সাবেক নির্বাচন কমিশনারদের অভিমত
এনআইডি সরকারের কাছে গেলে একটি গণ্ডগোল লাগবে
প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২২, ২০:০৬ | আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:২৫
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা নির্বাচন কমিশনের থেকে সরকারের হাতে স্থানান্তরের বিরোধিতা করছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনাররা। নির্বাচন কমিশনের হাত ধরে তৈরি এই এনআইডির নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে যাক এটা তারা চান না। ভোটার তালিকার উপজাত হিসেবে এনআইডি এসেছে উল্লেখ করে তারা বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের হাত ধরেই জাতীয় পরিচয়পত্র এসেছে। এটা তাদের হাতেই থাকা উচিত। এটি সরকারের কাছে গেলে ভোটার তালিকা নিয়ে সমস্যা হবে। একটি গণ্ডগোল লাগবে। মানুষের ভোটার হওয়ার আগ্রহ থাকবে না।
বুধবার (১৯ অক্টেবর) বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে মতবিনিয়ে অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময়ে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবদুর রউফ, কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ, কে এম নূরুল হুদা, সাবেক কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম শাখাওয়াত হোসেন, শাহ নেওয়াজ রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, সাবেক ইসি ড. মুহম্মদ সাদিক, সিরাজুল ইসলাম, মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ, এম এ রেজা, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান ও জেসমিন টুলী অংশ নেন। আমন্ত্রিত ২৮ জনের মধ্যে উপস্থিত হয়েছেন ১৪ জন।
সরকার এনআইডি সেবা ইসি থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। গত ১০ অক্টোবর আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এনআইডি সরকারের হাতে স্থানান্তর প্রশ্নে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবদুর রউফ বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য বিভিন্ন অফিসে থাকতে পারে। এতে অসুবিধা নেই। কিন্তু নির্বাচন কমিশন যেহেতু এর প্যারেন্ট, মূলটা তারাই ইনিশিয়েট করবে। এটা তাদের কাছে না থাকলে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে যদি দেখেন এনআইডিতে একটা, ভোটার লিস্টে অন্যটা, তখন আরেকটা গণ্ডগোল লাগবে। আমার কথা হলো বেইজটা ইসির হাতে থাকবে। অন্যদের লাগলে সেটা নেবে।
সাবেক সিইসি কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ বলেন, ভোটার তালিকা থেকেই এনআইডি এসেছে। এটা এখানে থাকা উচিত। এনআইডি ইসির কাছে না থাকলে লোকজন ভোটার হতে চাইবে না। মানুষের ভোটার হওয়ার অতটা আগ্রহ নেই। এখন এনআইডির জন্যই আগ্রহ বেশি। এই অ্যাডভানটেজটা এখান থেকে সরানো উচিত নয়। এতে গণ্ডগোল হতে পারে।
তিনি মনে করেন, এনআইডিতে কোনও দুর্বলতা থাকলে সেটাকে ঠিক করা যেতে পারে। এটাকে আরও মজবুত করা উচিত। ইসির অনেক বড় ডাটাবেজ আছে এবং সেটা সুরক্ষিত আছে। এটা ভালো সিস্টেম হয়ে আছে।
সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদা বলেন, এনআইডি নির্বাচন কমিশনের তৈরি একটি জিনিস। এটা নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকলে সরকারের কোনও অসুবিধা হয় না। এনআইডির সঙ্গে জাতীয় নির্বাচন, ভোটার তালিকার পুরোপুরি সম্পর্ক রয়েছে। এটাকে মাঝখান থেকে নিয়ে গেলে নির্বাচন কমিশনের কাজ করতে অসুবিধা হবে।
সাবেক কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এনআইডি সরকার কেন নিতে চাচ্ছে সেটা পরিষ্কার নয়। এতগুলো বছরে একটি সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট করেছে। এটা যদি আলাদা হয় ভবিষ্যতে ভোটার তালিকা নিয়ে কথা উঠবে। প্রশ্ন আসবে কোনটি ঠিক। ভোটার তালিকা ঠিক না এনআইডি ঠিক। আপনি এনআইডির নাম পরিবর্তন করলেন বয়স পরিবর্তন করলেন তখন ভোটার লিস্টের কী হবে? আল্টিমেটলি এটা নিয়ে একটি গণ্ডগোল হবে।
এ প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, এনআইডিটা এখানেই থাকা প্রয়োজন-এক বাক্যে সবাই একথাটা বলেছেন। উনাদের যে নলেজ রয়েছে আমার সেটা নেই।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত