১০ এপ্রিলকে ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ ঘোষণার দাবি
প্রকাশ: ৩০ মে ২০২১, ০৮:৪৫ | আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১৬
১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিলের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের ভিত্তিতে মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়। স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আইনের সংজ্ঞা অনুযায়ী মুজিবনগর সরকার গঠনের সক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে একটি ‘রাষ্ট্র’র বৈশিষ্ট্য অর্জন করে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ল’ অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স (বিলিয়া) আয়োজিত ‘মুজিবনগর সরকার: প্রজাতন্ত্রের জন্মসনদ’ শীর্ষক অনলাইন লেকচারের আলোচকেরা এই বক্তব্য তুলে ধরে দিনটিকে প্রজাতন্ত্র দিবস ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে শনিবার তৃতীয় লেকচারের আয়োজন করে বিলিয়া। আলোচকেরা বলেন, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতা—মুজিবনগর সরকারের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে যেভাবে সম্মান জানানো উচিত ছিল, সেভাবে সম্মান জানানো হচ্ছে না।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক মূল প্রবন্ধে বলেন, ‘ভারত ও পাকিস্তান যেদিন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন প্রজাতন্ত্রের মর্যাদা লাভ করেছে, সেদিনকে তারা “প্রজাতন্ত্র দিবস” হিসেবে ঘোষণা করেছে। আমাদের “স্বাধীনতা দিবস” (২৬ মার্চ) রয়েছে এবং আমাদের “বিজয় দিবস” (১৬ ডিসেম্বর) রয়েছে, কিন্তু আমাদের “প্রজাতন্ত্র দিবস” নেই। ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি গণপ্রজাতন্ত্র হয়েছে, তাই এই দিনটিকেই প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে বিবেচনা করা যায়।’
তবে লেকচারে উপস্থিত ব্যক্তিদের কেউ কেউ ১০ এপ্রিলের পরিবর্তে ১৭ এপ্রিলকে ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ ঘোষণার দাবি জানান। ১০ বা ১৭ এপ্রিল, যে তারিখেই হোক এ ধরনের একটি দিবস থাকার বিষয়ে সবাই একমত পোষণ করেন।
লেকচারে সভাপতির বক্তব্যে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের রচয়িতা ও বিলিয়ার চেয়ারম্যান এম আমীর-উল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতা, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র, সংবিধানের ঘোষিত মানবাধিকারের বিধানগুলো কেবল আইন-আদালতের আলোচনায় সীমাবদ্ধ। এগুলো স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। পাঠ্যপুস্তকে এবং গবেষণায় এগুলো স্থান পেলেই তা প্রাত্যহিক জীবনে প্রভাব ফেলবে।
লেকচারে নির্ধারিত আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মোহাম্মদ ফায়েকুজ্জামান। তিনি বলেন, মুজিবনগর সরকারের অধীনেই মুক্তিবাহিনী গঠন, সেনাবাহিনীসহ তিন বাহিনী গঠন, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র নামক প্রচারমাধ্যম প্রতিষ্ঠা এবং বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিল। এই সরকার সফলভাবে শরণার্থী মোকাবিলা, সেক্রেটারিয়েট প্রতিষ্ঠা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্ত করতে সমর্থ হয়েছিল।
লেকচারে স্বাগত বক্তব্য দেন এবং সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন বিলিয়ার পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, একটি প্রজাতন্ত্র দিবস থাকা জরুরি। মুজিবনগর সরকার গঠনের যে গুরুত্ব, তা হারিয়ে যাচ্ছে। ইতিহাসে এ সরকার এবং সরকার গঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বাঁচিয়ে রাখতেই দিবসটি প্রয়োজন। দিবসটি সামনে এলে নাগরিকের সমতা, সামাজিক ন্যায়বিচারসহ মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধগুলো শুধু সংবিধানে না থেকে প্রাত্যহিক জীবনে চর্চার অংশ হতে পারবে।
বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা শারমিন আহমেদ বলেন, ১০ এপ্রিলকে ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ হিসেবে ঘোষণার জন্য জাতীয় পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নেওয়া উচিত । তিনি তাঁর বাবার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘স্বাধীনতা অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত কারও কোনো ব্যক্তিগত বা পারিবারিক জীবন থাকবে না বলে নেতারা যে শপথ বা অঙ্গীকার করেছিলেন, তা আমার বাবা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন। তাঁর মাত্র দুটি শার্ট ছিল। চৌকিতে ঘুমাতেন। এই তথ্যগুলো নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। তথ্যগুলো জানলে তারা অনুপ্রেরণা পাবে।’
আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিয়া রহমান, আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কাজী আরিফুজ্জামান, তানিয়া আমীর প্রমুখ অংশ নেন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত