এবার চিকিৎসার আড়ালে জঙ্গি তৎপরতা!
প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:৩৫ | আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯:৫৩
* র্যামফিট এবং সেখানকার চিকিৎসক শাকিরের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সংগঠনের যোগসূত্র।
পেশায় চক্ষু চিকিৎসক হলেও বিভিন্ন বয়সী তরুণ-তরুণীদের নিয়মিতভাবে ইসলামিক সাইকোলজিক্যাল কাউন্সিলিং বা ইসলামি মনস্তাত্ত্বিক পরামর্শ দিতেন ডা. শাকির বিন ওয়ালী। রিসার্স অ্যাকাডেমি ফর মেডিকেল ফিকাহ অ্যান্ড ইসলামিক ট্রিটমেন্ট (র্যামফিট) নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাউন্সিলিংয়ের আড়ালে তিনি ওইসব তরুণ-তরুণীকে লক্ষ্যবস্তু করে উদ্বুদ্ধ করতেন জঙ্গিবাদের ভাষায় ‘জিহাদে’।
সাম্প্রতিক সময়ে কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া সাত তরুণের মধ্যে তিনজন শাকিরের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঘর ছেড়েছেন। আরেকজন ঘর ছাড়ার প্রস্তুতি নিলেও তার আগেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি ইউনিট আটক করে তাকে। এভাবেই অন্তত ১০ থেকে ১২ জনকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য বানিয়েছেন।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে এই নতুন কৌশলে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম। তারা প্রকাশ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইসলামি আলোচনার নামে তরুণদের জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে।
এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে র্যামফিট অন্যতম। প্রতিষ্ঠানটি রীতিমতো শুরা বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে দক্ষতাসম্পন্ন চিকিৎসকদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হলেও এর মাধ্যমে হতাশাগ্রস্ত তরুণদের ইসলামিক সাইকোলজিক্যাল কাউন্সিলিং করানো হয়।
রাজধানীর মগবাজারের বিশাল সেন্টারের পাশেই ডমইনো ভবনের চতুর্থ তলায় র্যামফিটের কার্যালয়। রিসার্স অ্যাকাডেমি ফর মেডিকেল ফিকাহ অ্যান্ড ইসলামিক ট্রিটমেন্ট নামের এই প্রতিষ্ঠান যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর থেকে গত বছর নিবন্ধন নিয়েছে। প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির বাইরে শরিয়াহ হসপিটাল, মেডিকেল ফিকাহর পাশাপাশি অথেনটিক ইসলামিক নলেজ প্রচারসহ বিভিন্ন ফতোয়া কোলাবরেশন করার বিষয়টি উল্লেখ আছে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে। শায়খ আবুল হাসনাত কাশিম নামে একজন এই প্রতিষ্ঠানটির শরিয়াহ বোর্ডের প্রধান। এর শুরা সদস্যদের প্রায় সবাই মুফতি। প্রতিষ্ঠানটি ইসলামি প্রচারণার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে অনুদান সংগ্রহের জন্যও আহ্বান জানিয়ে থাকে।
সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা জানান, ইতোমধ্যে র্যামফিটের বিষয়ে তারা খোঁজখবর নেয়া শুরু করেছেন। শাকির এবং র্যামফিটের সঙ্গে আন্তর্জাতিক একটি সংগঠনের যোগসূত্র পাওয়া গেছে। তারা জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি দেশ-বিদেশ থেকে অনুদানের নামে যে অর্থ সংগ্রহ করে তা জঙ্গিবাদে অর্থায়ন করছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অবশ্য গত শনিবার র্যামফিটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ডা. শরীফুল ইসলাম শিশির এই প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেন, তারা কোনো রাজনীতি বা জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত নন। শাকির বিন ওয়ালী তাদের প্রতিষ্ঠানে স্বেচ্ছসেবী হিসেবে কাজ করতেন। শাকিরের মতাদর্শকে তারা বিশ্বাস করেন না বলেও দাবি করেন শরীফুল।
তবে সুনির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা বা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ছাড়া ইসলামিক সাইকোলজিক্যাল কাউন্সিলিং করানোর বিষয়ে র্যামফিটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক এই প্রতিবেদককে বলেন, তাদের একজন মনোরোগ চিকিৎসক আছেন। ওই চিকিৎসক ছাড়াও আরও কয়েকজন এই বিষয়ে লন্ডনের আল-বালাঘ একাডেমি থেকে অনলাইনে ডিপ্লোমা করেছেন।
তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আল-বালাঘ বিশ্বব্যাপী আল-কায়েদার প্রোপাগান্ডা প্রচারের একটি প্ল্যাটফর্ম। বাংলাদেশের আনসার আল ইসলামের মিডিয়া শাখা নিয়মিত আল-বালাঘ ম্যাগাজিনের বিভিন্ন কন্টেন্ট বাংলায় অনুবাদের পর নিজেদের ওয়েবসাইটসহ বিভিন্ন টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রকাশ করে। আনসার আল ইসলাম (এএআই) মূলত আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার অনুসারী। তারা নিজেদের আল-কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্ট বা একিউআইএস-এর সদস্য হিসেবে মনে করে। এএআই আগে এবিটি বা আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়েছে। ২০১৫ সালের মে মাসে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ও ২০১৭ সালের মার্চে আনসার আল ইসলামকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বাংলাদেশ সরকার।
হঠাৎ হিজরত, আশঙ্কা বাড়ছে
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৩ সালে ব্লগার রাজীবকে হত্যার মাধ্যমে আলোচনায় আসা আনসার আল ইসলাম গত কয়েক বছরে শুধু দাওয়াতি কার্যক্রম বা কর্মী সংগ্রহের দিকে মনোযোগী ছিল। ২০১৭ সালের এপ্রিলের পর তারা আর কোনো হত্যা মিশনে অংশ নেয়া বা হামলায় অংশ নেয়নি। গত কয়েক বছরে তারা সদস্যদের হিজরত করতেও পাঠিয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তারা আবার নতুন কৌশলে তৎপরতা শুরু করেছে। আগের মতো টার্গেটেড কিলিং বা হামলার জন্য সদস্যদের প্রস্তুত করা হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, হঠাৎ করেই কুমিল্লা থেকে একযোগে সাতজনের কথিত হিজরতের নামে ঘরছাড়ার বিষয়টি তাদের ভাবিয়ে তুলেছে। ওই ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পেরেছে, সাম্প্রাতিক সময়ে আরও অন্তত ২০ জন কথিত হিজরতের নামে ঘর ছাড়ে। এদের মধ্যে কয়েকজন নিজেরাই ফিরে আসার পর তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে পুরো নেটওয়ার্কটি জানার চেষ্টা করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
সিটিটিসির প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আনসার আল ইসলাম একটু মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে এটা সত্যি। সাম্প্রতিক সময়ে যারা হিজরত করেছে তারা সবাই অনলাইনের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে র্যাডিক্যালাইজড হয়েছে। সাইবার স্পেসে তারা তৎপর আছে। সাম্প্রতিক সময়ে হিজরতের কারণে বড় ধরনের হুমকি আসার আশঙ্কা আছে বলে আমরা মনে করি না, তবে এটি অবশ্যই আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। আমরা তাদের খুঁজে বের করা এবং আস্তানাসহ পুরো নেটওয়ার্ক সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছি ।’
‘এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট হামলার আশঙ্কা নেই। তবে এই আশঙ্কা আমরা উড়িয়েও দিই না।’- বলেন পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
সম্প্রতি অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, জঙ্গি সংগঠনগুলো যেকোনো সময় আমাদের ‘সারপ্রাইজ’ দিতে পারে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ বলেন, ‘হঠাৎ করেই তরুণদের ঘরছাড়ার মানে হলো জঙ্গিরা ভেতরে ভেতরে সংগঠিত হচ্ছে। এটাকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। তারা কেন এবং কাদের মাধ্যমে ঘর ছেড়েছে তা গভীর তদন্তের মাধ্যমে বের করে আনতে হবে। একই সঙ্গে সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃতীয় কোনো পক্ষ তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে কি না তাও খতিয়ে দেখতে হবে।’
যেভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে এএআই
জঙ্গিবাদী সংগঠনের কার্যক্রম অনুসরণ করেন এমন বেশ কয়েকজন গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হোলি আর্টিজানে হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে নব্য জেএমবির প্রায় সব শীর্ষ নেতারা হয় গ্রেপ্তার হয়েছে অথবা অভিযানে মারা গেছে। কিন্তু আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতাদের বেশির ভাগই এখনো অধরা।
২০১১ সাল থেকে পালিয়ে থাকা সেনাবাহিনীর বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া আনসার আল ইসলামের অন্যতম একজন শুরা সদস্য হিসেবে সামরিক শাখার দায়িত্বে আছেন। তথ্য-প্রযুক্তি সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান থাকা সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়া আনসার আল ইসলামের সদস্যদের জন্য একটি নিরাপত্তা কৌশল তৈরি করেছেন। কাট আউট ও সিপ্লার সেল পদ্ধতি অনুসরণ করার কারণে এই সংগঠনের কোনো সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হলেও তার কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা যায় না।
সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা জানান, বহিষ্কৃত মেজর জিয়ার নিরাপত্তা কৌশল অনুযায়ী সংগঠনের একটি তৈয়ফা বা সেলের সদস্যরা একে অন্যকেও চেনে না। প্রাথমিক প্রশিক্ষণেই তাদের কারও ব্যক্তিগত বিষয়ে প্রশ্ন না করা বা জানতে না চাওয়ার কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়। জিয়ার তৈরি করা কৌশলের কারণেই কুমিল্লায় নিখোঁজ হওয়া তরুণদের একজন ফিরে এলেও তার মাধ্যমে অন্যদের অবস্থান শনাক্ত করা যাচ্ছে না। এমনকি বিচ্ছিন্নভাবে আনসার আল ইসলামের মাশসুল পর্যায়ের কিছু সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হলেও শীর্ষনেতাদের শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না। আনসার আল ইসলামের সদস্যরা প্রত্যেকেই ‘কোড ল্যাঙ্গুয়েজ’ ব্যবহার করে। কাউকে গ্রেপ্তারের পর তার পিটি আইডি বা অ্যাপস আইডিতে ঢুকে যোগাযোগ করলেও প্রথম কথপোকথনেই শীর্ষ নেতারা গ্রেপ্তারের বিষয়টি বুঝে যায়।
সম্প্রতি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ড্যাফোডিল ও বিইউবিটির কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের তিন শিক্ষার্থী সাজিদুল ইসলাম সাজিদ, সাজ্জাদুর রহমান শাওন ও ইফাজ আহমেদ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। এই সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রেপ্তার তিনজনই আনসার আল ইসলামের মাসুল পর্যায়ের সদস্য। কিন্তু তাদের কাছ থেকে সহযোগী বা সংগঠন সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যই পাওয়া যায়নি। তবে গ্রেপ্তারকৃতদের ইলেকট্রনিক ডিভাইস ফরেনসিক পরীক্ষার পর কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।
আনসার আল ইসলামের এই তিন সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদকারী সিটিটিসির অতিরিক্ত উপকমিশনার আহমেদুল ইসলাম জানান, তারা তাদের মোবাইলে যোগাযোগের অ্যাপসগুলো অন্য নামে রেখেছিল। কারও কারও মোবাইলের সিস্টেম থেকে যোগাযোগের অ্যাপস খুঁজে বের করে কিছু তথ্য বের করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ওইসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, আনসার আল ইসলামের সদস্য সংগ্রহে নিয়োজিত আছে সংগঠনটির দাওয়াহ বিভাগ। তারা দুই ভাবে সদস্য সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ইদরাতুল দাওয়াহ ওয়াল নুসরাহ বা আইডিএনের দায়িত্ব হলো সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত মেধাবী শিক্ষার্থীদের টার্গেট করা। আর কিসমাতুল দাওয়াহ নেটওয়ার্কের কাজ হলো মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের নিজেদের মতাদর্শের দিকে আকৃষ্ট করা।
এখন শীর্ষ নেতৃত্বে কারা?
বাংলাদেশে আল-কায়েদার অনুসারী আনসার আল ইসলাম বা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের আধ্যাত্মিক গুরু ছিলেন শায়খ জসিম উদ্দীন রাহমানী। ২০১৩ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে তিনি কারাগারে আছেন। এরপর থেকেই এই জঙ্গি সংগঠনটির শীর্ষ নেতা হিসেবে বহিষ্কৃত মেজর জিয়াকে গণ্য করা হয়।
তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, জসিম উদ্দীন রাহমানীর পর এই সংগঠনের আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে গণ্য করা হতো নরসিংদীর একটি মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা ওসমান গণিকে। ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তার আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি। জনশ্রুতি আছে, তিনি আত্মগোপনে আছেন। গত কয়েক বছর ধরে সংগঠনটির দাওয়াহ শাখার শুরা সদস্য হিসেবে আছেন শাইখ তামিম আল আদনানী, যদিও তার চেহারা সংগঠনের সদস্যরাই দেখেনি। অবশ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সংস্থা তার সম্পর্কে কিছু তথ্য পেয়েছে।
সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা বলেন, এই সংগঠনের শুরা পর্যায়ে আছেন এমন অন্তত তিনজনের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। এরা দেশের নামকরা একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। এ ছাড়াও আরেকজন গত চার বছর ধরে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী ওয়াজারিস্তানে অবস্থান করছে।
জিয়াকে ধরাটাই চ্যালেঞ্জ
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সহজে ধরতে পারলেও বহিষ্কৃত মেজর জিয়াকে ধরাই তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তাকে না ধরা পর্যন্ত আনসার আল ইসলামকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না। আত্মগোপনে থাকা জিয়াকে ধরতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হলেও জিয়া নিজের নিরাপত্তা নিয়ে এতটাই সচেতন যে, তার অবস্থান সম্পর্কেই জানা যাচ্ছে না।
অবশ্য জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে নিয়োজিত একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা অন্তত তিন বার জিয়ার অবস্থান শনাক্তের পর অভিযান চালিয়েছিলেন। এর মধ্যে রাজধানীর বাড্ডায় ১০ মিনিটের জন্য জিয়া তাদের হাতছাড়া হয়ে যায়। ২০১৮ সালের পর থেকে তার অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। তবে তাদের ধারণা, জিয়া এখনো দেশেই আছেন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় থাকার সম্ভাবনা বেশি।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ‘আনসার আল ইসলাম মূলত আল-কায়েদার অনুসারী। আল-কায়েদায় নতুন নেতৃত্ব এসেছে। এজন্য তারা কিছুটা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক থেকে এসব মোকাবিলা করতে হবে।’
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত