সুরের মূর্ছনায় বঙ্গবন্ধুকে এ আর রহমানের শ্রদ্ধা
প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২২, ১০:৪০ | আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯:৪৯
যাদুকরি সুরে ঢাকাসহ পুরো দেশ মাতালেন উপমহাদেশের জনপ্রিয় সুরকার, সংগীত পরিচালক ও কণ্ঠশিল্পী এ আর রহমান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ‘ক্রিকেট সেলিব্রেটস মুজিব ১০০’ অনুষ্ঠানে গান গেয়ে মুগ্ধ করেছেন অস্কারজয়ী এই সংগীতপরিচালক।
মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত টেলিভিশনের কল্যাণে অস্কারজয়ী এই শিল্পীর সুর ছুঁয়ে গেছে অসংখ্য দর্শক-শ্রোতার হৃদয়। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) আয়োজিত ও দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ বসুন্ধরার পৃষ্ঠপোষকতায় এই মেগাকনসার্টের দ্বিতীয় পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সংগীত উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিসিবি আয়োজিত ‘ক্রিকেট সেলিব্রেটস মুজিব ১০০’ কনসার্টে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। বিশ্ব সংগীতাঙ্গনে উপমহাদেশের মুখ এ আর রহমান গতকাল গানে গানে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বিসিবির অনুরোধে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তার নিজের তৈরি করা দুটি গান গেয়েছেন তিনি।যার মধ্যে একটি ছিল বাংলায়, আরেকটি হিন্দিতে। গতকাল এ আর রহমান বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আমি গান দুটি বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করলাম।আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি এ আয়োজনের জন্য।’
মিরপুরের শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে কনসার্টে এ সময় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি ও সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান, বিসিবি কর্মকর্তা ইসমাইল হায়দার মল্লিক, শেখ সোহেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান উপভোগ করেছেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও তাঁর স্ত্রী আফরোজা বেগম এবং বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর ও তাঁর স্ত্রী সাবরিনা সোবহান।
বিকেলে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব শুরু হয়। এরপর মঞ্চে আসে জনপ্রিয় ব্যান্ডদল মাইলস। ‘চাঁদ তারা সূর্য নও তুমি/নও পাহাড়ি ঝরনা/যদি বলি ফুল তবুও হবে ভুল/তোমার তুলনা হয় না’—নব্বই দশকের সুপারহিট এই গান দিয়ে শুরু করে মাইলস। অন্যতম দেশসেরা এই ব্যান্ডদল তাদের বিখ্যাত আরো কয়েকটি গান পরিবেশন করে মাতিয়ে তোলে দর্শকদের।
উপস্থাপক রুমানা মালিক মুনমুন মাইলসের পরিবেশনার পরই সংসদ সদস্য ও জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী মমতাজ বেগমকে মঞ্চে আমন্ত্রণ করেন। মমতাজ শুরু করেন তাঁর নতুন গান ‘জয় মুজিবুর, জয় স্বাধীনতা, বাংলাদেশের জয়’ গানটি দিয়ে। এরপর একে একে গেয়ে শোনান ‘না জানি কোন অপরাধে দিলা এমন জীবন’, ‘আমার ঘুম ভাঙাইয়া গেলো গো মরার কোকিলে’, ‘নান্টু ঘটকের কথা শুইনা’ ও ‘বন্ধু তুই লোকাল বাস’-এর মতো মঞ্চ মাতানো গানগুলো। বহু দর্শক বিপুল উত্সাহে গলা মেলাচ্ছিল তাঁর সঙ্গে।
দর্শক প্রবল আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিল অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে আয়োজনের মধ্যমণি এ আর রহমান ও তাঁর দলের জন্য। তবে বেরসিক বৃষ্টি বাগড়া দিয়ে তাদের ধৈর্যের ভালোই পরীক্ষা নিয়েছে। বৃষ্টিজনিত বিরতি শেষে এ আর রহমান সদলে আলো ঝলমলে মঞ্চে এলে বাঁধভাঙা আনন্দে মাতে দর্শক। একের পর এক মনঃপ্রাণ ভরানো গানে এই জীবন্ত কিংবদন্তিও যেন তাদের ভালোবাসা আর মুগ্ধতার প্রতিদান দেন।
এ আর রহমান এবার দ্বিতীয়বারের মতো এসেছেন বাংলাদেশে। এর আগেও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের আমন্ত্রণে তিনি এসেছিলেন। বিসিবির উদ্যোগে ‘ক্রিকেট সেলিব্রেটস মুজিব ১০০’ শীর্ষক এ আয়োজন ২০২০ সালেই হওয়ার কথা ছিল। তবে করোনা মহামারির কারণে তখন আসতে পারেননি। দুই বছর পর এলেন এবং জয় করলেন বরাবরের মতোই।
গভীর রাত পর্যন্ত এ আর রহমান ও তাঁর সহশিল্পীরা গান গেয়ে শোনান। প্রধানমন্ত্রীসহ বিশিষ্ট অতিথি ও দর্শক-শ্রোতাদের চমৎকৃত করে গেয়ে ওঠেন ‘জয় জয় জয় বাংলাদেশ’। তাঁর আরেকটি গানে ছিল ‘সোনার বাংলা’ কথাটিও। একসময় মঞ্চে আসেন আরেক বিশিষ্ট নাম হরিহরণ। প্রায় মধ্যরাতে আরেক চমক। ডিজিটাল প্রযুক্তির কল্যাণে মঞ্চের পর্দায় ‘আবির্ভূত হন’ সম্প্রতি প্রয়াত সংগীত কিংবদন্তি লতা মঙ্গেশকর। তাঁর রেকর্ড করা কণ্ঠের সঙ্গে গলা মেলান এ আর রহমান। সৃষ্টি হয় সুরের ঐন্দ্রজালিক আবহ। গিটার বাজিয়ে গান করেন শিল্পী রশিদ আলী। ছিল যন্ত্রসংগীতের পরিবেশনাও।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত