৫০০ মিটারের সেতুর অপেক্ষায় তিন জেলা—বহু বছরের দাবি এখনো অপূর্ণ
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৫:১২ | আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৮:৪৭
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার দিঘীরপাড় এলাকায় পদ্মার শাখা নদী পারাপারে সেতু না থাকায় তিন জেলার মানুষের দৈনন্দিন জীবন এখনো জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে। দীর্ঘ ৫০০ মিটারের একটি সেতুর দাবি বহু বছরের হলেও কাজে পরিণত না হওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে স্থানীয়দের মধ্যে।
দিঘীরপাড় বাজারের পূর্বদিকে বয়ে যাওয়া শাখা পদ্মা এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে কার্যত বিভক্ত করে রেখেছে। নদীর ওপারে দিঘীরপাড় চর, আর একই নদীপথ ব্যবহার করে শরীয়তপুর ও চাঁদপুরের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর বাসিন্দারা মুন্সিগঞ্জে আসেন ব্যবসা, চিকিৎসা কিংবা ঢাকামুখী যাত্রার উদ্দেশে। কিন্তু যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ছোট ট্রলার হওয়ায় প্রতিদিনই সৃষ্টি হয় ভোগান্তির।
সকাল থেকেই নদীর দুই তীরে লেগে থাকে মানুষের সারি। ট্রলার এলে হুড়োহুড়ি, না এলে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা—এটাই প্রতিদিনের চিত্র। রাতের পরিস্থিতি আরও কঠিন। ট্রলার কমে যায়, জরুরি প্রয়োজনে ভাড়া বেড়ে যায় কয়েকগুণ। বিশেষ করে মোটরসাইকেল পারাপারে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হয় যাত্রীদের।
দিঘীরপাড় বাজারে গেলে বোঝা যায় সেতুর অভাব কীভাবে এলাকাকে পিছিয়ে রেখেছে। কৃষকেরা ফসল নিয়ে আসতে সমস্যায় পড়েন, ব্যবসায়ীরা পণ্য নিতে দেরি হয়, শিক্ষার্থীরা নিরাপদে যাতায়াত করতে পারে না, রোগী পরিবহনে সময় নষ্ট হয়। নদীপথের ওপর নির্ভরতা এতটাই বেশি যে একটি সেতুর অভাব পুরো অঞ্চলের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে।
শরীয়তপুরের কাঁচিকাটা এলাকার বাসিন্দা মো. ইয়াসিন বেপারী বলেন, “আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা এই নদী। রাতে ট্রলার পাওয়া কঠিন, পেলেও ভাড়া অনেক বেশি। মাত্র ৫০০ মিটারের সেতু হলে আমাদের যাতায়াত আগের মতো কষ্টকর থাকত না।”
স্থানীয়দের মতে, সেতুটি নির্মিত হলে টঙ্গীবাড়ির পাশাপাশি শরীয়তপুর ও চাঁদপুরের সীমান্তবর্তী কমপক্ষে বিশাধিক গ্রামের উপকার হবে। কৃষিপণ্য সহজে পরিবহন করা যাবে, চিকিৎসা ও শিক্ষাসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাবে, আর বাণিজ্যিক কার্যক্রমে আসবে গতিশীলতা।
টঙ্গীবাড়ী উপজেলা প্রকৌশলী মো. শাহ্ মোয়াজ্জেম জানান, দিঘীরপাড় এলাকায় সেতু নির্মাণের উদ্যোগ চলমান। বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল পরিবেশগত মূল্যায়নসহ প্রয়োজনীয় জরিপ কাজ শেষ করেছে। প্রকল্পটি এলজিইডির অনুমোদন প্রক্রিয়ায় রয়েছে এবং অনুমোদন পেলেই নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।
দিঘীরপাড়ের মানুষের আশা, বহু বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে পদ্মার শাখা নদীর ওপর একটি স্থায়ী সেতু দ্রুত নির্মিত হবে এবং তিন জেলার মানুষের স্বপ্নের যোগাযোগ ব্যবস্থা বাস্তব রূপ পাবে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত