৬ দিনে রিজার্ভ কমলো আরও ৩০ কোটি ডলার
প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৯:১৪ | আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৮
প্রতিদিনই কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় দিনে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ কমেছে ৩০ কোটি মার্কিন ডলার। বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, নিট রিজার্ভ ৩০ কোটি ডলার কমে ২ হাজার ১১৫ কোটি ডলারে নেমেছে। ২০ সেপ্টেম্বর নিট রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ১৪৫ কোটি ডলার।
এছাড়া মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত গ্রস রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৭০৫ কোটি ডলার। ২০ সেপ্টেম্বর গ্রস রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৭৩৩ কোটি ডলার। অর্থাৎ এই ছয় দিনে রিজার্ভ কমেছে ২৮ কোটি ডলার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে আসার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অব্যাহতভাবে কমছে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বকেয়া ঋণ পরিশোধ ও আমদানি দেনা মেটানোর কারণে রিজার্ভ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ডলার দিতে হচ্ছে। এতেও রিজার্ভ কমে যাচ্ছে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গণনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস তথা জুলাই থেকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণপ্রাপ্তির শর্ত হিসেবেই তা করা হচ্ছে। আইএমএফ থেকে শর্ত রয়েছে, চলতি সেপ্টেম্বরে প্রকৃত রিজার্ভ থাকতে হবে ২৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে তা ২৬ দশমিক ৮০ বিলিয়নে উন্নীত করার শর্তও দিয়েছে দাতা সংস্থাটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসাবায়ন পদ্ধতিতে অবশ্য ২০ সেপ্টেম্বর শেষে রিজার্ভের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ২৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার। গত ৩০ আগস্ট রিজার্ভের পরিমাণ ২৯ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার দেখানো হয়েছিল। সে হিসাবে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রিজার্ভের ক্ষয়ের পরিমাণ ১ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকেছে।
রিজার্ভ বৃদ্ধির প্রধান উৎস হলো প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রবাহ বেশ মন্থর। সর্বশেষ গত মাসে (আগস্ট) প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের প্রবাহ ২১ দশমিক ৪৮ শতাংশ পতন হয়েছে। চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে এসেছে কেবল ৭৩ কোটি ডলার। রেমিট্যান্স আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ার কারণেই দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রায় প্রতিদিনই রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে; তাও আবার জ্বালানি তেল, এলএনজি, সারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির দায় মেটানোর জন্য। পাশাপাশি সরকারের বিদেশী ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্যও ডলার বিক্রি করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২২-২৩ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে রেকর্ড সাড়ে ১৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। আর চলতি অর্থবছর এখন পর্যন্ত বিক্রি করা হয়েছে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালের আগস্টে দেশের গ্রস রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছিল। তারপর থেকেই রিজার্ভের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে কমছে।
এদিকে রেমিট্যান্স নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে প্রবাসী আয় বাড়াতে বিশেষজ্ঞদের উদ্ভাবনী পরামর্শ চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সোনারগাঁও হোটেলে পিএফএম সামিট-২০২৩ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বর্তমানে অনেক লোক দেশের বাইরে যাচ্ছেন। তবে সেই অনুপাতে রেমিট্যান্স বাড়ছে না। তাই প্রবাসী আয় বাড়াতে কাঠামোগত সংস্কারের পথ খুঁজছে সরকার। এজন্য সংশ্লিষ্টদেরকে উদ্ভাবনী পরামর্শ নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান অর্থমন্ত্রী। তার আশা, প্রবাসী আয় বাড়ানো গেলে অর্থনীতির চলমান সব সমস্যা সমাধান সম্ভব।
অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় ডলারের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ ব্যাংকে চাহিদার তুলনায় ডলার সংকট দেখা দিয়েছে। কিছু ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অমান্য করে বেশি দামে ডলার কিনে ঘোষণার চেয়ে বেশি দামে আমদানিকারকের কাছে বিক্রি করছে।
ই
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত