হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলেও যুদ্ধ চলবে : নেতানিয়াহু
প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪, ১২:২৯ | আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩:৩১
ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা আট মাসেরও বেশি সময় ধরে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। বর্বর এই আগ্রাসনের জেরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে ক্ষোভ।
এমন অবস্থায় গাজায় যুদ্ধ বন্ধে বাড়ছে বৈশ্বিক চাপ। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলেও যুদ্ধ চলবে। এমনকি তিনি এমন কোনো চুক্তিতে সম্মত না হওয়ার কথাও জানিয়েছেন যা গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের অবসান ঘটায়।
সোমবার (২৪ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি একটি ‘আংশিক’ চুক্তির জন্য উন্মুক্ত যা গাজায় এখনও আটক থাকা কিছু বন্দিকে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবে, এমনকি সবাইকে না হলেও।
তবে তিনি পুনর্ব্যক্ত করেছেন, তিনি এমন কোনো চুক্তিতে সম্মত হবেন না যা গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের অবসান ঘটায়। যদিও ইসরায়েলি প্রস্তাব এই আক্রমণাত্মক অভিযান শেষ করার পথে এগিয়ে যাবে বলে আগেই দাবি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
রোববার ইসরায়েলি মিডিয়া আউটলেট চ্যানেল ১৪-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘লক্ষ্য হচ্ছে অপহৃতদের ফিরিয়ে আনা এবং গাজায় হামাস সরকারকে উৎখাত করা।’
অবশ্য কয়েক হাজার ইসরায়েলি নেতানিয়াহু এবং তার সরকারের বিরুদ্ধে ক্রমাগত সমাবেশ করে চলেছে। তারা ইসরায়েলে আগাম নির্বাচনের দাবির পাশাপাশি বন্দিদের ফিরিয়ে আনতে চুক্তির দাবি জানাচ্ছেন।
এর আগে গত মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ঘোষণা করেন। বাইডেনের এই প্রস্তাবে তিনটি পর্যায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রথম ধাপে বন্দি বিনিময়ের পাশাপাশি স্বল্পমেয়াদি যুদ্ধবিরতি হবে। দ্বিতীয় ধাপে ‘শত্রুতার স্থায়ীভাবে অবসান’ এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে।
তৃতীয় ধাপে যুদ্ধের কারণে ব্যাপকভাবে ধ্বংস হওয়া গাজার জন্য বহু বছরের পুনর্গঠন পরিকল্পনা রয়েছে।
যদিও মার্কিন কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেছিলেন, ইসরায়েল প্রস্তাবটি রচনা করেছে, তবে নেতানিয়াহুসহ বিভিন্ন ইসরায়েলি কর্মকর্তারা হামাস নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং প্রকাশ্যে এই প্রস্তাবটিকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করতে অস্বীকার করেছেন।
নেতানিয়াহু চ্যানেল ১৪-কে আরও বলেন, দক্ষিণ গাজার রাফা শহরে ইসরায়েলের ‘তীব্র’ সামরিক আক্রমণ প্রায় শেষ হয়েছে। তার ভাষায়, ‘হামাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের তীব্র পর্যায় শেষ হতে চলেছে। এর মানে এই নয় যে, যুদ্ধ শেষ হতে চলেছে, তবে রাফাতে যুদ্ধের তীব্র পর্যায় শেষ হতে চলেছে।’
নেতানিয়াহু বলেছেন, শিগগিরই লেবাননের উত্তর সীমান্তে সেনা মোতায়েন করা হবে কিন্তু সেটা ‘প্রতিরক্ষামূলক উদ্দেশ্যে’। চ্যানেল ১৪-কে তিনি বলেন, ‘সংঘাতের তীব্র পর্যায়টি শেষ হওয়ার পরে, আমাদের বাহিনীর কিছু অংশ উত্তর দিকে সরানোর সম্ভাবনা আছে। এবং আমরা এটি করব। প্রথমত, এর উদ্দেশ্য প্রতিরক্ষামূলক এবং দ্বিতীয়ত, বাড়িঘর থেকে সরিয়ে নেওয়া আমাদের বাসিন্দাদের বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসা।’
নেতানিয়াহু বলেন, ‘যদি আমরা পারি আমরা কূটনৈতিকভাবে এটি করব। যদি না হয়, আমরা এটি অন্যভাবে করব। তবে আমরা আমাদের বাসিন্দাদের বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসব।’
মূলত গত ৭ অক্টোবর হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় প্রত্যেক দিন ইসরায়েলি সামরিক চৌকি ও ভূখণ্ডে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে আসছে লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ও তাদের মিত্ররা।
ইসরায়েল-লেবানন সীমান্ত এলাকায় এবারের এই সংঘাত ২০০৬ সালের ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। এর ফলে উত্তর ইসরায়েল এবং দক্ষিণ লেবাননে হাজার হাজার বেসামরিক লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
সান
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত