সিরাজদিখানে দুর্নীতির আখড়া উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তর
প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৪, ১৬:৩৮ | আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯:২৮
মুন্সীগঞ্জ সিরাজদিখানে প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। বুধবার উপজেলার মধ্যপাড়া ইউনিয়নের মালপদিয়া গ্রামে এক খামারীর ছাগল মারা গেলে এছাড়া আরোও ১৭-১৮ টি ছাগল অসুস্থ হলে ওই খামারীর বাড়িতে দাঁড়িয়ে তাদের বিরুদ্ধে সময়োপযোগী চিকিৎসাসেবা না দেওয়াসহ শত অভিযোগ করেন খামারিরা।
তারা জানান,বিনামুল্যের পশু চিকিৎসায় টাকা নেয়া, সরবারহ থাকার পরও কোম্পানির ঔষধ কিনতে বাধ্য করা, মাঠ পর্যায়ে প্রজনন কর্মী ও ভিএফএ (ভেটেরিনারি ফিল্ড এসিষ্ট্যান্ট) দের চাঁদাবাজি, সরকারি ঔষধে ঝুকিপুর্ণ নিরাপত্তা স্টিকারসহ দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে মুন্সীগঞ্জ সিরাজদিখান উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল।
এর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটিতে জনবল সংকটও রয়েছে। এব্যাপারে সিরাজদিখান উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. শবনম সুলতানা বলেন, আমাদের লোকবল কম রয়েছে যেকারনে কাংখিত সেবা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পরে। তবে খামারিরা ফোন করলে মাঠ পর্যায়ে তারা চলে যায়। আবার যে পশুটি হাসপাতালে আনা সম্ভব হয়না সেখানেও তারা চলে যায়। কিন্তু হাসপাতালে পশু চিকিৎসা নিতে এসে পশু মালিকদেরকে ৩/৫শ টাকা দিতে হয়। আর সরকারি ৫০ টাকার ভ্যাকসিন ২/৩শ টাকায়ও বিক্রি করা হয় মাঠ পর্যায়ে। এনিয়ে মধ্যপাড়া ইউনিয়নের করারবাগ গ্রামের বাসিন্দা ভুক্তভোগী আরিফুল ইসলাম বলেন, ভিএফএ যারা আছে তাদের ফোন অনেক সময় ধরেনা। আমরা ৩/৪ বার অনুরোধ করার পর তারা আসলে তাদেরকে ৫ শ থেকে ১ হাজার টাকার নিচে দিলে রাগ হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে আর আসেনা। শুধু তাই নয় সরকারি বিড়ালের র্যাবিস ভ্যাকসিনও হাসপাতালেই বিক্রি করে ৩ শ ২০ টাকায়। যদি বাড়তি টাকা দেই তাহলে বের করে দেয়। আর নাদিলে বলে সাপ্লাই নাই। সরকার না দিলে আমরা পামু কই। এসময় ভুক্তভোগীসুত্র আরো জানায়, আমার প্রতিবেশীর জন্য ছাগলের পিপিআর ভ্যাকসিন ও হাসের ডাকপ্লেগ ভ্যাকসিন আনতে গিয়ে বেশি টাকা দিতে বাধ্য হয়েছি। এদের লজ্বা-ভয় কোনটিই নেই।
খামারিরা জানায়, প্রতিটি খামার করতে তাদের ঘাম ঝরানো পরিশ্রম ও প্রচুর অর্থ খরচ করতে হয়। খামারে কোনো রোগের উপদ্রব হলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে টিকা ছাড়া আর কোনো ওষুধ কিংবা চিকিৎসাসেবা সময়মতো পান না তারা। স্বেচ্ছায় কোনো কর্মকর্তা খামার পরিদর্শন করেন না। প্রয়োজনে একাধিকবার ফোন করলেও একবার আসেন। সেক্ষেত্রে প্রতিবার ভিজিট দিতে হয় ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।
মধ্যাপাড়া ইউনিয়নের উন্নত প্রজাতির ছাগল পালনকারী মোঃ জহির নামের এক খামারি অভিযোগ করে বলেন, ইতোমধ্যে আমার খামারের বেশ কয়েকটি ছাগল মারা গেছে। কিছুদিন আগে আমার একটি উন্নত জাতের ছাগল অসুস্থ হয়। বিকাল ৫টার দিকে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাও এ আই টি মোঃ আল রাফির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে পিপিআই ভ্যাকসিন ৪/৫দিন পরে আসবে আর তিনি পরের দিন সকালে আসবেন বলে আশ্বস্থ করেন। কিন্তু রাতে ছাগলটি মারা যায়। যার বাজারমূল্য ছিল ৩০ হাজার টাকা।
মালপদিয়া গ্রামের হাবিব বলেন,উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে মৌখিকভাবে একাধিকবার জানালেও কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী এখন পর্যন্ত খামারটি পরিদর্শন করেননি। বিভিন্ন সময় সমস্যার কথা তাদের বললে মৌখিকভাবে সমাধান দিয়েছেন। কিন্তু ঘটনাস্থলে গিয়ে পশু মৃত্যুর কারণ উদঘাটন করেন না তারা। এছাড়া গৃহপালিত বা খামারের গাভি অসুস্থ হলে নির্ধারিত অংকের ভিজিট দিয়ে বাড়ি নিতে হয় উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের। সরকারি বরাদ্দকৃত ওষুধ প্রয়োগ করেও তারা টাকা আদায় করেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ শবনম সুলতানা বলেন, প্রাণিসম্পদের ক্ষেত্রে এই উপজেলায় ভিএস বা জরুরি সেবা না থাকায় এবং জনবল সংকটের কারণে আমরা খামারিদের আশানুরূপ সেবা দিতে পারছি না। তারপরও এখন থেকে খামারিদের সার্বিক সহযোগিতা দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত