কাউনিয়ায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য আঠিয়া কলা বিলুপ্তির পথে

  সারওয়ার আলম মুকুল, কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৭ আগস্ট ২০২১, ২০:২৫ |  আপডেট  : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩৪

একটা সময় ছিল যখন রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার প্রতিটি গ্রামে বিশেষ করে গৃহন্থ পরিবার গুলো প্রচুর আঠিয়া কলা চাষ করতেন। অনেকে আবার রাস্তার ধারে এমনিতেই লাগিয়ে রাখতেন। এই কলার চাহিদাও ছিল প্রচুর। আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরুর পর থেকে ধীরে ধীরে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য আঠিয়া কলা বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখাগেছে কোথাও কোথায় রাস্তার ধারে কিছু আঠিয়া কলা গাছ দেখা গেলেও গৃহস্থ বাড়ি গুলোতে তেমন একটা চোখে পরেনি। রংপুরের কাউনিয়া উৎপাদিত আঠিয়া কলা বিখ্যাত ছিল। এখানকার আঠিয়া কলা যেত দেশের বিভিন্ন জেলায়। অনেক ভিটামিন ও প্রোটিন সমৃদ্ধ আঠিয়া কলা গ্রামের কৃষক পানতা ভাত,চিড়া বা মুড়ি দিয়ে মেথে খেয়ে মাঠে কাজে নেমে পরতো। আধুনিকতায় সেই ঐতিহ্যও হরাতে বসেছে। কাউনিয়ায় গ্রামগঞ্জে এখনো প্রচলিত রয়েছে, আঠিয়া কলা ও চিড়া মেখে খেলে পাতলা পায়খানা কমে যায়। বালাপাড়া ইউনিয়নের গদাই গ্রামের কৃষক গফুর আলী মন্ডল জানান, আগের দিনে জমি চাষ করতে যাওয়ার আগে পানতা ভাত, চিড়া বা মুড়ি দিয়ে আঠিয়া কলা মেখে খেয়ে মাঠে যেতাম। এখন আর গরু মহিষের হালও নেই আটিয়া কলা দিয়ে পানতা ভাত বা চিড়া মুড়ি খায়াও নেই। খোপাতি গ্রামের আবেদ আলী জানান, দেশি আঠিয়া কলা (বিচি কলা) এক সময়র জনপ্রিয় খাবার ছিল। আমি ছোট থেকে প্রতিদিন সকালে দেশী আঠিয়া কলা দিয়ে ভাত খেতাম। গ্রামে যদি কারো পাতলা পায়খানা হয় তাহলে দেশী আটিয়া কলা আর চিড়া খেলে ভাল হয়ে যেত। 

বালিকা বিদ্যালয় মোড়ের কলা ব্যবসায়ী মুকুল জানান, দেশী আঠিয়া কলার চাষ না হওয়ায় এখন খুবই কম পাওয়া যায়। যদিও  কিছু কিছু গ্রামে আটিয়া কলা পাওয়া যায় তবে দাম অন্য কলার চেয়ে একটু বেশী। নিজপাড়া গ্রামের কৃষক স্বাধীন জানান, কৃষিক বিভাগ থেকে দেশীও এই কলা চষে উদ্ভুদ্ধ করলে বাংলার দেশীয় ঐতিহ্য যেমন টিকে থাকতো অন্য দিকে কৃষক লাভবান হতো। কলাগাছ রাস্তার ধার, পুকুর ও নদীর পাড় ভাঙ্গন রোধে ভুমিকা রাখে। কাউনিয়া মেডিকেলের ডাঃ খন্দকার মমিনুল ইসলাম জানান, একটি বড় মাপের কলা খেলে ১০০ ক্যালরি বেশি শক্তি পাওয়া যায়। কলায় প্রচুর পরিমান ক্যালসিয়াম, নাইট্রোজেন এবং ফসফরাস থাকে, যা শরীরের স্বাস্থ্যকর টিসু গঠনে কাজ করে। কলাতে রয়েছে সহজে হজমযোগ্য শর্করা। শর্করা পরিপাকতন্ত্রকে সহজে হজম করতে সাহায্য করে। আটিয়া কলা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ নিশ্চিত করে। এ কলায় প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম রয়েছে। পটাসিয়াম মানুষের অবসাদ কে দুর করে। এ কলা বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন এ, বি৬, সি এবং ডি এর একটি অসাধারণ উৎস। কলায় প্রচুর লৌহ থাকে। কলার পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমায়। 

কৃষি কর্মকর্তা শাহনাজ পারভীন জানান, আঠিয়া কলা ব্যতিক্রমধর্মী এক ধরনের কলা, সাধারনত কলা বীজবিহীন ফল হলেও এ কলায় প্রচুর বীজ থাকে। বিচি বেশি হওয়ায় কেউ বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে না। তবে গ্রামের বাড়ির আশে-পাশে এ কলার গাছ দেখা যায়। বাণিজ্যিকভাবে চাষ করলে আটিয়া কলা টিকিয়ে রাখা সম্ভব। একলা বানিজ্যিক ভাবে চাষ করলে বিপুল অর্থ আয় করা সম্ভব বলে সচেতনমহল মনে করছেন।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত