হুমায়ুন আজাদ অবলম্বনে প্রথম তৈরি হচ্ছে চলচ্চিত্র

  বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২১, ১০:৫৯ |  আপডেট  : ৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৬

বাংলাদেশের অন্যতম প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদ। এবারই প্রথম এই কিংবদন্তির কোনও উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি হচ্ছে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। উপন্যাসটির নাম ‘১০,০০০ এবং আরো ১টি ধর্ষণ’। এটি প্রকাশ হয় ২০০২ সালে। বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজের একটি ধর্ষিত মেয়ের জীবন এবং তার নির্মম পরিণতি উঠে এসেছে এই উপন্যাসে। আর সেটিই এবার সিনেমায় চিত্রায়িত হবে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিনেমাটির চিত্রনাট্যকার অপূর্ণ রুবেল। নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে আজাদকন্যা মৌলির কাছ থেকেও। সিনেমাটি নির্মাণের জন্য আজাদ পরিবারের কাছ থেকে লিখিত অনুমতি পেয়েছেন নির্মাতা সোহেল রানা বয়াতি।  

অপূর্ণ রুবেল বলেন, ‘হুমায়ুন আজাদের লেখা অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস এটি। অনেক দিনের ইচ্ছা এটিকে পর্দায় তুলে আনার। জানতাম, কাজটি অনেক কঠিন। তারচেয়েও কঠিন হবে পরিবারের সম্মতি। তবে বিস্ময়করভাবে এই আগ্রহটি প্রকাশের পর আজাদ পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা যথেষ্ট উৎসাহ ও সাহস পেয়েছি। আমরা সিনেমাটি নির্মাণের অনুমতি পেয়েছি। শিগগিরই এর চরিত্রগুলো চূড়ান্ত করবেন নির্মাতা বয়াতি। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা শুটিংয়ে যেতে চাই।’

এদিকে সিনেমাটির কাস্টিং ও শুটিংয়ে নামা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নির্মাতা বয়াতি বলেন, ‘আরও একটু সময় চাই। কিছু চুক্তি ও টেকনিক্যাল বিষয় সমাধান করে বিস্তারিত জানাবো শিগগিরই।’ জানান, হুমায়ুন আজাদের উপন্যাস অবলম্বনে এর আগে আর কোনও সিনেমা তৈরি হয়নি।

একজন বাংলাদেশি কবি, ঔপন্যাসিক, ভাষাবিজ্ঞানী, সমালোচক, রাজনীতিক ভাষ্যকার, কিশোরসাহিত্যিক, গবেষক এবং অধ্যাপক। তিনি বাংলাদেশের অন্যতম প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক লেখক, যিনি ধর্ম, মৌলবাদ, প্রতিষ্ঠান ও সংস্কারবিরোধিতা, যৌনতা, নারীবাদ ও রাজনীতি বিষয়ে তার বক্তব্যের জন্য ১৯৮০-এর দশক থেকে পাঠকগোষ্ঠীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। হুমায়ুন আজাদের ৭টি কাব্যগ্রন্থ, ১২টি উপন্যাস ও ২২টি সমালোচনা গ্রন্থ, ৭টি ভাষাবিজ্ঞান বিষয়ক, ৮টি কিশোরসাহিত্য ও অন্যান্য প্রবন্ধসংকলন মিলিয়ে ৬০টিরও অধিক গ্রন্থ তার জীবদ্দশায় এবং মৃত্যু পরবর্তী সময়ে প্রকাশিত হয়। 

১৯৯২ সালে তার নারীবাদী গবেষণা-সংকলনমূলক গ্রন্থ ‘নারী’ প্রকাশের পর বিতর্ক সৃষ্টি করে এবং ১৯৯৫ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সাড়ে চার বছর বইটি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ছিল। এটি তার বহুল আলোচিত গবেষণামূলক কাজ হিসেবেও স্বীকৃত। এছাড়াও তার ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ উপন্যাসটি পাঠকমহলে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল। তার রচিত প্রবচন সংকলন ১৯৯২ সালে ‘হুমায়ুন আজাদের প্রবচনগুচ্ছ’ নামে প্রকাশিত হয়। 

তাকে ১৯৮৬ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ২০১২ সালে সামগ্রিক সাহিত্যকর্ম এবং ভাষাবিজ্ঞানে বিশেষ অবদানের জন্য মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করা হয়। ২০০৩ সালে তার রচিত কিশোরসাহিত্য ‘ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না’ (১৯৮৫) এবং ‘আব্বুকে মনে পড়ে’ (১৯৯২) জাপানি ভাষায় অনূদিত হয়েছিল।

হুমায়ুন আজাদ প্রথাগত ধ্যানধারা সচেতনভাবে পরিহার করতেন। তার সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য পল্লিপ্রেম, নর-নারীর প্রেম, প্রগতিবাদিতা ও ধর্মনিরপেক্ষতা, সামরিক শাসন ও একনায়কতন্ত্রের বিরোধিতা এবং নারীবাদের জন্য পরিচিত। তার ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিশ্বাস এবং ব্যক্তিগত অভীষ্ট তার সাহিত্যকে প্রভাবান্বিত করেছিল। কথাসাহিত্য ও প্রবন্ধের মাধ্যমে তিনি সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করেছিলেন। ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ উপন্যাসে মৌলবাদীদের সমালোচনা করার কারণে ২০০৪ সালে তিনি হামলার শিকার হন।

২০০২ সালে তিনি জার্মান কবি হাইনরিখ হাইনের ওপর কাজ করার জন্য জার্মান সরকারের কাছে একটি বৃত্তির আবেদন করেছিলেন। ২০০৪-এর ৭ আগস্ট বৃত্তি নিয়ে জার্মানি যান তিনি। ২০০৪ সালের ১১ আগস্ট রাতে একটি অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পর ১২ আগস্ট জার্মানির আবাসস্থলের নিজ কক্ষে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত