আদমদীঘিতে ক্ষুরা রোগে এক মাসে ৩০টি গরুর মৃত্যু
প্রকাশ: ২ জুলাই ২০২৪, ১৭:৪২ | আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১৩
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলায় হঠাৎ করে গরুর ক্ষুরা রোগ দেখা দিয়েছে। গত এক মাসে এ উপজেলায় ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হয়ে অন্তত ৩০টি গরুর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আক্রান্ত হয়েছে কৃষক ও বিভিন্ন খামারের প্রায় পাঁচশতাধিক গরু। উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তাদের পরামর্শে ভ্যাকসিন-ওষুধ দিয়েও এ রোগটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে উপজেলার কৃষক ও খামারীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
এদিকে বিষয়টি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকেও ভাবিয়ে তুলেছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ইতোমধ্যে আক্রান্ত গরুর রক্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। তাদের ধারণা, এটি ক্ষুরা রোগের নতুন ধরণ। তাই ভ্যাকসিন ও ওষুধে কাজ হচ্ছে না। গতকাল মঙ্গলবার সকালে দমদমা গ্রামে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ওই গ্রামের পূর্বপাড়ায় হাসান আলীর প্রায় ১৪ মণ ওজনের ফ্রিজিয়ান ষাঁড় ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হয়ে সোমবার মারা যায়। হাসানের বাড়ির সামনে ভীড় করছে গ্রামের শত শত নারী পুরুষ। এছাড়াও গত কয়েক দিনে ওই গ্রামের দক্ষিণপাড়ার ভুট্রু মিয়ার একটি গরু, নজরুল ওরফে নজুর দুটি, রবিউলের দুটি, পিন্টুর একটি, ফেরদৌসের একটি, চাঁন মিয়ার একটি, নান্টুর একটি, মেজরের একটি, বগা মিয়ার একটি, রায়হানের একটি, বাদলের একটি’সহ মোট ২০টি গরু মারা যায়। প্রায় মাস খানেকের ব্যবধানে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অন্তত ৩০ টি গরু ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এরমধ্যে দমদমা গ্রামেই মারা গেছে ২০টি গরু। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, আদমদীঘি উপজেলায় মোট বাণিজ্যিক খামার রয়েছে ১০০টি। এছাড়া পারিবারিক খামার রয়েছে প্রায় ২ হাজার। এসব খামার গুলোতে প্রাণী সম্পদ অফিসের তথ্য মতে মোট ৮০ হাজার গরু রয়েছে। গত তিন, চার সপ্তাহ আগে উপজেলায় গরুর ক্ষুরা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। খবর পেয়ে প্রানী সম্পদ অফিসের পক্ষ থেকে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া গরু ও আক্রান্ত গরু মালিকদের সচেতন করা সহ ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত গরুর রক্ত নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য অর্দ্ধতন কর্মকর্তা বরাবর অবহিত করেন প্রানীসম্পদ অফিস। উপজেলার দমদমা গ্রামের গরুর মালিক হাসান আলী বলেন, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে তার গরুটি খুড়া রোগে আক্রান্ত ছিল, পায়ের ক্ষুরা রোগ অনেকটা সেড়ে গিয়েছিল। গত সোমবার সকালে গরুটিকে পানি খাওয়ানোর পর সেটি অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং কয়েক মিনিটের মধ্যে মারা যায়। তিনি বলেন, গত কোরবানী ঈদে তার গরুটির সাড়ে চার লাখ টাকা দাম বলেছিল, পরে আর বিক্রি হয়নি। ইচ্ছা ছিল সামনে কোরবানীর ঈদে গরুটি বিক্রি করবো, কিন্তু আমার সব শেষ হয়ে গেলে। ওই গ্রামের শ্যামল প্রামানিক জানান, মঙ্গলবার (২জুলাই) সকালে তার একটি বকনা বাছুর ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। যার বাজার মূল্য প্রায় ৫০ হাজার টাকা। উপজেলার গরু মালিকরা এসব ক্ষুরা রোগের কারণে গরু নিয়ে বড় দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছে। গরুকে ভ্যাকসিন সহ ওষুধ দিয়েও কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আমিরুল ইসলাম বলেন, গরু মারা যাওয়ার খবর পেয়ে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে এ রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ভ্যাকসিন সহ মানুষের মধ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টি, উঠান বৈঠক ও মেডিকেল ক্যাম্প করে রোগ প্রতিকার সম্পর্কে অবগত করা হচ্ছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এ রোগটি ক্ষুরা রোগের নতুন ধরন। তাই আমরা উদ্ধর্তন প্রাণিসম্পদ বিভাগের বিশেষজ্ঞ দলকে অবহিত করেছি। তারা এসে আক্রান্ত গরুর রক্ত সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়ার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর আমরা নিশ্চিত ভাবে বলতে পারবো এর আসল কারণ। আশা করা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহে এর ফলাফল পাওয়া যাবে। এরপর করণীয় কি তা নির্ধারণ করা হবে।
সান
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত