ইসরায়েল-গাজায় সেনা পাঠাবে না যুক্তরাষ্ট্র: কমলা হ্যারিস

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৩, ১৫:৪৯ |  আপডেট  : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২৫

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের স্থলসেনারা যে অভিযান চালাচ্ছে, তা সহজে বন্ধ হবে না। রোববার (২৯ অক্টোবর) তিনি বলেন, পরিস্থিতি খুব সহজে স্বাভাবিক হবে না। গাজার লড়াই শেষ হতে সময় লাগবে।

রোববার দুপুরেও একাধিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল, গাজায় বেসামরিক মানুষ কী অবস্থায় আছে, তার কোনো খোঁজ মিলছে না। ইন্টারনেট পরিষেবাও পুরোপুরি ব্যাহত হয়েছে। তবে এদিন রাত থেকে ধীরে ধীরে গাজায় ইন্টারনেট সংযোগ সচল হতে শুরু করে বলে জানায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

এদিকে, হামাস দাবি করেছে যে রোববার গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে তাদের। হামাসের মুখপাত্র জানিয়েছেন, উত্তর গাজায় আধুনিক সমরাস্ত্র নিয়ে আক্রমণ চালাচ্ছে ইসরায়েল। হামাসের সৈন্যরাও তুমুল লড়াই চালাচ্ছে।

অন্যদিকে, গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার জন্য প্রতিরক্ষা বাহিনী ও দেশীয় গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতাকে দায়ী করায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী। তার ওই মন্তব্যে এরই মধ্যে ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন জরুরি মন্ত্রিসভায় ভাঙন দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে দ্য জেরুজালেম পোস্ট। এমনকি, ওই মন্তব্যের জেরে সৃষ্টি রাজনৈতিক উত্তাপের মুখে ক্ষমাও চেয়েছেন নেতানিয়াহু।

জেরুজালেম পোস্ট বলে, রোববার মধ্যরাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে নেতানিয়াহু যে পোস্ট দিয়েছিলেন, তাতে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে তার বিবাদ থাকার বিষয়টি সবার সামনে চলে আসে। পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হতে শুরু করায় এক্সে দেওয়া ওই পোস্ট ডিলিট করে দেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী। পরে সামরিক বাহিনী ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের কাছে ক্ষমা চান তিনি।

এদিকে, নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস গার বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলের সংঘাত সমানুপাতিক নয়। ৭ অক্টোবর যে ঘটনা ঘটেছিল, তা ভয়াবহ। কিন্তু হামাসের হামলায় ১৪০০ নিহত হয়েছিল। আর ২০০ জনের কিছু বেশি মানুষকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বলেছেন, ইসরায়েল বা গাজায় সেনা পাঠানোর কোনো আগ্রহ নেই ওয়াশিংটনের। সিবিএস নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ইসরায়েল বা সিরিয়ায় আমাদের এ ধরনের কোনো আগ্রহ নেই বা আমরা এ ধরনের কোনো পরিকল্পনাও করছি না।

ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে বলে দেশটির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করার সময় তিনি বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ইসরায়েলে ১৪০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কোনো রকম প্রশ্ন ছাড়াই ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে হামাস ফিলিস্তিনিদের প্রতিনিধিত্ব করে না। ফিলিস্তিনিদেরও সমান নিরাপত্তা ও সুরক্ষা, আত্মমর্যাদা রক্ষার অধিকার রয়েছে। আমরা খুব স্পষ্ট করেই বলেছি যে, যুদ্ধের নিয়ম অবশ্যই মেনে চলতে হবে এবং সেখানে মানবিক সহযোগিতা সরবরাহ করতে হবে।

তবে সম্প্রতি মার্কিন সংবাদ সংস্থা দ্যা ইন্টারসেপ্ট দাবি করেছে যে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার কাছে ইসরায়েল-অধিকৃত ভূখণ্ডে গোপন সামরিক ঘাঁটি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল যখন গাজা উপত্যকা ভয়াবহ বর্বরতা চালাচ্ছে ঠিক সে সময়ই এমন উদ্যোগ নিয়েছে ওয়াশিংটন।

ইন্টারসেপ্ট বলছে, পেন্টাগন নিঃশব্দে গাজা উপত্যকা থেকে মাত্র ২০ মাইল দূরে নেগেভ মরুভূমির গভীরে গোপন সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের জন্য এগিয়ে চলেছে। এই ঘাঁটির কোডনাম দেওয়া হয়েছে সাইট- ৫১২।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘস্থায়ী এই ঘাঁটি প্রকৃতপক্ষে একটি রাডার স্টেশন হিসেবে কাজ করবে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণের জন্য এই ঘাঁটি নির্মাণ করা হবে।

৭০০ মাইল দূরে অবস্থিত ইরান থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হচ্ছে কি না মূলত সেদিকেই এই ঘাঁটির নজর থাকবে। গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস হাজার হাজার রকেট দিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালায় এবং সেসব রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয় ইসরায়েল।

ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধ শুরুর প্রায় দুই মাস আগে পেন্টাগন সাইট ৫১২-তে মার্কিন সেনাদের জন্য এই ঘাঁটি নির্মাণ করতে তিন কোটি ৫৮ লাখ ডলারের একটি চুক্তি করে।

তবে মার্কিন প্রশাসন বরাবরই বলে আসছেন যে, তারা ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের সংঘাতে সেনা মোতায়েন করবে না। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তার প্রশাসন দাবি করে, বর্তমান যুদ্ধে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে মার্কিন সেনা মোতায়েনের বিষয়ে ওয়াশিংটনের কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে অধিকৃত ভূখণ্ডে এরইমধ্যে গোপন মার্কিন সামরিক উপস্থিতি রয়েছে এবং সরকারি চুক্তি এবং বাজেট বরাদ্দের নথিপত্র থেকে এটা স্পষ্ট যে, দিন দিন তা বাড়ছে।যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত আট হাজার বেসামরিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। শহর ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েলের এই আচরণ সমানুপাতিক নয়।

আন্তর্জাতিক আদালতের প্রধান প্রসিকিউটর রোববার গাজা ও রাফাহ সীমান্ত সফরে গিয়েছিলেন। ওই আদালতের এক কর্মী নাম না প্রকাশের শর্তে জানিয়েছেন, ইসরায়েলের বোমা হামলা পুরো ফিলিস্তিনকে বিপাকে ফেলেছে। জীবন সেখানে দুর্বিসহ হয়ে গেছে।

 

সান

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত