আদালত অবমাননার শুনানি মুলতবি, সোহরাওয়ার্দীতে গাছ কাটা আপাতত বন্ধই থাকছে
প্রকাশ: ২০ মে ২০২১, ১৩:৫৫ | আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৪
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ কাটা ও দোকান নির্মাণ কার্যক্রমের ওপর স্থিতাবস্থা চেয়ে করা আদালত অবমাননার আবেদনের শুনানি দুই সপ্তাহের জন্য মুলতবি (স্ট্যান্ডওভার) করেছেন হাইকোর্ট। এ সময়ের মধ্যে গাছ কাটা আপাতত বন্ধই থাকছে।
এ বিষয়ে শুনানির নির্ধারিত দিনে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন আদালতকে জানান, মন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা পরিবেশ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। আর এ বিষয়ে আরও একটি রিট হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চে দায়ের করা আছে। এরপর আদালত বিষয়টি দুই সপ্তাহের জন্য মুলতবি (স্ট্যান্ডওভার) করেন।
বৃহস্পতিবার (২০ মে) হাইকোর্টের বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হয়। আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
এর আগে গত ১১ মে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আগামী ২০ মে পর্যন্ত গাছ না কাটার মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
নির্দেশনার বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানাতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেছিলেন আদালত। একই সঙ্গে এ বিষয়ে শুনানির জন্য ২০ মে পরবর্তী দিন নির্ধারণ করেছিলেন হাইকোর্ট। তারই ধারাবাহিকতায় আজ সেটির শুনানি হয় বলেও নিশ্চিত করেন রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। আজ সেটির শুনানি আগামী দুই সপ্তাহ স্ট্যান্ডওভার করেছেন আদালত।
মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদনের শুনানি নিয়ে গত (১১ মে) হাইকোর্টের একই আদালতের বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে ওই দিনও আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
এর আগে গত ৯ মে আদালতের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রেস্টুরেন্ট স্থাপনের জন্য গাছ কাটা বন্ধ করতে হাইকোর্টে আদালত অবমাননার মামলা করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।
তার আগে আদালতের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রেস্টুরেন্ট স্থাপনের জন্য গাছ কাটা বন্ধ করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আরও একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছিল।
মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ, গণপূর্ত বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ার মো. শামিম আখতার এবং চিফ আর্কিটেক্ট অব বাংলাদেশ মীর মনজুর রহমানকে এ নোটিশ পাঠিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
নোটিশ পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছিল। অন্যথায় প্রতিকার চেয়ে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছিল। এর প্রতিকার না পেয়ে তারই ধারাবাহিকতায় হাইকোর্টে আদালত অবমাননার মামলা করা হয়।
এছাড়াও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শতবর্ষী ও বিলুপ্তপ্রায় পাখিদের আশ্রয়স্থল হিসেবে সেখানকার গাছ না কাটতে সরকার সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিশ পাঠায় ছয় সংগঠন ও এক ব্যক্তি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় সচিব, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, প্রধান বন সংরক্ষক, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ও গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলীকে এই নোটিশ পাঠানো হয়।
গত ৬ মে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফরমস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), নিজেরা করি, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), আইন ও শালিস কেন্দ্র (আসক) এবং স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন একই নোটিশ পাঠান।
নোটিশে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বিনষ্টকরণ হতে বিরত থাকতে এবং এ উদ্যানের শতবর্ষী ও বিলুপ্তপ্রায় পাখিদের আশ্রয়স্থল বৃক্ষগুলোকে না কাটতে এবং ইতোমধ্যে কর্তন করা বৃক্ষগুলোর জায়গায় একই প্রজাতির তিনগুণ বৃক্ষরোপণের দাবি জানানো হয়। নোটিশ কার্যকর না হওয়ায় তারা এ বিষয়ে আরও একটি রিট করেছেন। সেটি শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত