আর মাত্র ১০ ঘন্টা বেঁচে থাকার মত অক্সিজেন অবশিষ্ট রয়েছে টাইটানে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৩, ১২:২২ |  আপডেট  : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১১

কানাডার কাছে আটলান্টিক মহাসাগরে পানির নিচে থাকা টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ পর্যটকদের দেখাতে ডুব দেওয়া ডুবোযান টাইটানের খোঁজ এখনও মেলেনি।

যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড জানিয়েছে, টাইটান নামের ওই ডুবোযানটির খোঁজে চলা তল্লাশি অভিযানের সময় নতুন আরও শব্দ শনাক্ত হয়েছে।

কোস্টগার্ডের ক্যাপ্টেন জেমি ফ্রেডরিক জানিয়েছেন, এসব শব্দের উৎস কী তারা এখনও জানতে পারেননি, কিন্তু উদ্ধারকর্মীদের দলগুলো শব্দের উৎসের খোঁজে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন।  

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোররাতের (১০.০০ জিএমটি) পর টাইটানের আরোহীদের নিঃশ্বাস নেওয়ার মতো আর কোনো অক্সিজেন যানটিতে থাকবে না বলে জানিয়েছে পর্যটন সংস্থা ওশেনগেইট।

এ পরিস্থিতিতে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ডুবোযানটির খোঁজে তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে। বাড়ানো হয়েছে তল্লাশি এলাকার আওতা। এখন উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের প্রায় ২৬ হাজার বর্গকিলোমিটারজুড়ে ও পানির আড়াই মাইল গভীরতা পর্যন্ত ডুবোযানটির খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে বিবিসি জানিয়েছে।

ক্যাপ্টেন ফ্রেডরিক সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমাদের আশাবাদী থাকতে হবে।” 

আগের হিসাব অনুযায়ী, টাইটন ডুবোযানে অবশিষ্ট অক্সিজেনে আর ১০ ঘণ্টার মতো চলবে।

রোববার পাঁচ আরোহী নিয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে ডুব দেওয়ার পৌনে দুই ঘণ্টার মাথায় টাইটানের সঙ্গে পানির ওপরে থাকা নিয়ন্ত্রক জাহাজ পোলার প্রিন্সের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়; তারপর থেকে উত্তর আটলান্টিকের বিশাল এলাকাজুড়ে তল্লাশি অভিযান চললেও এখন পর্যন্ত একটি ট্রাকের আকারের ২২ ফুট দৈর্ঘের ডুবোযানটির কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।

মহাসাগরের তল থেকে আসা শব্দ যেখানে শনাক্ত হয়েছে উদ্ধারকর্মীরা বুধবার উত্তর আটলান্টিকের সেই নির্দিষ্ট এলাকায় তাদের অনুসন্ধান জোরদার করেছেন। তবে কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছেন, ওই শব্দগুলো নিখোঁজ ডুবোযান থেকে নাও আসতে পারে। 


যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড জানিয়েছে, মঙ্গলবার ও বুধবার সোনার বয়া ব্যবহার করে কানাডার আকাশযান যেখানে শব্দগুলো শনাক্ত করেছে সেখানে পানির নিচে দূর থেকে পরিচালিত যান (আরওভি) মোতায়েন করা হয়েছে, কিন্তু টাইটানের উপস্থিতির কোনো ইঙ্গিত মেলেনি।

কোস্টগার্ডের ক্যাপ্টেন ফ্রেডরিক জানিয়েছেন, শব্দগুলো বিশ্লেষণ করে কোনো সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। 

এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “একটি তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযানের মধ্যবর্তী পর্যায়ে আপনার আশা থাকবে। শনাক্ত করা শব্দগুলো কী আমরা জানি না।”

কোস্টগার্ড জানিয়েছে, বুধবার রাতে ফ্রান্সের গবেষণা জাহাজ আটলান্টা দূরে থেকে পরিচালিত একটি রবোটিক যান মোতায়েন করার পথে ছিল যা টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ যে গভীরতায় আছে তার চেয়েও গভীরে নামতে পারে।

ভিক্টর ৬০০০ নামের এ রোবোটিক্যালি অপারেটেড ভেহিক্যাল (আরওভি) টাইটানকে উদ্ধারে পানির তলদেশে যাবে এবং ডুবোযানটিকে পানির উপর ভেসে উঠতে বাধা দিচ্ছে এমন কোনো কিছু যদি থেকে থাকে তবে সেটিকে সরিয়ে দেবে।

যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর অনুরোধে ভিক্টরকে পাঠানো হয়েছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।

টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষটি রয়েছে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের ৩ হাজার ৮০০ মিটার নিচে। ১৯১২ সালে ইংল্যান্ডের নিউ সাউদাম্পটন থেকে নিউ ইয়র্কের উদ্দেশ্যে প্রথম যাত্রায় বিশাল আইসবার্গের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে গিয়েছিল তখনকার সবচেয়ে বড় যাত্রীবাহী জাহাজ টাইটানিক, প্রাণ গিয়েছিল দেড় হাজার মানুষের। দুটুকরো হয়ে যাওয়া টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ ১৯৮৫ সালে খুঁজে পাওয়া যায়।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পর্যটক সংস্থা ওশেনগেইট তাদের ডুবোযান টাইটানের মাধ্যমে পর্যটকদের আটলান্টিকের নিচে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে নিয়ে যেতো। এজন্য পর্যটকদের আড়াই লাখ ডলারের মতো গুণতে হয়।  

টাইটানের এবারের যাত্রায় আরোহী পাঁচজন হচ্ছেন ব্রিটিশ ধনকুবের, বিমান সংস্থা অ্যাকশন এভিয়েশনের চেয়ারম্যান হামিশ হার্ডিং; পাকিস্তানের অন্যতম বৃহৎ কোম্পানি এংরো করপোরেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ব্যবসায়ী শাহজাদা দাউদ ও তার ছেলে সুলেমান দাউদ, ফরাসী পর্যটক পল অঁরি নারজিল ও ওশেনগেইটের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টকটন রাশ।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত