স্বাধীনতা কাপ ফাইনালে মোহামেডানকে হারিয়ে শিরোপা বসুন্ধরা কিংসের

  গোপালগঞ্জ  প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮:২৫ |  আপডেট  : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:৪৯

বাংলাদেশের ফুটবল আজ দেখল নতুন এক ফাইনাল, নতুন এক দ্বৈরথ। বসুন্ধরা কিংস আর মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ঘরোয়া ফুটবলে প্রথমবারের মতো শিরোপার লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়েই উপহার দিল টান টান উত্তেজনা আর রোমাঞ্চ। কী ছিল না এই ম্যাচে! দুই দলের খেলোয়াড়দের চোখে চোখ রেখে লড়াই, কখনো কখনো মৃদু হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়া; গোল, পাল্টা গোল, এমনকি লাল কার্ডও। গোপালগঞ্জের শেখ ফজলুল হক মনি স্টেডিয়ামের আঙিনা যেন আজ প্রাণভরে উপভোগ করল ফুটবলের আনন্দ। সেই রোমাঞ্চের ম্যাচে ৮৫ মিনিটে দরিয়েলতন গোমেজের গোলই ঠিক করে দিয়েছে স্বাধীনতা কাপ ফুটবলের নতুন চ্যাম্পিয়ন। ১ গোলে পিছিয়ে পড়ে ১০ জনের দল নিয়েও কিংস শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা জিতেছে ২-১ গোলে।

শক্তি-সামর্থ্যে কিংস মোহামেডানের চেয়ে এগিয়ে ছিল। কিন্তু ছেড়ে কথা বলেনি মোহামেডানও। বুটে বুট ঠেকিয়েই লড়েছে তারা। মাঝমাঠে মোজাফফরভের নেতৃত্বে সাদা–কালো শিবিরের ওমর ফারুক বাবু, আরিফ হোসেনরা বারবার বল জোগান দিয়ে গেছেন সামনে থাকা সোলেমান দিয়াবাতে, ইমানুয়েল সানডেদের। কিংসের তিন তারকা ব্রাজিলিয়ান রবসন দা সিলভা, দরিয়েলতন গোমেজ আর মিগুয়েল ফেরেইরা মোহামেডানের রক্ষণে হানা দিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু ইমানুয়েল টনি, কামরুল ইসলাম, সজল ইসলাম, জাহিদ হোসেন শান্তরা তাঁদেরকে জায়গা দেননি কোনোভাবেই। মোহামেডানকে হারাতে নিজেদের সর্বোচ্চটা উজাড় করেই দিতে হয়েছে তারকাসমৃদ্ধ কিংসকে।

খেলার শুরু থেকেই আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণ। শক্তিতে এগিয়ে থাকা কিংসকে ছেড়ে কথা বলেনি মোহামেডান। যদিও ম্যাচে বেশি সুযোগ তৈরি করেছে কিংসই। প্রথমটা ১৪ মিনিটে। রবসনের বাঁক খাওয়া শটটি প্রায় গোলেই ঢুকে যাচ্ছিল। কিন্তু মোহামেডানের গোলকিপার সুজন হোসেন দারুণ দক্ষতায় তা ঠেকিয়ে দেন। এরপর ১৬ মিনিটে রফিকুল ইসলামের শট মোহামেডানের পোস্টের ওপর দিয়ে চলে যায়। এর ঠিক ৪ মিনিট পর মোহামেডানের রক্ষণকে প্রায় বোকা বানিয়ে দরিয়েলতন গোমেজ রাকিবকে দারুণ একটা বল দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি পারেননি।

২১ মিনিটে মোজাফফরভের একটা প্রচেষ্টা ছিল, কিন্তু সেটিকে ঠিক সুযোগ বলা চলে না। এরপর আবারও দুটি সুযোগ মেলে বসুন্ধরা কিংসের। ওমর ফারুক বাবুর ভুলের সুযোগ নিয়ে দরিয়েলতন বক্সের মধ্যে বল ঠেলেছিলেন রাকিবকে। কিন্তু তিনি বাইরে মারেন।

৩১ মিনিটে মাঠে প্রথম উত্তেজনাটা দেখা দিয়েছিল একটি পেনাল্টির আবেদনকে কেন্দ্র করে। সোলেমান দিয়াবাতেকে বক্সের মধ্যে বাধা দিয়েছিলেন বিশ্বনাথ ঘোষ। কিন্তু তাতে শরীরের ভারসাম্য রাখতে না পেরে পড়ে যান মোহামেডানের মালিয়ান স্ট্রাইকার। পেনাল্টির আবেদন হয়েছিল জোরালোভাবেই। কিন্তু রেফারি জালাল আহমেদ তাতে সাড়া দেননি। ৩৮ মিনিটে সোহেল রানা জুনিয়রের ক্রস থেকে দরিয়েলতনের হেড মোহামেডানের পোস্টের ওপর দিয়ে চলে যায়।

রেকর্ড ছোঁয়া তৃতীয়বার স্বাধীনতা কাপে চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস। মোহামেডানও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তিনবার।দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ছিল উত্তেজনা। মোহামেডানের ওমর ফারুক বাবুকে বুক বরাবর লাথি মেরে লাল কার্ড দেখেন রফিকুল ইসলাম। অপ্রয়োজনীয় এক ফাউল। রফিক এমন এক জায়গায় ওমর ফারুককে লাথি মারেন, যেখানে অমন কিছুর কোনো প্রয়োজনই ছিল না। রেফারির কাছে লাল কার্ডের কোনো বিকল্পই ছিল না।

১০ জনের কিংসের বিপক্ষে ৫০ মিনিটে গোল পেয়ে যায় মোহামেডান। মাঠের ডান প্রান্ত থেকে কর্নার নিয়েছিলেন মোজাফফরভ। তাতেই মাথা ছুঁইয়ে গোল করেন ইমানুয়েল সানডে। কিন্তু ম্যাচে ফিরতে কিংস সময়ই নেয়নি। পরের মিনিটেই সমতা ফিরিয়েছে তারা। বলতে গেলে পাল্টা আক্রমণ থেকেই রাকিব গোল করে সমতা ফেরান। আক্রমণটা আসলে ছিল রবসনের। তিনি বিপজ্জনকভাবে বল নিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন মোহামেডানের রক্ষণে। তাঁর শট ফেরালেও ফিরতি বলটা পেয়েই গোল করেন রাকিব।

কিংস সমতা ফেরানোর পর মোহামেডান সেভাবে সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। প্রতিপক্ষের ১০ জন নিয়ে খেলার সুবিধাটাও নিতে পারেননি মোহামেডানের খেলোয়াড়েরা। যদিও রক্ষণের কাজটা ঠিকঠাকই করছিলেন সাদা–কালোদের রক্ষণসেনারা। কিংস অবশ্য একের পর এক আক্রমণ চালিয়েছে। গোলের সুযোগও তৈরি করেছে। শেষ পর্যন্ত কোচ অস্কার ব্রুজোনের মনে স্বস্তি ফেরান দরিয়েলতন গোমেজ। ৮৬ মিনিটে মিগুয়েল ফেরেইরার পাস থেকে ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার গোল করেন দারুণ এক শটে।

ম্যাচের বাকি সময়টা ছিল পাল্টাপাল্টি ফাউল আর হাতাহাতির। বারবার হাতাহাতিতে জড়াচ্ছিলেন কিংস ও মোহামেডানের খেলোয়াড়েরা। রেফারি জালাল আহমেদকে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে এই সময়টায়। দুই দলের ডাগআউটেও উত্তেজনা ছড়িয়েছে। খেলোয়াড়দের সঙ্গে কোচ, কর্মকর্তারাও বিবাদে জড়িয়েছেন। গোপালগঞ্জের মাঠে স্বাধীনতা কাপের ফাইনালটা ছিল বারুদে ঠাসাই।

 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত