হিট স্ট্রোক : লক্ষন ও প্রাথমিক চিকিৎসা
প্রকাশ: ২ মে ২০২৪, ১৫:০৯ | আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:২০
প্রচন্ড এক তাপদাহের মাঝে বিপন্ন সময় গুনছি আমরা। তীব্র গরমের কারণে দেশের অনেক স্থানে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে অনেকের মৃত্যুও ঘটেছে। আতপাঘাত যাকে ইংরেজি পরিভাষায় হিট স্ট্রোক বলা হয় -- একটি গুরুতর তাপজনিত অসুস্থতা যার ফলে শরীরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হয়ে যায়। ত্বক শুষ্ক ও লাল হয়ে যাওয়া, মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা, বিভ্রান্তি আতপাঘাতের প্রধান কিছু লক্ষণ। হিট স্ট্রোকে ঘাম হয় না। হিট স্ট্রোক হঠাৎ করে বা ধীরে ধীরে শুরু হতে পারে। জীবনের জন্য হুমকি স্বরুপ এই হিট স্ট্রোকে মস্তিষ্কের উচ্চতম নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ত্বরিত ব্যবস্থা না নিলে অনেক গুলোঅঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত অথবা বিকলাঙ্গ এমনকি মৃত্যুর কোলেও ঢলে পড়তে পারে।
পরিবেশের উচ্চ তাপমাত্রা অথবা বিরামহীন শারীরিক পরিশ্রমের কারণে হিট স্ট্রোক হতে পারে। সাধারণত তাপদাহ জনিত চরম পরিবেশে অবস্থান করা এবং দীর্ঘ সময় সূর্যের সংস্পর্শে থেকে তপরিশ্রমের কারণে আতপাঘাত হয়ে থাকে। কিছু কিছু স্বাস্থ্য সমস্যাও হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। শিশু, বৃদ্ধ এবং অনেক দিন ধরে স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভুগছে এদের মাঝে হিট স্ট্রোকের প্রবনতা বেশি।
একটু সাবধান এবং সচেতন হলেই আমরা এই ঝুঁকিপূর্ন অবস্থা থেকে মুক্ত থাকতে পারি। হিট স্ট্রোকের কারণ এবং লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারনা রাখতে হবে প্রত্যেককেই। হিট স্ট্রোক প্রতিরোধকল্পে প্রচুর পানি ও পানীয় পান করতে হবে। দীর্ঘ সময় সূর্যের নিচে অবস্থান করা যাবে না। পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম নিশ্চিত করতে হবে, সেই সাথে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার।
ভাজা- পোড়া এবং মশলাযুক্ত খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। সুতি এবং আরামদায়ক পোশাক পরিধান করতে হবে। প্রয়োজনে ছাতা, সানগ্লাস, ক্যাপ ব্যবহার করতে হবে। প্রখর রোদের সময় বিশেষ করে বেলা ১১ টা থেকে ৩ টা পর্যন্ত ছায়ায় অবস্থান করতে হবে। সুবিধা বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাদের শ্রম ঘন্টা কমিয়ে পারিশ্রমিক বাড়াতে হবে।হিট স্ট্রোক সম্পর্কে সচেতন করতে হবে তাদেরও।
কেউ হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে দ্রুত তাকে ছায়ায় নিতে হবে। সম্ভব হলে ফ্যান অথবা এসি যুক্ত রুমে। পরনের পোশাক যতটা সম্ভব লুজ করে দিতে হবে। বগলের নিচে এবং কুচকিতে বরফ রাখতে হবে। পানি পান করার মত অবস্থা থাকলে তাকে পানি এবং পানীয় খাওয়াতে হবে। পুরো শরীর ঠান্ডা পানিতে স্পঞ্জ করতে হবে বারবার। শরীরের তাপমাত্রা চেক করতে হবে।। তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট না হওয়া পর্যন্ত এই চিকিৎসা অব্যাহত থাকবে। রোগীর অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে নিকটতম স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে। হিট স্ট্রোক ভাল হওয়ার পরেও বেশ কিছুদিন রোগী দূর্বল ও অসুস্থ বোধ করে। তাকে বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাবার এবং পর্যাপ্ত সেবা দিতে হবে। অন্য সব শারীরিক সমস্যার মত হিট স্ট্রোকের ক্ষেত্রেও প্রতিরোধই উত্তম পন্থা। আমরা নিয়ম মেনে চলি, কিছুতেই হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হব না - তীব্র তাপদাহের বিরুদ্ধে এই হোক কঠোর অবস্থান আমাদের।
ডাঃ প্রফেসর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমা বেগম নাজু
সান
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত