করোনাকে উপেক্ষা করে বাদাম চাষ তিস্তা চরের মানুষের ভাগ্য বদল
প্রকাশ: ৪ জুলাই ২০২১, ১৬:১৬ | আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২৯
এক সময় ছিল যখন কাউনিয়ায় ২২টি চরের মানুষের অভাব ছিল নিত্য সঙ্গি। নদী ভাঙ্গন ও আর অভাবের সাথে লড়াই করে তাদের চলতে হতো। সেই সব চরবাসী কৃষি বিভাগের সহায়তায় করোনা মহামারীকে উপেক্ষা করে বাদম চাষ করে নিজেদের ভাগ্য বদলে দিয়েছে।
সরেজমিনে বিভিন্ন চরে গিয়ে কৃষকের ভাগ্য বদলের কথা জানতে চাইলে তারা জানান, করোনা কে উপেক্ষা করে তিস্তা নদীর জেগে উঠা পতিত চরে রবিশস্যই তাদের কপাল খুলে দিয়েছে। তবে সব রবিশস্যই নয়, বাদাম, মরিচ আর ভুট্টাই তাদের ভাগ্য বদলের মূল ফসল। অল্প খরচ আর অধিক ফলন এবং বেশী লাভ হওয়ায় কাউনিয়ায় তিস্তা নদী বেষ্টিত ২২টি চর গ্রামে ব্যাপক বাদাম চাষ হয়েছে। গত মৌসুমে তুলনায় এ মৌসুমে বাদাম চাষে কৃষকের আগ্রহ ছিল বেশী। ভাগ্য বদলে স্বপ্ন বুঁনছে চরের কৃষানীরা। চলতি মৌসুমে গতবারের তুলনায় প্রায় ১০০ হেক্টর বেশী জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। বাম্পার ফলন ও দাম ভালো পেয়ে বাদাম চাষীদের মুখে হাসি ফুঁটেছে। উপজেলার নাজিরদহ, চরচতুরা, ধুমগাড়া, প্রাননাথ চর, গোপিডাঙ্গা, আরাজি হরিশ্বর, চরগদাই, পাঞ্জরভাঙ্গা, ঢুষমারা চর, তালুকশাহবাজ, চর গনাই, বিশ্বনাথ, আজম খাঁসহ ২২টি চরের দিগন্ত জুঁড়ে অন্য ফসলের পাশাপাশি ব্যাপক ভাবে উচ্চ ফলনশীল ছাড়াও স্থানীয় জাতের বাদাম চাষ হয়েছে।
গদাই গ্রামের আলামিন জানান, ৪ দোন জমিতে বাদাম চাষ করেছি। ফলনও বেশ হয়েছে। তবে কিছু বাদাম নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে নষ্ট হয়েছে। অন্য আবাদের তুলনায় বাদামে খরচ কম। ভালো দাম পেয়েছি। এবারেও বাদাম বিক্রি করে লাভের মুখ দেখেছি। চর গনাই গ্রামের দুদু মিয়া জানান দোন জমিতে বাদাম চাষ করে ভাল ফলন পেয়েছি। খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টাকার মতো। বাদাম পেয়েছি প্রায় ৫০ মন। বর্তমানে প্রতিমন বাদাম ২৫শ থেকে ৩ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বন্যায় কিছু বাদাম ভেসে গেছে। তবুও সে এবার ভাল লাভের মুখ দেখেছে। পাঞ্জরভাঙ্গা গ্রামের বাদামচাষি আনারুল জানান বাদাম তাদের কোন আধুনিক প্রশিক্ষনের ব্যাবস্থা করা হয় না।
সরকারী ভাবে তারা তেমন কোন সহযোগিতা পায় না। বিশেষ করে সরকারী ভাবে উন্নত বীজের ব্যবস্থা করলে তারা ক্ষতিগ্রস্থ কম হতো। ব্যাংক গুলো তাদের ঋণ দিতে চায় না। কৃষি ব্যাংক ঋণ দিলেও ঘুষ ছাড়া পাওয়া যায় না। ঋন ছাড়াই এলাকার কৃষক নিজ চেষ্টায় চরা লে এ বছর বাদাম চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছে। কাউনিয়ার বাদাম এখন দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানী হয়। এছারাও আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ, সংরক্ষণাগার ও বিপনন ব্যবস্থা চালু না থাকায় কাক্সিখত লাভ থেকে বি ত হচ্ছেন চাষীরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহনাজ পারভীন জানান, কাউনিয়ায় রবি মৌসুমে ঢাকা-১, বারি-৬, ৮, ৯ এবং বিনা-৪ জাতের ২৬০ হেক্টর ও খরিপে ৫৬৫ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। বাদাম চাষে উৎসাহিত করতে প্রদর্শনী প্লট করা হয়। এতে বীজ, সারসহ আন্তঃ পরিচর্যায় টাকা দেয়া হয়েছে। এবারে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে বিঘায় সারে ৭ থেকে সারে ৮মন। তিনি জানান, চরা লের পলিযুক্ত উর্ব্বর জমিতে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকদের মাঝে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ এবং সেবা-সহায়তা প্রদানে কৃষি বিভাগ কাজ করছে। চরা লের কৃষকের দাবী, বন্যা, অতিখরা, অতিবৃষ্টি, ঝড় এবং নদী ভাঙ্গনে তাদের ফসলের যে ক্ষতি হয় তাদের যেন সরকারী প্রনদনা প্রদান করা হয়।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত