আশ্বাসের বাস্তবায়ন নেই

কাউনিয়ার ধুমনদীর নৈশ্যস্বর্গিক সৌন্দর্য প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে টানে

  সারওয়ার আলম মুকুল, কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১৭:৫৮ |  আপডেট  : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:২৪

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় শান্ত শ্যামল সুবজে ঘেরা ঐতিহাসিক ধুমনদী। ধুম নদীর নৈশ্যস্বর্গিক সৌন্দর্য প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে টানে। শীত গরম যে কোন পরিবেশ এখানে সমাগম ঘটে সব বয়সের মানুষের। তরুণ-তরুণীদের এলাকাটি সব চেয়ে প্রিয়। 

সরেজমিনে ধুমনদী এলাক ঘুরে দেখা গেছে, স্বচ্ছ জলাধারের পাশে নিঝুম পরিবেশে ছায়ায় বসে মনের মানুষের সঙ্গে কথা বলতে অনেকেই খূঁজে নেয় এই স্থানটি। বিনোদন বিহীন উপজেলার তিন লাখ মানুষের একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র এই ধুম নদী। দেশীয় ও অতিথি পাখিদের জলকেলি খেলা দেখতে প্রতিদিন শতশত দর্শনার্থী ছুটে আসে এখানে। হারাগাছ পৌর শহর থেকে ২ কিলোমিটার পূর্ব দক্ষিণে এবং কাউনিয়া সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পশ্চিমে ঐতিহাসিক ধুম নদীর অবস্থান। এর আয়তন ১৮৬.৩৬ একর। এই ধুম নদী নিয়ে নানা কথামালা রয়েছে। বাংলার প্রথম ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনের অগ্রনায়ক ছিলেন ভবানী পাঠক, মজনুশাহ ও জয়দূর্গা দেবী। কথিত আছে ধুমনদী তৈরি করা হয় ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনের গোপন আখড়া হিসেবে। এ সময় দেবী চৌধুরানী ছিলেন ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনের একজন অগ্রনায়িকা। নানা কথা প্রচলিত আছে যে, মন্থনা ও ব্রাহ্মনডাঙ্গার জমিদার নরেন্দ্র নারায়ন দেবী চৌধুরানীকে বিয়ে করেন। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যে সে শ্বাশুড়ী কর্তৃক নিগৃহীত ও লাঞ্চিত হয়। মনের ক্ষোভে ও দূঃখে সে স্বামী গৃহ ত্যাগ করে চলে আসে। ভবানী পাঠক দেবী চৌধুরানীর দূঃখের কাহিনী শুনে তাকে পালিত কন্যা হিসেবে গ্রহন করে যুদ্ধ বিদ্যায় বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে পারদর্শী করে তোলেন। এরপর শুরু হয় অত্যাচারী ইংরেজ শাসকদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম। অশ^ বিত্তাকার এ ধুম নদীর মাঝখানে তিনি গড়ে তোলেন গোপন আস্তানা। ধুমনদীটি মূলত ইউ বা অশ্বাঘুরাকৃতির। চতুর্দিকের মধ্যে তিন দিকে নদী আর এক দিক দিয়ে প্রবেশ পথ। অর্থাৎ শত্রুরা আক্রমন করতে চাইলে একমূখী পথ দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে হবে। একারণেই দেবী চৌধুরানী এ ধুম নদীর ভেতরের স্থানকে আস্তানা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। নানা ইতিহাসে ঘেরা এই ধুমনদী রক্ষনাবেক্ষনে নেওয়া হয়নি কোন উদ্যোগ। বিগত এরশাদ সরকারের আমলে তৎকালীন পর্যটন ও বিমান মন্ত্রী মাইদুল ইসলাম ধুম নদীকে একটি পিকনিক স্পট হিসেবে গড়ে তোলার এবং এলাকাটিকে পর্যটন শিল্পের আওতায় আনার ঘোষণা দেন। কিন্তু তা বাস্তবাতার মূখ দেখেনি। পরবর্তীতে মন্ত্রী জিএম কাদের একই প্রতিশ্রুতি দিলেও তাও বাস্তবায়িত হয়নি। অথচ বিনোদন প্রিয় মানুষের জন্য ধুমনদী এলাকাটি হয়ে উঠতে পারে রংপুরের শ্রেষ্ঠ বিনোদনের একমাত্র কেন্দ্র। এখানে বে-সরকারী উদ্যোগে একটি চিড়িয়াখানা গড়ে উঠলেও তত্ববধায়ক সরকারের আমলে হরিণ, পশু পাখি জব্দ করায় তা বন্ধ হয়ে যায়। ঐতিহাসিক এই ধুমনদীর বিশাল বিশাল আকৃতির মাছের ঢেউ তুলে যাওয়ার দৃশ্য, কর্ত্তি বা চাপিলা মাছের সারিবদ্ধ ভাবে চলাফেরা, অতিথি পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ, বালিহাস, পানকৌড়ির ডুবে ডুবে মাছ শিকারের দৃশ্য আগন্তুকদের মন কাড়ে। ধুমনদী ঘুরতে আসা নুরআমিন জানান, স্বাধীনতার ৫৪বছরে কোন সরকারই রংপুরের মানুষের বিনোদনের কথা ভাবেনি। বর্তমান সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবী সরকারের পৃষ্টপোষকতায় ধুমনদী কে ঘিরে গড়ে উঠবে বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ বিনোদন বা পর্যটন কেন্দ্র। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মহিদুল হক জানান, বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানান হয়েছে। এলাকার আবাল বৃদ্ধ বনিতার একটাই প্রত্যাশা ধুমনদীকে পর্যটনের আতায় নিয়ে বিনোদন পার্ক হিসেবে গড়ে তুলেবে বর্তমান সরকার। 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত