সেন্সর বোর্ডে সিনেমাবোদ্ধাদের চেয়ে আমলাদের আধিপত্য বেশি: ফারুকী
প্রকাশ: ৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:৩৯ | আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৯
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। বিশেষ করে নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর নতুন সিনেমা ‘শনিবার বিকেল’ সাড়ে তিন বছর ধরে সেন্সরে আটকে থাকায় ক্ষুব্ধ সিনে অঙ্গনের মানুষেরা। এর সঙ্গে যুক্ত হয় বহুল আলোচিত সিনেমা ‘হাওয়া’র নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমনের বিরুদ্ধে মামলা।
এরমধ্যে ‘হাওয়া’ সংক্রান্ত আইনি জটিলতার ইতি ঘটলেও ‘শনিবার বিকেল’ নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্তের খবর পাওয়া যায়নি।
সেই রেশ ধরে সেন্সরশিপ ইস্যুতে বৃহস্পতিবার [১ সেপ্টেম্বর] একটি অনলাইন আলোচনার (ওয়েবিনার) আয়োজন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ। ‘চলচ্চিত্রশিল্পে রাষ্ট্রীয় সেন্সরশিপ: প্রয়োজনীয়তা ও পর্যালোচনা’ শীর্ষক আলোচনাটি সঞ্চালনা করেন চলচ্চিত্র সমালোচক ও গবেষক মাহমুদুল হোসেন। এতে অংশ নিয়ে নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী মন্তব্য করেন, ‘সেন্সর বোর্ডে সিনেমাবোদ্ধাদের চেয়ে আমলাদের আধিপত্য বেশি।’
এই ওয়েবিনারে আরও বক্তব্য রাখেন নির্মাতা নাসির উদ্দীন ইউসুফ, অমিতাভ রেজা চৌধুরী, মেজবাউর রহমান সুমন প্রমুখ।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, “সেন্সর বোর্ডের সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে সরকারের আধুনিক হওয়ার সময় এসেছে। একটা বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি; এখনকার সিনেমার যে চেহারা, সেটা বাংলাদেশের হোক বা পৃথিবীর অন্য কোনও দেশের, বোর্ডে যাদের বসানো হচ্ছে, তারা সেই চেহারাটা বোঝেন কিনা। আমি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানি, তারা অনেকেই এই চেহারা বোঝেন না। তাই এটা পরিবর্তনের সময় এসেছে।”
আলোচনায় মেজবাউর রহমান সুমন কিছুটা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “আমরা নিজেরাই এখন বিশ্বাস করে বসে আছি যে ‘সিনেমায় হয়তো এই কথাটা বলতে পারবো না।’ কিন্তু আমরা কবিতায় বলতে পারছি, গানে বলতে পারছি, সাহিত্যে বলতে পারছি। তখন তো আর সেন্সর থাকছে না। আমি নিজে যে দর্শনে বিশ্বাস করি, সেটা কেন আমার সিনেমায় বলতে পারব না?”
নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী মনে করেন, সেন্সর বোর্ডের ভূমিকা দ্বিমুখী। তিনি বলেন, ‘এখন আমরা একটা হিপোক্রিটিক সিচুয়েশনে আছি। আমরা দুনিয়ার সমস্ত ছবি দেখি, সমস্ত মোশন পিকচার দেখি বিভিন্নভাবে। কিন্তু বাংলা ভাষার ঘটনা দেখানোর ক্ষেত্রে আমাদের অদ্ভুত সংকীর্ণতা কাজ করে। এই রুচি বা আচরণ আমরা কীভাবে পরিবর্তন করবো, সেজন্য রাষ্ট্র এবং সেন্সর সার্টিফিকেশন কমিটির সঙ্গে আমাদের সিরিয়াস আলোচনা করতে হবে।’
নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘যে কোনও সেন্সর, বিধি-নিষেধ সৃষ্টিশীলতার অন্তরায়। আমি বারবার বলছি, অনুপ্রেরণা দেয়ার জন্য একটি নীতিমালা হতে পারে; নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোনও নীতিমালা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।’
চলচ্চিত্র মুক্তিতে সেন্সর বোর্ডের হস্তক্ষেপের ঘটনা এই প্রথম নয়। বারবার চলচ্চিত্র নির্মাণে রাষ্ট্র বা অন্য যে কোনও পক্ষের অনাধিকার চর্চা নির্মাতার সৃষ্টিশীলতাকে বাধাগ্রস্থ করে বলে মনে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত