হলি আর্টিজান হামলার ৮ বছর আজ, যা বললেন এসবি প্রধান

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১ জুলাই ২০২৪, ১৩:০৪ |  আপডেট  : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬:২৬

২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশান-২ এর লেক পাড়ের হলি আর্টিজান বেকারিতে ঘটেছিল দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলা। আট বছর আগের ওই রাতে অস্ত্রের মুখে বেকারিতে থাকা দেশি-বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করে নরকীয় হত্যাযজ্ঞ শুরু করে জঙ্গিরা । ভয়াবহ সেই হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তা ও ১৭ জন বিদেশি নাগরিকসহ নিহত হন ২২ জন। 

সেই রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা হলি আর্টিজানের হত্যাযজ্ঞ ও জিম্মিদশা বন্ধ করতে পারেনি। পরের দিন ২ জুলাই সকালে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো সদস্যদের পরিচালিত ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’-এ অবসান হয় ১২ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর জিম্মিদশার। নিহত হয় হামলাকারী পাঁচ জঙ্গি—রোহান ইমতিয়াজ, সামিউল মোবাশ্বির, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ও খায়রুল ইসলাম। 

সেই রাতে জঙ্গিরা কুপিয়ে ও গুলি করে মোট ২২ জনকে হত্যা করে। জিম্মিদের মুক্ত করতে অভিযান চালাতে গিয়ে বোমা হামলায় নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তা। সেই হামলার ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে যায় পুরো দেশ।

হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলার রায়ে আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, তথাকথিত জিহাদ কায়েমের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য নব্য জেএমবির সদস্যরা গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে নারকীয় ও দানবীয় হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। হলি আর্টিজান হামলার মধ্য দিয়ে জঙ্গিবাদের উন্মত্ততা, নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতার জঘন্য বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

হলি আর্টিজানে নিহতদের স্মরণে আজ সকালে বিভিন্ন সংগঠন হামলার স্থানটিতে গিয়ে নিহতদের স্মরণ করে।

গুলশান হামলার পর জঙ্গি দমন অভিযান গতি পায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে অনেক জঙ্গি গ্রেপ্তার হওয়ার পাশাপাশি শীর্ষনেতাদের প্রায় সবাই মারা যান।

এরই মধ্যে, ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর দিন দুপুরে আদালত পাড়া থেকে দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবশ্য স্বীকার করছে, দেশের জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে এলেও এখনও পুরোপুরি নির্মূল হয়নি। ওই ঘটনার মাত্র চার মাস আগে জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ দমনে গঠন করা হয়েছিলো ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।

সিটিটিসির অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, যেই সংগঠনটি এই হামলায় অংশগ্রহণ করেছিলো নব্য জেএমবি; বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকরতম জঙ্গি সংগঠন। আমরা জঙ্গি সংগঠনের প্রকৃতি বিশ্লেষশণ করলে দেখবো যে এটাই ছিলো সবচেয়ে হিংস্র।

২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর আলোচিত এ মামলার রায় দেওয়া হয়। হামলায় জড়িত থাকার জন্য আট জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। খালাস পান একজন। গত বছরের অক্টোবরে হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গিদের সাজা পাল্টে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন হাই কোর্ট। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র‌্যাশ, হাদিসুর রহমান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, আব্দুস সবুর খান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন।

এদিকে সোমবার (১ জুলাই) গুলশানে দীপ্ত শপথ ভাস্কর্যে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় নিহতদের স্মৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলাম বলেন বলেন, আজ থেকে ৮ বছর আগে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে নারকীয় জঙ্গি হামলা হয়েছিলো। ওই রাতে পুলিশের দুই সদস্যসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা নিহত হয়েছিলেন। এটি শুধু বাংলাদেশে নয় আন্তর্জাতিক বিশ্বেও আলোচিত ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। অনেক দেশ মনে করেছিল এই জঙ্গি হামলার পর বাংলাদেশ আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। আরও জঙ্গি হামলায় বাংলাদেশ আফগানিস্তানে পরিণত হবে বলেও অনেকে মনে করেছিলো।

এসবি প্রধান বলেন, ওই ঘটনার পর আমরা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযানে নামি। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযানের পাশাপাশি সচেতনতাসহ জঙ্গিদের বিরুদ্ধে নানা কৌশল গ্রহণ করি। হলি আর্টিজানের ঘটনার পরপরই শোলাকিয়াতে একটি হামলা হয়। এরপর থেকে জঙ্গিরা ছোট কিংবা বড় কোনো হামলা করতে পারেনি। জঙ্গিরা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করলে আমরা গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে তাদের বিরুদ্ধে আগেই অভিযান পরিচালনা করি। ফলে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে, যা এখনো আছে।

তিনি বলেন, জঙ্গিরা একটি ভুল মতাদর্শ নিয়ে কাজ করে। ফলে এটি দমন করা অনেক লম্বা সময় প্রয়োজন ও জটিল প্রসেস। এই মতাদর্শ এখনো রয়েছে। তাই তারা অনলাইন ও বিচ্ছিন্নভাবে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গোয়েন্দা তথ্য, গবেষণা ও ক্ষেত্র বিশেষে অভিযান পরিচালনা করছে।

সা/ই

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত