আজ আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৯ আগস্ট ২০২৩, ১১:৪৩ |  আপডেট  : ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২০:০০

আজ ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। জাতিসংঘ ১৯৯৪ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী পালন করে আসছে এই দিবসটি। বাংলাদেশে ২০০৪ থেকে পালিত হয়ে আসছে। মূলত, ২০০১ সালে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম গঠিত হবার পরে বেসরকারীভাবে বৃহৎকারে আর্ন্তজাতিক দিবসটি পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলা রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, জয়পুরহাট, নাটোর, নওগাঁ, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা ইত্যাদি জেলাগুলিতে সাঁওতাল, শিং, ওঁরাও, মুন্ডারি, বেদিয়া মাহাতো, রাজোয়ার, কর্মকার, তেলী,তুরী, ভুইমালী, কোল, কড়া, রাজবংশী, মাল পাহাড়িয়া, মাহালী ইত্যাদি জাতিগোষ্ঠি বসবাস করছে। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে [রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি] চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, মুরং বা ম্রো, খিয়াং, লুসাই, পাংখোয়া,বম, খুমী ও চাক জনগোষ্ঠি বসবাস করছে। বিশ্বের তাবৎ আদিবাসী জনগোষ্ঠির পাশাপাশি বাংলাদেশের ৩০ লক্ষাধিক আদিবাসীরা তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিচয়, ভূমির অধিকার ও নাগরিক মর্যাদার স্বীকৃতি দাবীতে দিবসটি উদ্‌যাপন করে থাকেন।

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন, সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীদের সমান অধিকারে বিশ্বাসী, তাদের সংস্কৃতি ধর্মকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা করে থাকে। কিন্তু কি হিসাবে আখ্যায়িত করলে সঠিক হবে তা অনেকের অজানা। তাদের সংস্কৃতি, শারিরীক ও চারিত্রিক গঠন আলাদা কিন্তু তারা একটি দেশের সাধারণ নাগরিকের মত অধিকার সকলের প্রাপ্য।  দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সম্বোধনের শব্দ নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশের আদিবাসীদের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, সম্প্রদায় বা উপজাতি হিসেবে আখ্যায়িত করলেও বাংলাদেশের আদিবাসীরা নিজেদের আদিবাসী হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। জাতিসংঘও তাদের দাপ্তরিক কাজে ইন্ডিজিনাস অর্থাৎ আদিবাসী শব্দটি ব্যবহার করে। সরকারের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যাদের আদিবাসী বলা হচ্ছে, তারা এখানকার আদি বাসিন্দা নয়। তারা হচ্ছে, এ ভূখণ্ডের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী (বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী) ডা. দীপু মনি ২০১১ সালে ঢাকায় বিদেশি কূটনীতিকদের আহ্বান জানিয়েছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের ‘ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর’ জনগণকে যেন ‘আদিবাসী’ বলা না হয়। সরকারের অবস্থান হচ্ছে, এখানকার মানুষের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ৪ হাজার বছরের পুরনো। প্রতœতাত্ত্বিক গবেষণা সেটিই প্রমাণ করে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ মিয়ানমার এবং কম্বোডিয়া থেকে আসা শুরু করে। সেজন্য তারা এখানকার আদিবাসী নয়। অন্যদিকে ১৯৯৭ সালে সম্পাদিত শান্তিচুক্তিতেও পার্বত্য চট্টগ্রামকে ‘উপজাতি অধ্যুষ্যিত অঞ্চল’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। আর জাতিসংঘের কোনো দলিলেও ‘আদিবাসী’ বিষয়ে সর্বসম্মত সংজ্ঞা নেই। ২০০৭ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬১তম অধিবেশনে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে একটি ঘোষণাপত্র অনুমোদিত হয়। এতে ১২টি ক্ষেত্রে আদিবাসীদের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়া হয়। বিশেষ করে ভূমি সংক্রান্ত অধিকারগুলোই ছিল মুখ্য। ঘোষণাপত্রে- ভূমি ও ভূখণ্ডের অধিকার; আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি ও ভূখণ্ডের ওপর সামরিক কার্যক্রম বন্ধের অধিকার; তাদের ভূমি থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ প্রক্রিয়া থেকে রেহাই পাওয়ার অধিকার এবং তাদের সম্মতি ছাড়া যেসব ভূমি, ভূখণ্ড এবং সম্পদ ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে- সেগুলো পুনরুদ্ধার ও ফেরত পাওয়ার অধিকারের কথা বলা হয়।

জাতিসংঘ কর্তৃক ১৯৯৩ সালকে আদিবাসীবর্ষ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। বিশ্বব্যাপী আদিবাসী জনগণ তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিচয়, ভূমির অধিকার, অঞ্চল বা টেরিটরির অধিকার, প্রাকৃতিক সম্পদের অধিকার ও নাগরিক মর্যাদার স্বীকৃতি দাবীতে দিবসটি পালিত হয়। কানাডার অস্ট্রেলিয়ায় ৫২টি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠি(আমাটা, বামাগা, কয়েন প্রভৃতি) বা আদিবাসী বসবাস করছে। আমেরিকায় ক্রো জাতি, আর্জেন্টিনায় কাসি জাতি।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত