সুন্দর আর স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল পেতে করনীয়

  স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১৩:১৪ |  আপডেট  : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:৩৯

সুন্দর আর স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল আমরা প্রত্যেকেই চাই। চুলের পরিচর্যা কিভাবে করতে হবে সে বিষয়ে আমাদের সবারই ভীষণ আগ্রহ। কিন্তু দূষণ কিংবা আর্দ্রতা, বিভিন্ন কারণ আমাদের চুল ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং চুলের বৃদ্ধিকে ধীর করে দেয়।

আবার নানা কারণে মেয়েদের মাথার চুল পড়ে। তার মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হলো হরমোনজনিত সমস্যা। এ ছাড়া শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাব, রক্তশূন্যতা, মাথায় খুশকিজনিত অসুখ, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, রাতে পর্যাপ্ত না ঘুমানো এবং পারলারে গিয়ে মাথায় বা চুলে বিভিন্ন ধরনের সেবা গ্রহণ করার কারণেও অনেক সময় এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে।

চুল পড়া খুবই সাধারণ একটি ঘটনা। তবে এই চুল পড়া যখন মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায়, তখন এর চেয়ে বড় যন্ত্রণা যেন আর নেই। তাই প্রয়োজন নিয়মিত স্বাস্থ্যকর উপায়ে চুলের যত্ন নেয়া। চলুন জেনে নেই চুলের যত্নের কিছু টিপস -

তেল

আগেকার দিনে আমাদের মা-খালারা প্রতিদিন নিয়ম করে চুলে তেল দিতেন। তাদের ধারণাই ছিলো, রোজ তেল ব্যবহার করলেই চুল থাকবে ঘন, কালো ও লম্বা! তবে হেয়ার এক্সপার্টদের মতে, রোজ রোজ চুলে তেল লাগানোর প্রয়োজন নেই। কারণ প্রতিদিন চুলে তেল ব্যবহার করলে মাথার ত্বক অতিরিক্ত অয়েলি হয়ে যায়। যা আমাদের চুলের জন্য মোটেই ভালো না।

চুলের ধরন বুঝে হেয়ার অয়েল ব্যবহার করলে তা চুলের ড্যামেজ কমিয়ে আনতে সাহায্য করে ৷ শ্যাম্পুর পূর্বে চুলে অল্প পরিমাণে অয়েল লাগিয়ে নিলে তা চুলের চারপাশে একটি প্রোটেকটিভ লেয়ার তৈরি করে, যার কারণে হেয়ার লেন্থ শ্যাম্পু করার সময় ফিজিক্যাল ড্যামেজ থেকে রক্ষা পায়। 

বাজারে বিভিন্ন ধরনের তেল পাওয়া যায়। সেগুলোর রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন উপকারিতা।

জোজোবা অয়েল
এটি বেশ ময়েশ্চারাইজিং ইফেক্ট দেয় এবং বেশ লাইট ওয়েট। এই তেল বিভিন্ন ধরনের নিউট্রিয়েন্টস যেমন ভিটামিন ই, বি, সি ও জিংক এ ভরপুর। হেয়ার স্ট্র‍্যান্ডে এই তেল ব্যবহার করলে তা চুলের আগা ফাটা প্রতিরোধ করে

টি ট্রি অয়েল
এটি এক ধরনের অ্যাসেনশিয়াল অয়েল যা টি ট্রি প্ল্যান্ট থেকে এক্সট্র্যাক্ট করা হয়। এতে আছে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টি ফাঙ্গাল ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রোপারটিজ, যা স্ক্যাল্পকে মাইক্রোবিয়াল ইনফেকশন আর ইচিনেস থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে।

ক্যাস্টর অয়েল
এতে আছে ফ্যাটি অ্যাসিড ও প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্টস, যা চুলে শাইনি ইফেক্ট দিতে সাহায্য করে এবং চুলের ড্যামেজ রিপেয়ার করতেও কার্যকরী ভূমিকা রাখে। ক্যাস্টর অয়েল তুলনামূলক ভারি। স্ক্যাল্পের জন্য ক্যাস্টর অয়েল খুবই উপকারী, কারণ এটি অ্যান্টি- ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ট্রিটমেন্ট হিসেবে কাজ করে থাকে।

অনিয়ন অয়েল

অনিয়ন অয়েল চুলের জন্য উপকারী। এটি চুল পাতলা হওয়া ও পড়া রোধ করে। পেঁয়াজ খনিজ উপাদানে ভরা, তাই এই তেল চুল শেকড়ের চেয়ে মজবুত করে এবং চুল পড়া বন্ধ করে। আপনি যদি লম্বা চুল চান তাহলে সপ্তাহে দুইবার তেল লাগাতে ভুলবেন না।

শ্যাম্পু

চুলের জন্য সঠিক শ্যাম্পু বাছাইয়ের পাশাপাশি সেটার সঠিক ব্যবহারের দিকেও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। চেষ্টা করুন সরাসরি শ্যাম্পু ব্যবহার না করে পানির সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করতে। শ্যাম্পু নিয়ে আলতোভাবে মাথার তালুতে ম্যাসাজ করুন। ভেজা অবস্থায় চুলের গোড়া নরম থাকে বলে শ্যাম্পু ব্যবহারের সময় বেশি জোরে ম্যাসাজ করলে চুল পড়ে যেতে পারে। 

প্রথমেই চুলের ধরন বুঝে শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার বাছাই করতে হবে। আপনার চুল শুষ্ক, তেলতেলে কিংবা মিশ্র ধরনের কী না তা বুঝে নিয়ে শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার বাছাই করুন।

স্ক্যাল্পের ধরন অনুযায়ী শ্যাম্পু
স্ক্যাল্পের ধরন মেইনলি ৩ প্রকার; অয়েলি, ড্রাই এবং নরমাল। তাই অনুযায়ী প্রয়োজন হয় ভিন্ন ভিন্ন যত্নের। যেমন -

ড্রাই হেয়ারের স্ক্যাল্প অধিকাংশ ক্ষেত্রে ড্রাই হয়। প্রোপারলি সিবাম প্রোডাকশন না হলে চুলে রাফনেস চলে আসে, চুল ময়েশ্চারাইজড হয় না। চুল পাটের আঁশের মত হয়ে যায় । এ ধরনের চুলের জন্য ময়েশ্চার প্রোভাইডিং শ্যাম্পু প্রয়োজন। এ ধরনের চুলের জন্য ময়েশ্চার প্রোভাইডিং শ্যাম্পু প্রয়োজন। যেমন-  হাইড্রেশন শ্যাম্পু , জেল ড্রাই স্ক্যাল্প শ্যাম্পু, স্যালিসাইলিক এসিড ও পাইরোকটোন অলিমাইন উপাদান সমৃদ্ধ শ্যাম্পু ।

অয়েলি স্ক্যাল্পে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত সিবাম প্রোডাকশন হয় । ফলে চুল পড়ার হার বাড়ে। চুল আঠালো ও তেলতেলে হয়ে যায়। এছাড়াও খুশকি সমস্যা দেখা দেয়। এধরনের চুলের জন্য অ্যালোভেরা এবং হারবাল নির্যাস দিয়ে তৈরি শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। 

নরমাল স্ক্যাল্প হেয়ারে প্রয়োজন কোনো সমস্যা থাকে না, সিবাম প্রোডাকশনও ব্যালেন্সড কিনা তা খেয়াল রাখা । খুশকি, ফ্রিজিনেস কিংবা তেল চিটচিটে ভাব না থাকলেও এসকল সমস্যা যাতে না দেখা দেয় সেজন্য চুলের ধরন অনুযায়ী অবশ্যই সঠিক শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে।

কার্ল প্যাটার্ন অনুযায়ী
কার্ল প্যাটার্ন অনুযায়ী আমাদের চুল প্রধানত ২ ধরনের - স্ট্রেইট হেয়ার বা সোজা চুল এবং কার্লি হেয়ার বা কোঁকড়ানো চুল। 

স্ট্রেইট হেয়ার বা সোজা চুলের জন্য এমন ধরনের ইনগ্রেডিয়েন্টযুক্ত শ্যাম্পু লাগবে যা আপনার চুলকে এক্সট্রা স্মুথিং ও ময়েশ্চারাইজিং ইফেক্ট দিবে। হেয়ার কিউটিকল সিল করে চুলের স্ট্রেইট ও স্মুথভাব সবসময় থাকে।

কার্লি হেয়ারে ফ্রিজিনেস অনেক বেশি দেখা যায়। তাই এধরনের চুলের জন্য এমন ধরনের ইনগ্রেডিয়েন্টযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন যাতে চুলের ফ্রিজিনেস কমে যায় এবং কার্লগুলোও সুন্দর থাকে। সিল্ক অ্যামিনো অ্যাসিড, লেসিথিন , ম্যাগনেসিয়াম সালফেট রয়েছে এমন শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে।

নিয়মিত চুলের যত্নের পাশাপাশি প্রয়োজন চুলকে হিট , রোদের অতিরিক্ত তাপ ও গরম পানি থেকে বাঁচানো; অতিরিক্ত ভেজা চুলে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার না করা; মোটা দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করা এবং রাতে  চুল বেঁধে ঘুমানো। সম্ভব হলে মাসে দুদিন হেয়ার প্যাক ব্যবহার করুন। 

 

সা/ই

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত