ইউক্রেইনে যুদ্ধ থামাতেই হবে-রামাফোসা
প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৩, ১২:৫৬ | আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০৩
রাশিয়ায় গিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বলেছেন, ইউক্রেইনে যুদ্ধ থামাতেই হবে।
আফ্রিকার ৭ দেশের নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত এক শান্তি মিশনের অংশ হিসেবে রামাফোসা ও অন্যরা শনিবার সেইন্ট পিটার্সবার্গে পুতিনের সঙ্গে দেখা করেন, সেখানেই দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট তার রুশ কাউন্টারপার্টকে এ কথা বলেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
আগের দিনই আফ্রিকার এই নেতারা ইউক্রেইনে গিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করেছিলেন।
জেলেনস্কি তাদের বলেছিলেন, ইউক্রেইনের ভূখণ্ডে যতক্ষণ রুশ সেনা থাকবে, ততক্ষণ তিনি রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসবেন না।
শনিবার পুতিন আফ্রিকান মিশনকে বলেছেন, কিইভ বরাবরই আলোচনাকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট এদিন আফ্রিকান নেতাদেরকে গত বছরের মার্চে তুরস্কের মধ্যস্থতায় মস্কো-কিইভ আলোচনায় ইউক্রেইনের উদ্যোগে হওয়া খসড়া চুক্তির কপি এবং সেখানে ইউক্রেইনের মধ্যস্থতাকারী দলের প্রধানের স্বাক্ষরও দেখান বলে জানিয়েছে তাস।
আলোচনায় আগ্রহ জানাতেই রাশিয়া কিইভ ও এর আশপাশ থেকে সৈন্য সরিয়ে নিয়েছিল বলেও জানান তিনি।
সেইন্ট পিটার্সবার্গের ওই বৈঠকে রামাফোসা উভয় পক্ষের মধ্যে বন্দিবিনিময় চালু রাখার আহ্বান জানান এবং রাশিয়া ইউক্রেইন থেকে যে শিশুদের সরিয়ে নিয়েছে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ করেন।
এই সময় পুতিন তাকে থামিয়ে বলেন, রাশিয়া মূলত ওই শিশুদের সুরক্ষিত অবস্থায় রেখেছে।
“শিশুরা পবিত্র। আমরা তাদেরকে সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল থেকে সরিয়ে নিয়েছে, তাদের জীবন ও স্বাস্থ্যের সুরক্ষা দিয়েছি,” বলেছেন তিনি।
রামাফোসা রুশ প্রেসিডেন্টকে ইউক্রেইনে যুদ্ধের প্রভাবে আফ্রিকার যে ক্ষতি হচ্ছে, সে কথা বিবেচনা করতে বলেন এবং কূটনীতির মাধ্যমে বিরোধ মীমাংসার আহ্বান জানান।
“যুদ্ধ অনন্তকাল চলতে পারে না। সব যুদ্ধের মীমাংসা এবং এক পর্যায়ে এসে শেষ হতে হয়। আমরা এখানে একটা স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই, সেটি হল- এই যুদ্ধের অবশ্যই শেষ হতে হবে,” বলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট।
দুই পক্ষের সংঘাতের ফলে ইউক্রেইন থেকে শস্য এবং রাশিয়া থেকে সার রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে; এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে আফ্রিকার দেশগুলো, বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তাহীনতাও তীব্রতর হচ্ছে।
পুতিন খাদ্যশস্যের এ সংকটের জন্য ইউক্রেইনে যুদ্ধের চেয়েও পশ্চিমাদের দায়ই বেশি দেখছেন। তিনি বলেছেন, জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় হওয়া চুক্তির ফলে ইউক্রেইন কৃষ্ণসাগর দিয়ে যে পরিমাণ শস্য রপ্তানির সুযোগ পেয়েছে, তার মাত্র ৩ শতাংশ গেছে বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে। বেশিরভাগই গেছে ধনী ইউরোপীয় দেশে।
পুতিন ইউক্রেইনে তার ভাষায় ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ নিয়ে আফ্রিকার ‘ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানের’ প্রশংসা করেছেন।
ইউক্রেইন ও রাশিয়ায় যাওয়া আফ্রিকান এই শান্তি মিশনে দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়াও মিশর, সেনেগাল, কঙ্গো-ব্রাজাভিল, কমোরোস, জাম্বিয়া ও উগান্ডার প্রতিনিধিরা ছিলেন।
আফ্রিকা মহাদেশের বেশিরভাগ দেশ ইউক্রেইনে চলমান সংঘাতকে রাশিয়া আর পশ্চিমাদের যুদ্ধ হিসেবেই দেখলেও কিছু দেশের দৃষ্টিভঙ্গিতে ভিন্নতাও আছে।
বিবিসি লিখেছে, যুদ্ধ শুরুর পর এখন পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা ও উগান্ডাকে রাশিয়ার দিকেই হেলে থাকতে দেখা গেছে, অন্যদিকে জাম্বিয়া আর কমোরোসের পক্ষপাতিত্ব পশ্চিমাদের দিকে। মিশর, সেনেগাল আর কঙ্গো-ব্রাজাভিলকে মোটামুটি নিরপেক্ষই বলা চলে।
এমন এক সময়ে আফ্রিকার এই মিশন ইউক্রেইন ও রাশিয়া সফর করল, যখন বাখমুতের কাছে কিইভবাহিনীর পাল্টা আক্রমণ নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে।
রাশিয়া বলছে, ইউক্রেইনের পাল্টা আক্রমণ ব্যর্থ হয়েছে; অন্যদিকে কিইভ বলছে, তাদের বাহিনী এক সপ্তাহে দক্ষিণে ১০০ বর্গকিলোমিটার জায়গা পুনর্দখলে সক্ষম হয়েছে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত