৩০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে সৌদিতে খুন হওয়া দুই বাংলাদেশির পরিবার

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৫৮ |  আপডেট  : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:২০

ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবে দুই প্রবাসী বাংলাদেশির চাঞ্চল্যকর হত্যার ঘটনায় নিহতদের পরিবার ৩০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে। ক্ষতিপূরণের অর্থ এরি মধ্যে সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাসের হিসাবে জমা হয়েছে।সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর মধ্যস্থতায় ক্ষতিপূরণের টাকা আদায় করা হয়েছে বলে তথ্য অধিদপ্তরের (পিআইডি) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

ক্ষতিপূরণের মধ্যে ২০০৬ সালে দাম্মামে নিহত সাগর পাটোয়ারীর পরিবার পাচ্ছে ৫১ লাখ সৌদি রিয়াল (১৫ কোটি টাকা)। আর ২০১৯ সালে রিয়াদে খুন করা হয় গৃহকর্মী আবিরণকে। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের জন্য আবিরণের পরিবার পাচ্ছে ৪৮ লক্ষ ৮০ হাজার সৌদি রিয়াল (১৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা)। হত্যাকারীদের কাছ থেকে এ অর্থ আদায় করা হয়েছে। অভিযুক্ত দুজনেই সৌদি নাগরিক। সর্বোচ্চ আর্থিক ক্ষতিপূরণের (রক্তপণ) বিনিময়ে তাদের মৃত্যুদণ্ড থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।আলোচিত হত্যাকাণ্ড গুলোর মামলা সুরাহা করে ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায় করতে বেশ ঘাম ঝরাতে হয়ে দূতাবাস কর্মকর্তাদের।

ক্ষতিপূরণ পাওয়ায় সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও দূতাবাসের কর্মরত সবার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়েছে নিহতের পরিবার।

সাগর হত্যাকাণ্ড ঘটনার বিবরণ দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০০৬ সালের ২৭ জুন অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে দাম্মাম শহরে নিহত হন কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানার সাগর পাটোয়ারী। তবে দীর্ঘসময় ওই আততায়ীকে শনাক্ত করতে না পারায় মামলার অগ্রগতি থেমে থাকে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রমকল্যাণ উইংয়ের প্রতিনিধি দাম্মাম দক্ষিণ থানায় যান। তখন তিনি জানতে পারেন, সেখানে একটি চুরির মামলায় উমর আল শাম্মেরি নামের এক সৌদি নাগরিক আটক আছেন। উমরকে সাগর হত্যার সন্দেহভাজন হিসেবেও দেখছে পুলিশ। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ উমরকে আসামি করে মামলা করায় সাগর হত্যার পুনরায় তদন্ত করা হয়। বিচারে অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং ২০২১ সালের ২৪ মার্চ উমর আল শাম্মেরিকে শিরশ্ছেদ করে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন আদালত।কিন্তু দায়ী উমরের পিতা অর্থের বিনিময়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় বদলানোর জন্য আপস প্রস্তাব করেন। নিহত সাগর পাটোয়ারীর ওয়ারিশরা রাজি হওয়ার পর রাষ্ট্রদূতের মধ্যস্থতায় ৫১ লাখ রিয়ালের বিনিময়ে আপস প্রস্তাবের মিটমাট হয়। আদালত উমরের পরিবারের কাছ থেকে রক্তপণের চেক নিয়ে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করেন। আর ক্ষতিপূরণের টাকা গত ৬ ডিসেম্বর দাম্মামের সৌদি ফ্রান্সি ব্যাংকের মাধ্যমে দূতাবাসের হিসাবে জমা হয়।

হত্যাকাণ্ড ঘটনায় নিহত আবিরণ বেগম খুলনার পাইকগাছার গৃহকর্মী নিহত হন ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ। রিয়াদের আজিজিয়ায় গৃহকর্ত্রী আয়েশা আহমাদ সগির আল জিজানী নির্মমভাবে হত্যা করেন আবিরণকে।এ ঘটনায় আজিজিয়া পুলিশ আয়েশা আল জিজানি, গৃহকর্তা বাসেম সালেম সগির এবং তাদের পুত্র ওয়ালিদ বাসেম সালেমকে গ্রেপ্তার করেন। বিচার শেষে ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আদালতের একই পরিবারের তিন সদস্যের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেন।
প্রধান আসামি গৃহকর্ত্রী আয়েশার বিরুদ্ধে কেসাস (জীবনের বিনিময়ে জীবন) এবং পিতা ও পুত্রকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। একইসঙ্গে ৫০ হাজার সৌদি রিয়াল অর্থদণ্ড দিতেও রায় দেওয়া হয়।এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করেন। কিন্তু আপিল আদালত কেসাস বা মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখেন। তখন মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামির পরিবার ও সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে রক্তপণের বিনিময়ে আসামিকে ক্ষমা করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।নিহতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, রাষ্ট্রদূতকে তারা সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে আসামিদেরকে ক্ষমা করার সম্মতি দেন।সৌদি আরবে সর্বনিম্ন রক্তপণ তিন লাখ সৌদি রিয়াল। রাষ্ট্রদূত জাবেদ পাটোয়ারীর চেষ্টায় নিহতের পরিবার ৪৮ লাখ ৮০ হাজার সৌদি রিয়াল রক্তপণ পরিশোধের বিনিময়ে ক্ষমা করেন।

 

সা/ই

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত