৯০ বছরে পা রাখলেন সন্‌জীদা খাতুন

  গ্রামনগর বার্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ৪ এপ্রিল ২০২২, ১১:২৭ |  আপডেট  : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:৫৩

সন্‌জীদা খাতুন আজ ৪ এপ্রিল ৯০ বছরে পা রাখলেন। তাঁর পরিচয় অনেক, কাজের পরিধি বিস্তৃত, অবদানের তাৎপর্য সুদূরপ্রসারী। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের তিনি অগ্রণী ব্যক্তিত্ব। সংগীতজ্ঞ, সংগঠক, লেখক, গবেষক, শিক্ষক হিসেবে তিনি অনন্য কৃতীর অধিকারী। তাঁর এই বিপুল কর্মময় বর্ণাঢ্য জীবন সামগ্রিকভাবে বাঙালির মানস ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে। সে কারণে আজ তাঁর জন্মদিন জাতির জন্য আনন্দের। 

সন্‌জীদা খাতুনের পারিবারিক সূত্র জানায়, করোনা পরিস্থিতি এবং তিনি শারীরিকভাবে কিছুটা অসমর্থ হওয়ায় এবার তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি। অনেকেই বাড়িতে গিয়ে তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু লোকসমাগম এড়াতে সবাইকেই বিনীতভাবে বারণ করা হয়েছে। 

অনেক দিন পর গত শুক্রবার সন্‌জীদা খাতুন ধানমন্ডির ছায়ানট–সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে গিয়েছিলেন। উপলক্ষ ছিল পয়লা বৈশাখ সামনে রেখে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন। সেখানেই তিনি বলেছিলেন, জন্মদিনের অনুষ্ঠানের ধকল নেওয়া তাঁর পক্ষে আর সহজ হবে না। সেদিন তিনি সবাইকে আগাম শুভেচ্ছা জানান। করোনা মহামারির দুঃসময় অতিক্রম করে নতুন উদ্যমে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

সন্‌জীদা খাতুনের জন্ম ১৯৩৩ সালের ৪ এপ্রিল। বাবা কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক। মা সাজেদা খাতুন গৃহিণী। সন্‌জীদা খাতুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৪ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক, ১৯৫৫ সালে ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর এবং ১৯৭৮ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষকতা দিয়েই তাঁর কর্মজীবন শুরু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে দীর্ঘকাল অধ্যাপনা করেছেন।

সন্‌জীদা খাতুন জীবনের প্রায় শুরু থেকেই ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকেই তিনি সক্রিয় ছিলেন। যখন তিনি কলেজের শিক্ষার্থী, তখন থেকেই পড়াশোনা, আবৃত্তি ও অভিনয়ের পাশাপাশি গানের চর্চা করেছেন। পাশাপাশি সাংগঠনিক কাজেও যুক্ত ছিলেন। শিল্পী কামরুল হাসানের নেতৃত্বে ব্রতচারী আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। মুকুল ফৌজেও কাজ করেছেন। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপনের মধ্য দিয়ে বাঙালির সাংস্কৃতিক অধিকার আদায়ের যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তিনি ছিলেন তাঁর অন্যতম ভূমিকায়।

বাংলাদেশের এক অনন্য সংগঠন ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম সন্‌জীদা খাতুন। সংগঠনটি দেশে একটি মানবিক বাঙালি সাংস্কৃতিক সংগ্রাম করে চলেছে। ১৯৬৭ সালে ছায়ানট পয়লা বৈশাখে নববর্ষবরণের যে প্রভাতি সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল, তা আজ জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। ২০০১ সালে নববর্ষের এ অনুষ্ঠানে বড় রকমের জঙ্গি হামলা সত্ত্বেও ছায়ানট বা সন্‌জীদা খাতুন এই আয়োজন থেকে সরে যাননি। দশকের পর দশক ধরে ছায়ানট নানা সময়ে শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু এড়িয়ে বা সব বাধাবিপত্তি পেরিয়ে তার সাহসী পথচলা অব্যাহত রেখেছে। এখন সভাপতি হিসেবে ছায়ানটকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সন্‌জীদা খাতুন।

আত্মজীবনী সহজ কঠিন দ্বন্দ্বে ছন্দেতে সন্‌জীদা খাতুন লিখেছেন, ‘রাজনীতি আমার ক্ষেত্র নয়, সাংস্কৃতিক আন্দোলনই আমার আসল কাজের ক্ষেত্র। বিশেষ করে, বাংলাদেশ বা বাঙালি সাংস্কৃতিক স্বাধিকার সংরক্ষণ আমার উপযুক্ত কাজের ক্ষেত্র।’ এখনো তিনি সেই নিজস্ব কাজের ধারা থেকে বিচ্যুত হননি।

সন্‌জীদা খাতুন ৪০টির বেশি বই লিখেছেন। এর মধ্যে শান্তিনিকেতনের দিনগুলি ও সাংস্কৃতিক মুক্তিসংগ্রাম নামে দুটি বই বেরিয়েছে প্রথমা প্রকাশন থেকে।

কেবল ছায়ানট নয়, সন্‌জীদা খাতুন সুদীর্ঘ যাত্রাপথে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ, ব্রতচারী সমিতি, নালন্দা বিদ্যালয় বা কণ্ঠশীলনের মতো সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ এবং তারপর দেশে নানা উত্থান-পতনের মধ্যে সব প্রগতিশীল ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সামনে ছিলেন তিনি।

সন্‌জীদা খাতুনের লেখা বই, তাঁর গান বা সব সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞ দেশের গণতান্ত্রিক ও মানবিক ধারাকে প্রভাবিত করেছে, শক্তিশালী করেছে। সে জন্য বাংলাদেশ কৃতজ্ঞ থাকবে তাঁর কাছে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত