হজযাত্রীদের হয়রানি কমাতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার : প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশ: ৩ জুন ২০২২, ২০:২৭ | আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯:৩৫
সরকার হজযাত্রীদের হয়রানি কমাতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, হজ ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর করে এর প্রভূত উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার হজ কার্যক্রম-২০২২-এর উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি হজযাত্রীদের কাছে দেশের সার্বিক মঙ্গল কামনায় দোয়া চেয়েছেন। কারণ, অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথের যে অগ্রযাত্রা তা যেন অব্যাহত থাকতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা হজ পালন করতে যাচ্ছেন তারা যেন সুষ্ঠুভাবে হজ পালন ও ইবাদত-বন্দেগি করতে পারেন তা নিশ্চিত করা আমাদের কর্তব্য।’
ইসলামকে ‘শান্তির ধর্ম’ এবং ‘সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম ’আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী এর সম্মান রক্ষা এবং হজ পালনকালে সৌদি আইন মেনে চলার মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি বজায় রাখতে সচেষ্ট থাকার জন্যও সম্মানিত হজযাত্রীদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে রাজধানীর আশকোনা হজক্যাম্পের সাথে ধর্ম মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
তিনি বলেন, ‘রোড টু মক্কা ইনিশিয়েটিভ’-এর মাধ্যমে আমরা আমাদের হজ ব্যবস্থাপনাকে আরো প্রযুক্তিনির্ভর করতে সক্ষম হয়েছি। ইমিগ্রেশন ঢাকাতেই হয়ে যায়, সেখানে কোনো হয়রানি হয় না। মালপত্রও যাতে যথাযথ স্থানে পৌঁছে যায়, সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে সে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ডেডিকেটেড বিমান সার্ভিস দেয়া হচ্ছে।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো: ফরিদুল হক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো: মাহবুব আলী এবং ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসান এবং হজ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সভাপতি মো: শাহাদত হোসেন তসলিমও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরার পাশাপাশি ইসলামের মূলমন্ত্র যে ‘শান্তি ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা’, সে সম্পর্কে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে তার দেয়া ঐতিহাসিক বেতার ভাষণের কিঞ্চিত অংশ উদ্ধৃত করেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমরা ইনসাফের ইসলামে বিশ্বাসী। আমাদের ইসলাম হযরত নবী করীম (সা:)-এর ইসলাম। যে ইসলাম জগতবাসীকে শিক্ষা দিয়েছে ন্যায় ও সুবিচারের অমোঘ মন্ত্র।’
সরকার প্রধান বলেন, তার সরকার সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় ‘হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন-২০২১’ প্রণয়ন করেছে। যাতে করে হজযাত্রীরা কোনো রকম হয়রানি ছাড়া হজে গিয়ে হজ পালন করতে পারেন।
তিনি বলেন, আজকের উন্নত হজ ব্যবস্থাপনার অনেক কিছু তার নিজস্ব চিন্তা-চেতনার ফসল। অতীতে বিভিন্ন সময় ওমরাহ এবং হজ পালন করতে গিয়ে তিনি মিনা’তে হাজীদের সাথে কথা বলেন এবং নিজ চোখে হাজীদের যেসব সমস্যা দেখেছেন সেগুলো পরে সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৯৬ সালে সরকারে আসার পর থেকেই আমাদের প্রচেষ্টা ছিল হজ ব্যবস্থাপনাকে উন্নত করা যা ধাপে ধাপে আমরা করতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি এজন্য সৌদি বাদশাহ এবং ‘দুটি বড় মসজিদের খাদেম’ যখনই যিনি ছিলেন এবং যুবরাজদের আমাদের হজ ব্যবস্থাপনাকে উন্নত করায় ধন্যবাদ ও কতৃজ্ঞতা জানান।
অতীতের চেয়ে বর্তমানের হজ ব্যবস্থাপনা আমূল পরিবর্তিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই পরিবর্তন আমার নিজের দেখা এবং সেজন্য আমি সত্যিই খুব আনন্দিত।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশে আজকে ‘ই-হজ ব্যবস্থা’ প্রবর্তন করেছে, যার ফলে অতীতের মত আর হাজীদের কষ্ট হয় না। সেই কষ্ট আমরা দূর করতে পেরেছি। এ জন্য তিনি ধর্ম মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, হাব, বাংলাদেশে সৌদি রাষ্ট্রদূত ও সৌদি আরবে বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূতসহ সংশ্লিষ্ট সকলে আন্তরিকতার সাথে কাজ করায় ধন্যবাদ জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ যেন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগ পেতে পারে এবং উন্নত সুন্দর জীবন পেতে পারে।
সকল হজযাত্রীর আকাঙ্ক্ষা যেন আল্লাহ তা’য়ালা পূরণ করেন, তাদের জন্য হজ যেন সহজ হয় এবং আল্লাহর দরবারে যাতে কবুল হয় সে দোয়াও করেন তিনি।
তিনি বলেন, যারা হজে যাবেন তারা সৌদি আরবের সমস্ত নিয়ম-কানুন এবং আইন মেনে চলবেন। কারণ, ইবাদত বন্দেগি করার পাশাপাশি দেশের মান-সম্মান রক্ষা করাও সকলের কর্তব্য। পাশাপাশি নিজেরা নিজেদের সুস্থ রাখার চেষ্টা করবেন যাতে সুস্থ থেকে মহান আল্লাহ তা’য়ালার দরবারে দোয়া করতে পারেন।
পরে তিনি হজ যাত্রীদের সাথে মত বিনিময়ও করেন।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৮ জুলাই ২০২২, ৯ জিলহজ ১৪৪৩ হিজরি তারিখে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। বৈশ্বিক করোনা মহামারী পরিস্থিতির কারণে ২০২০ ও ২০২১ এ দুই বছর বর্হিবিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশ থেকে কেউ হজে যেতে পারেননি। করোনা পরিস্থিতি একটু ভালো হওয়ায় এ বছর সারা বিশ্বের ১০ লাখ হাজী নিয়ে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে এ বছর ৫৭ হাজার ৫৮৫ জন হজযাত্রী হজ করার সুযোগ পাচ্ছেন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত