১০১ কিমি খালি পায়ে হেঁটে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে যশোরের অহিদুল

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২১, ১৫:১০ |  আপডেট  : ১৩ মে ২০২৪, ১০:০২

তরুণ সমাজের কাছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও তার অবদান পৌঁছে দিতে এক অন্যরকম পথযাত্রা করেছেন যশোরের অহিদুল ইসলাম। খালি পায়ে হেঁটে যশোর থেকে পদযাত্রা করে পৌঁছে গেছেন বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থলে।

১০১ কিলোমিটার পথযাত্রায় রোববার বিকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।

যাত্রাপথে প্রতি কিলেমিটার শেষে একজনকে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ফুল, বঙ্গবন্ধুর বাণী সংবলিত মাথার ব্যান্ডকাপড় ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা বিতরণ করেছেন তিনি।  

অহিদুল ইসলাম যশোর শহরের খড়কি পীরবাড়ি এলাকার মৃত শহিদুল ইসলাম ও সকিনা খাতুনের ছেলে। তিনি  হামিদপুর আল হেরা ডিগ্রি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র। এ ছাড়া তিনি যশোরের হতদরিদ্র স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এসিএসের সদস্য। নিম্নবিত্ত সংসারের সন্তান অহিদুলকে চলতে হয় টিউশনি করে। সেই টাকা দিয়ে নিজের পড়াশোনার সঙ্গে কাজ করছে হতদরিদ্র শিশুদের নিয়ে।

স্বপ্ন তার বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাকে খাঁটি সোনায় রূপ দেওয়া। বঙ্গবন্ধুর বাণী বুকে নিয়ে কাজ করে চলেছেন বছরের পর বছর।

অহিদুল ইসলাম বলেন, পিতাহারা সংসারে কষ্টের মধ্যে বড় হয়েছি। তবু স্বপ্ন দেখি দেশের মানুষের জন্য কিছু করা। কাজ করছেন সমাজের পিছিয়ে সব বয়সী মানুষের জন্য। সামাজিক কাজের পাশাপাশি শিশুদের ফ্রি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তিনি।

কয়েক বছর ধরে চলে তার এই মানবতার কাজ, যা করে এলাকায় নজরে এসেছেন তিনি। তার এই চিন্তাধারাকে কেউ কেউ সাধুবাদ জানালেও বিভিন্ন সময়ে শুনতে হয় কটাক্ষ অপমান।

তার পরও থেমে নেই তিনি। বাংলাদেশকে সোনার বাংলা গড়তে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে এগিয়ে আসতে হবে তরুণদের। এমনি উপলব্ধি করে তরুণ সমাজের কাছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও তার অবদান পৌঁছে দিতে তিনি পথযাত্রা শুরু করেন।

তাই ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর দিনে গত ১৭ মার্চ দুপুরে প্রেসক্লাব যশোরের সামনে থেকে শুরু করেন যাত্রা। যাত্রাপথে প্রয়োজনীয় পোশাক, শুকনা খাবারসহ মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ফুল, বঙ্গবন্ধুর বাণী সংবলিত মাথার ব্যান্ডকাপড় ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা মিলে ১৫ থেকে ২০ কেজি বোঝা কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন পথযাত্রায়। প্রায় চার দিনের ওই যাত্রা রোববার শেষ হয়েছে। এই সময়ে তিনি অতিক্রম করেন ১০১ কিলোমিটার পথ।

তিনি আরও বলেন, আমার বয়স যখন দেড় থেকে দুই বছর, তখন আমার বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। প্রথমে লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলেও নিজের চেষ্টায় পড়াশোনা চালিয়ে গেছি। আর স্বপ্ন বুনতে থাকি দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে। স্বপ্নপূরণের চেষ্টাটা চালিয়ে যেতে থাকি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এসিএসের মাধ্যমে। বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে যশোর থেকে পথচলা। কিন্তু পথচলা এত সহজ হয়নি। কেননা পথে নামলেই অর্থের প্রয়োজন।

হেঁটে হেঁটে না হয় পথ মাড়ালেন। কিন্তু খাবার বা রাতযাপনের জন্যও তো অর্থের প্রয়োজন। এই অর্থ অহিদুলের ছিল না। তাই টিউশনে জমানো কিছু টাকা ও বন্ধুদের কাছ থেকে ধার নেওয়া টাকা নিয়ে তিনি প্রেসক্লাব যশোরের সামনে থেকে রওনা দেন। তার এই যাত্রায় খরচ হয়েছে ১০ হাজার ৬০০ টাকা। যশোর থেকে নড়াইল। নড়াইল থেকে খুলনা। এভাবে একে একে ২০টি উপজেলা হেঁটে পা রেখেছেন বঙ্গবন্ধুর গ্রাম টুঙ্গিপাড়ায়।

গড়ে প্রতিদিন হেঁটেছি ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার পথ। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে স্বাস্থ্য যতটা না খারাপ হয়েছে, তার চেয়ে খারাপ দশা পকেটের। দিনের বেলায় পথযাত্রা করতাম। আর রাতে বিভিন্ন মার্কেট-মসজিদ বা বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে শুয়ে থাকতাম। হাঁটতে হাঁটতে একসময় পা ব্যথা হলেও মনের জোরে এগিয়ে গেছি।

স্কুলজীবন থেকেই বিভিন্ন মানুষের সাহায্য-সহযোগিতা পেয়েছি। তার এই যাত্রায় পাশে দাঁড়িয়েছেন আমার কিছু বন্ধু- আমার সংগঠনের বিভিন্ন সদস্য। তবে  চলতে পথেও অনেকেই আমাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা না করলেও মনের সাহস জুগিয়েছেন। তাদের এই সাহসই আমি না পেলে হয়তো পা বাড়াতে সাহস পেতাম না।

এ ছাড়া আমার সংগঠন এসিএলের প্রধান উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা এএফএম আনজির, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এইচ আর তুহিন ও সাংবাদিক এসএফ আরিফুজ্জামানসহ পদযাত্রায় বিভিন্ন স্তরের মানুষকে তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

ভবিষ্যতে ইচ্ছা আছে বঙ্গবন্ধুর বাণী নিয়ে বাংলাদেশের ৬৪ জেলাতেই যাত্রা করার। বঙ্গবন্ধুর চেতনায় সোনার বাংলাদেশ গড়তে তরুণ সমাজকে নিয়ে দেশ ও সমাজের জন্য সর্বপ্রকার ভালো কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন।

এ বিষয়ে সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের আলী বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে সোনা বাংলা গড়তে কলেজছাত্র অহিদুল ইসলাম যে লক্ষ্যে চলেছেন, আমি মনে করি তার সেই লক্ষ্য একদিন পৌঁছাবে। ছেলেটি আমার ইউনিয়ন পরিষদ দিয়ে যাওয়ার পথে আমার সঙ্গে দেখা করে। আমি ওকে বুঝিয়েছি বাড়ি চলে যেতে। কিন্তু ছেলেটি যায়নি। খালি পায়ে যশোর প্রেসক্লাব থেকে বঙ্গবন্ধুর মাজার পর্যন্ত হেঁটে গেছে।    

এসিএল ফাউন্ডেশনের প্রধান উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা এএফএম আনজির বলেন, প্রায় চারদিনে এই যাত্রা তার যেমন কষ্টের ছিল, তেমনি আনন্দদায়ক ও শিক্ষণীয় ছিল। ইচ্ছা থাকলে যে সফল হওয়া যায়, সেটা সাধারণ মানুষকে বুঝিয়েছেন অহিদুল। আমি দোয়া করি অহিদুল দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করার লক্ষ্যে আলোকিত মানুষ হয়ে গড়ে ওঠে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত