হেমকুমারী -বিচিত্র কুমার 

  বিচিত্র কুমার

প্রকাশ: ১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৩ |  আপডেট  : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬:৪৬

হেমকুমারী

-বিচিত্র কুমার 


হেমন্তের সকালে জেগে ওঠে হেমকুমারী,

নরম রোদ যেন তার অলস মুখের চুম্বন।

কুয়াশার চাদর সরিয়ে তার চুলে লেগে থাকে শিশিরের মুক্তো,

ঘাসের ওপরে যেন ছড়িয়ে পড়ে তার হাসির ছটা।


তার চোখে গভীরতা, শীতল বাতাসের মতো স্পর্শকাতর,

পাখির ডাকে মেশা এক সুর,

মনে হয় যেন দূরের কোনো পাহাড়ি ঝরনা।

তার চরণ পড়ে মাঠের ধানখেতের মাঝে,

কানে বাজে ধানের গন্ধে মাতোয়ারা সুরের খেলা।


হেমন্তের দিনগুলো তাকে আলিঙ্গন করে রাখে,

আকাশে সাদা মেঘেরা তার শাড়ির আঁচল টানে।

বটের ছায়ায় বসে সে আঁকে নকশা,

পাতার ঝরাপাতায় যেন তার হাতের আল্পনা।


দিগন্তে সূর্য যখন তার আলো ছড়ায়,

হেমকুমারীর মুখে খেলে যায় সন্ধ্যার লজ্জা।

তারে ভরা রাত যেন তার চোখের তারায়,

প্রকৃতি তার কাছে চিরকালীন প্রেমিক।


শূন্যতার মাঝেও সে খুঁজে পায় ভরা পূর্ণতা,

ঝরা পাতার শব্দে সে খুঁজে পায় সুরের মাধুর্য।

হেমন্ত তার কাছে শুধু ঋতু নয়,

এ যেন প্রকৃতির গভীর ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি।


তার শীতল ঠোঁটের স্পর্শে মাটি পায় শান্তি,

জীবনের গন্ধ যেন মিশে যায় বাতাসে।

হেমকুমারী, তুমি শুধু প্রকৃতি নও,

তুমি আমার হৃদয়ের অন্তিম আকাঙ্ক্ষা।


তোমার হাতে ধরা হেমন্তের সুবর্ণ উপহার,

আমার হৃদয়ে যেন চিরন্তন বাসা বাঁধে।

তোমাকে দেখে মনে হয়,

জীবনের প্রতিটি ঝরা পাতায়ও আছে এক নতুন গল্প।


(০২)

হেমজ্যোতি


হেমন্ত এসেছে নিঃশব্দ চরণে, যেন কোনো পরী মেঘের চাদর সরিয়ে দাঁড়িয়েছে নিভৃত বনে।

তার পরিধানে রয়েছে কুয়াশার ধোঁয়া, গায়ে হলুদ পাতার গয়না—এক অদ্ভুত মায়াবী আবেশ।

আমি তাকিয়ে থাকি তার দিকে, যেমন কৃষকের চোখ জোড়া জ্বলে ওঠে নতুন ধানের মুগ্ধ রোশনায়।


মাঠ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে শিশিরের মুক্তো,

যেন রাত্রির চুপচাপ কান্নার অশ্রুবিন্দু।

হেমন্ত তাকে সাজিয়েছে বধূর মতো,

মৃদু মৃদু বাতাসে তার আঁচল উড়ে যায়—

মনে হয়, এই আঁচলে লুকিয়ে আছে সৃষ্টির অমল প্রেম।


পথের ধারে কাশফুলের গুচ্ছ, যেন সরল পত্রে লেখা কোনো দেহাতি কবির প্রেমপত্র।

বাতাসে ঢেউ তোলে, সূর্যের রোদে সেগুলো ঝিকমিক করে—ঠিক যেন নববধূর কপালে সোনার টিপ।

 

আকাশের সাদা মেঘগুলো কেমন অলস ভঙ্গিতে ভাসে,

ঠিক যেন কোনো স্বপ্নবিলাসী শিল্পীর মনের ক্যানভাস।

আর সেই মেঘেদের ফাঁকে ফাঁকে রোদ উঠে,

হেমন্ত যেন হাসি ফুটিয়ে দেয় পৃথিবীর চরণতলে।


পাখিরা দল বেঁধে যায়, তাদের ডানায় যেন রঙিন স্বপ্ন আঁকা।

গাঙচিলের উড়াল দেখে মনে হয়, তারা কোনো দূরের দেশে প্রণয় বার্তা নিয়ে যাচ্ছে।

নদীর জল ছুঁয়ে তারা উড়ে যায়—নদীর বুকে তখন ভেসে ওঠে এক সোনালি জ্যোতি।


আমার হৃদয়ে বেজে ওঠে এক নির্ঝরের সুর,

হেমন্তের প্রতিটি দোলা আমার ভেতরে এক অলিখিত কবিতা হয়ে বাজে।

তোমার চোখে যেন হেমজ্যোতির আলো—

আমার সমস্ত প্রেম, সমস্ত বেদনা সেই আলোয় ডুবে যায়।


তুমি যদি আসতে হেমন্তের এই স্নিগ্ধ সকালে, আমরা দু’জনে মিলে ঘাসের ওপর শুয়ে গল্প করতাম।

তোমার কণ্ঠে শুনতাম পাখির গান, তোমার চুলে গুঁজে দিতাম কাশফুলের মালা।

সময় থেমে যেত আমাদের পাশে, হেমন্ত তার সমস্ত রূপ মেলে ধরত আমাদের চোখে।


হেমজ্যোতি, এই প্রেম যেন চিরন্তন।

হেমন্তের প্রতিটি শীতল ছোঁয়া আমাকে মনে করিয়ে দেয়, প্রকৃতি আর প্রেম একে অপরের পরিপূরক।

তুমি, আমি, আর হেমন্ত—এই মিলনই তো চিরকালের রূপকথা।

 

 

সা/ই


 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত