানা বেগম একই ব্যাক্তির মাধ্যমে ১ ছেলে ১ মেয়েকে বাবার বাড়িতে রেখে জর্ডানের আম্মান শহরে আল হাসান গ্রামে ক্লাসিক গার্মেন্টস কোম্পানিতে ২০ হাজার টাকা বেতনে চাকুরী নেন। ২ বছর ৯ মাস জর্ডানে কাজ করেন তিনি। মা মারা যাওয়ায় দেশে চলে আসেন। সে বিদেশ গিয়ে রোজগারের টাকা ব্যবসা করার জন্য তার স্বামী মোসরেকুল ইসলামের নামে পাঠায়। দেশে আসলে একই গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রশীদের পুত্র স্বামী মোসরেকুল তাকে গ্রহন করতে অস্বীকার করে তালাক দেয়। এর পর অর্থ স্বামী সব হারিয়ে চোখে মুখে অন্ধকার দেখে সে। এর পর স্ত্রীর অধিকার আদায়ে আদালতে মামলা করলে সেই মামলা বিচারাধীন রয়েছে। বর্তমানে আফসানা বেগম বিড়ি তৈরি কাজ করে জীবন সংসার চালাচ্ছে। সেও সরকারের কাছে একটি কর্মের জন্য আবেদন জানিয়েছেন। 

হাজরা খাতুন ঃ কাউনিয়া উপজেলার নাজিরদহ গ্রামের হায়দার আলীর কন্যা হাজেরা বেগমের বিয়ে হয় ১৯৯৫ সালে পার্শ্ববর্তী মিঠাপুকুর উপজেলার দেল মির্জাপুর এলাকার মঞ্জিল হোসেনের সাথে। ২ পুত্র সন্তান জন্ম নেওয়ার পর স্বামী ২য় বিয়ে করেন। পরে জীবন সংগ্রামে বাঁচতে সে ঢাকার মিরপুর-২ ট্যাকনিক্যাল এলাকায় গার্মেন্টসে চাকরি নেয়। সেখানে থেকে বয়চাল অফিস বোরাক টাওয়ার বাংলা মটর এলাকার এক ব্যাক্তির মাধ্যমে জর্ডানে গিয়ে আম্মান শহরে আল হাসান গ্রামে ক্লাসিক গার্মেন্টসে চাকরি পায়। সেখান তার বেতন শুরু হয় ১৬ হাজার টাকা দিয়ে। করোনা কালীন সময়ে সেখানকার গার্মেন্টসটি বন্ধ হলে হাজরার মতো অনেক নারী কর্মীকে নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। যে টুকু টাকা জমানো ছিল তা বসে বসে খেয়ে এখন হাজরার জীবন চলছে ধুঁকে ধুঁকে। আফরোজা, আফসানা ও হাজরা বেগম সরকার বা কোন এনজিওর কাছে জীবন বাঁচাতে একটি কর্ম চায়। একটি কর্ম হলে ছেলে মেয়েদের নিয়ে জীবন বাঁচাতে পারবে তারা। তাদের কষ্টের কথা গুলো কাউনিয়া উপজেলা প্রবাস বন্ধু ফোরামের সাধারন সম্পাদক সারওয়ার আলম মুকুল শুনে ইউরোপিয় ইউনিয়নের অর্থায়নে ব্র্যাক প্রত্যাশা ২ প্রকল্পের কাউনিয়া উপজেলা প্রোগাম অর্গানাইজার মোকাররম হোসেন কে জানালে তিনি বিষয়টি ব্র্যাক এর উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা সহযোগিতার আশ^াস প্রদান করেছেন। কাউনিয়ায় এরকম বিদেশ ফেরত শতশত মানষের কষ্টের কান্নার আওয়াজ বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। 
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত