এডওয়ার্ড সাঈদ, যিনি প্রথম প্রাচ্যতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০২ |  আপডেট  : ১৮ মে ২০২৪, ২৩:৫৫

এডওয়ার্ড সাঈদ ছিলেন একজন ফিলিস্তিনি মার্কিন তাত্ত্বিক ও বুদ্ধিজীবী। তিনি উত্তর উপনিবেশবাদ ধারণার সৃষ্টিতে অবদান রাখেন। সাংস্কৃতিক সমালোচক হিসাবে, সাঈদ প্রাচ্যবাদ (১৯৭৮) বইয়ের জন্য পরিচিত, এটি সাংস্কৃতিক উপস্থাপনার সমালোচনা যা প্রাচ্যবাদের ভিত্তি পশ্চিমা বিশ্ব কীভাবে প্রাচ্যকে দেখে তা ব্যাখ্যা করেন।

শিল্প, ইতিহাস, সাহিত্য এবং সাংস্কৃতিক গবেষণায় প্রাচ্যতত্ত্ব হল প্রাচ্য বা পূর্ব বিশ্বের বিভিন্ন দিকের অনুকরণ বা চিত্রায়ন। এই কাজগুলো সাধারণত পশ্চিমা বিশ্বের নকশাকার, লেখক ও শিল্পীরা করে থাকেন। প্রাচ্যকেন্দ্রিক চিত্রকর্ম বিশেষত মধ্য প্রাচ্যকে কেন্দ্র করে অঙ্কিত চিত্রকর্ম উনিশ শতকের একাডেমিক শিল্পের অন্যতম বিশেষত্ব ছিল। পশ্চিমা সাহিত্যেও প্রাচ্যকেন্দ্রিক বিষয়গুলিতে একই রকম আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়।

১৯৭৮ সালে এডওয়ার্ড সাঈদের ‘ওরিয়েন্টালিজম’ বা ‘প্রাচ্যতত্ত্ব’ নামে বইটি প্রকাশের পর থেকে একাডেমিক বিষয় হিসেবে প্রাচ্যতত্ত্ব সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা শুরু হয়। এর পর থেকেই মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকার সমাজগুলোর প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের নেতিবাচক মনোভাবকে বোঝাতে ‘প্রাচ্যতত্ত্ব’ শব্দটির বহুল ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। সাঈদের মতে, পশ্চিমা বিশ্ব এই সমাজগুলিকে স্থিতিশীল এবং অনুন্নত হিসাবে উপস্থাপন করার ফলে প্রাচ্য সংস্কৃতির প্রতি এমন এক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়েছে যা সমীক্ষা ও চিত্রায়নের মাধ্যমে সাম্রাজ্য শক্তির সেবায় কাজে লাগানো যেতে পারে। সাঈদের মতে, কল্পিত এই তত্ত্বানুসারে পশ্চিমা সমাজকে একটা বিকশিত, যৌক্তিক, নমনীয় এবং উন্নত সমাজ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।

ওরিয়েন্টালিজম (Orientalism) হচ্ছে এডওয়ার্ড ডব্লিউ. সাঈদের লেখা ১৯৭৮ সালের একটি গ্রন্থ, যেখানে লেখক প্রাচ্যতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন। এখানে প্রাচ্যতত্ত্ব বলতে লেখক বুঝিয়েছেন সেই মনোভাবকে যার দ্বারা পাশ্চাত্য প্রাচ্যকে, প্রাচ্যের সমাজকে ও প্রাচ্যের জনগণকে দেখে থাকে। এখানে প্রাচ্য বলতে লেখক এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যকে বুঝিয়েছেন। সাঈদ এর মতে, প্রাচ্যবাদ এর মনোভাবটি শক্তভাবে সাম্রাজ্যবাদী সমাজগুলোর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত যেগুলো সাম্রাজ্যবাদকে তৈরি করেছে, এবং যারা রাজনৈতিকভাবে ও ক্ষমতা-সম্পর্কিতভাবে প্রাচ্যবাদ এর কাজ করে চলেছে বা টিকিয়ে রাখছে।

সাঈদ এর মতে, মধ্যপ্রাচ্যে শাসক আরব সম্ভ্রান্তদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চর্চা নির্দেশ করছে যে তারা সাম্রাজ্যবাদের অধস্তন শাসনকর্তা হিসেবে কাজ করছে, এবং তারা ফরাসী, ইংরেজ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রাচ্যবাদীদের দ্বারা তৈরিকৃত আরব সংস্কৃতিকে ধারণ ও বহন করছে।

প্রাচ্যতত্ত্ব হচ্ছে পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের সমাজ এর মধ্যকার পার্থক্যকে বাড়িয়ে দেখানো, পাশ্চাত্যের শ্রেষ্ঠত্বকে ধরে নেয়া, এবং প্রাচ্য সম্পর্কিত গতানুগতিক বিশ্লেষণী মডেলগুলোর প্রয়োগ। যেমন প্রাচ্যতত্ত্ব হচ্ছে ভ্রান্ত সাংস্কৃতিক প্রতিফলন এর উৎস্য যা প্রাচ্য সম্পর্কে পাশ্চাত্যের চিন্তাধারা ও বোধ এর ভিত্তি তৈরি করে, আর এটি বিশেষ করে দেখা যায় মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষেত্রে।

 

সান

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত